Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

সকালে ৯ লাখ টাকা নেন, রাতে ঘুমন্ত পার্টনারের বুকে ছুরি বসান

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:৪৬ PM
আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:৪৬ PM

bdmorning Image Preview


পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় হত্যাকাণ্ডের শিকার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আব্দুর রব (৪৮) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়েছে। মস্তকবিহীন আব্দুর রবের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন একই পরিবারের তিনজন।

তেঁতুলিয়ার তীরইহাট ইউনিয়নের যোগীগাছ গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে মো. মানিক (৪৮), তার স্ত্রী আফরোজা বেগম (৪৫) এবং ছেলে আমান (২১) এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকালে পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাঈমুল হাছান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুদর্শন কুমার রায় ও ডিবি পুলিশের ওসি রবিউল ইসলাম।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ৩৪ দিনের মধ্যে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বিশেষ তৎপরতায় মূল রহস্য উদঘাটনসহ জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ব্যবসায়ী আব্দুর রব হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বুধবার (২০ নভেম্বর) জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কামরুল হাসানের আদালতে ১৬৪ ধারায় ব্যবসায়ী মো. মানিক, তার স্ত্রী আফরোজা বেগম এবং ছেলে আমান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে মানিক জানান, ব্যবসায়িক লেনদেন এবং স্ত্রীর প্রতি কুদৃষ্টি দেয়ায় আব্দুর রবকে হত্যা করেন মানিক। এর আগে কুদৃষ্টি দেয়ায় আব্দুর রবকে বাড়িতে আনতে স্বামীকে নিষেধ করেন স্ত্রী আফরোজা। রবের সঙ্গে মানিকের আর্থিক লেনদেনও ছিল। তবে ব্যবসায়িক কারণে গত ১৭ অক্টোবর মানিকের ব্যাংক হিসাবে ৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা জমা দেন রব।

ওই দিন সকালে মানিক তার ছেলে আমানকে নিয়ে ইসলামী ব্যাংক পঞ্চগড় শাখা থেকে ওই টাকা উত্তোলন করে ন্যাশনাল ব্যাংকের হিসাব নম্বরে জমা দেন। রাতে পঞ্চগড় শহর থেকে রবকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরেন মানিক।

রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে একই বিছানায় শুয়ে পড়েন তারা। গভীর রাতে ঘুমন্ত রবের বুক ও পেটে প্রথমে ছুরি বসিয়ে দেন মানিক। একপর্যায়ে রবের গলা কেটে মাথা আলাদা করে স্ত্রী ও সন্তানকে ডেকে তোলেন তিনি। পরে মস্তকবিহীন মরদেহ এবং খণ্ডিত মাথা একটি ব্যাগে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাড়ি থেকে বের হন মানিক ও তার ছেলে আমান। প্রথমে ব্রহ্মতল গ্রামের ঝিকদহ সেতুর নিচে মস্তকবিহীন মরদেহ ফেলে দেন তারা। পরে সেখান থেকে খণ্ডিত মাথাটি নিয়ে আজিজনগর গ্রামের হাইওয়ের পাশে ফেলেন।

১৮ অক্টোবর সকালে তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের ব্রহ্মতল এলাকা থেকে মস্তকবিহীন মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের বিশেষ তৎপরতায় ওই দিন বিকেলেই মরদেহটি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার কাঁচামাল ব্যবসায়ী আব্দুর রবের বলে শনাক্ত করা হয়।

দীর্ঘদিন তেঁতুলিয়ায় থেকে মরিচসহ বিভিন্ন পণ্য কিনে এলাকায় বিক্রি করতেন রব। এরই মধ্যে তেঁতুলিয়ার স্থানীয় ব্যবসায়ী মানিকের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং আর্থিক লেনদেন শুরু হয় রবের।

এরই সূত্র ধরে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা করা হয়। মামলার পর ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তেঁতুলিয়ার বাসিন্দা মো. রুবেল (৩২) এবং আব্দুল বারেককে (৫০) আটক করে ডিবি পুলিশ। তদন্ত চলাকালীন মানিকসহ তার স্ত্রী এবং সন্তানকেও আটক করা হয়। এরপরই ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়।

সাংবাদিকরে প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, স্ত্রীর প্রতি কুনজর এবং আর্থিক লেনদেনের কারণেই রবকে হত্যা করেছেন মানিক ও তার স্ত্রী-সন্তান। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হবে।

Bootstrap Image Preview