Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আসমার লাশের মালিক আমি, ওসি দেওয়ার বিধান নেই: এসআই মনজুর

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০৭:২৬ PM
আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০৭:২৬ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে সদ্য প্রবাস ফেরত আসমা আক্তার (২২) নামে এক যুবতীর মরদেহ নিয়ে নিহতের পরিবার ও পুলিশের মধ্যে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়েছে। সরাইল থানার ওসি জানিয়েছেন, যেহেতু মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে, নিহতের বাবা ও মা লিখিত আবেদন করলে আমরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে দিব।

ওসির কথায় নিহতের পরিবার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আশ্বস্ত হন। তারা লাশ গ্রহণে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন। তবে আপত্তি তোলেন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনজুর আহমেদ। তিনি সেই কথা শুনতেই তড়িঘড়ি কাগজপত্র তৈরির পর নিহতের বড় বোনকে ডেকে পাঠিয়ে জানিয়ে দেন, ময়নাতদন্ত ছাড়া এই লাশ দেওয়া যাবে না।

পরে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য কথা বলতে গেলে এসআই মনজুর আহমেদ সংক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, এই লাশের মালিক আমি। আপনারা আমার সঙ্গে কথা বলবেন। আমি না দিলে ময়নাতদন্ত ছাড়া এ লাশ ওসি দেওয়ার কোন বিধান নেই।

জানা যায়, বুধবার (২০ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ থেকে পুলিশ আসমার লাশ উদ্ধার করে। সে উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের দেওয়ান আলীর মেয়ে। তারা দীর্ঘদিন যাবত সিলেটে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করে। সে প্রবাস থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরেছে।

সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, রাতে আসমাকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে বড় বোন আনোয়ারা বেগম। এসময় আনোয়ারা বেগম জানায়, আসমা কিছুদিন আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছে। দেশে ফেরার পর বোন আনোয়ারার শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে আসে আসমা। বুধবার সন্ধ্যার পর দুই বোন বের হয় এলাকার দোকানে যেতে। কিন্তু আসমা অর্ধেক পথ যাওয়ার পর বাসায় ফিরে আসেন। আনোয়ারা বাড়িতে ফিরে দেখেন আসমা ওড়না দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলছেন। পরে তাকে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এই খবর জেনে আসমার বোন আনোয়ারা ভয়ে হাসপাতালে লাশ রেখে পালিয়ে যায়। হাসপাতাল থেকে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

সরাইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নূরুল হক জানান, লাশ উদ্ধারের পর বাড়িতে গেলে নিহত আসমার বড় বোন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সে জানিয়েছে, ভয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে বাড়িতে চলে আসে।

পরিদর্শক নুরুল হক জানান, আমাদের ধারণা এটি আত্মহত্যার ঘটনা। একটি ওড়না উদ্ধার করা হয়েছে।

কালিকচ্ছ ইউপির সদস্য হুমায়ুন কবির সুমন, ধন মিয়া ও নিহতের বোন আনোয়ারা বেগম জানান, অনুমান একমাস আগে আসমা সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে। তাকে বিয়ে দিতে ঘটকের মাধ্যমে পাত্র খোঁজা হচ্ছিল। ‘বিদেশ ফেরা যুবতীকে কেউ বিয়ে করবে না। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন সবসময় অপবাদ দিবে’ এমন অবান্তর কথাবার্তা কে বা কারা বুঝানোর পর থেকে আসমা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। এ কারণেই সে আত্মহত্যা করেছে।

তারা আরও জানান, আসমার মৃত্যুর খবরে তার মা-বাবা সিলেট থেকে আসছেন। থানার ওসি'র কথামতো আমরা লিখিত আবেদন তৈরি করবো, এমন সময় ডেকে পাঠিয়ে এসআই মনজুর আহমেদ জানান, আমি যদি না দেই, ওসি এই লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়া দিতে পারবে না। কারণ লাশের মালিক এখন আমি। আপনারা আমার সঙ্গে কথা বলেননি, তাই এই লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়া কোনোভাবেই দেওয়া যাবে না।

এ বিষয়ে সরাইল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনজুর আহমেদ জানান, মেয়েটি কিছু দিন আগে বিদেশ থেকে এসেছে। আত্মহত্যার পেছনে কোনো কারণ থাকতে পারে। মেয়েটির লাশ হাসপাতালে ফেলে রেখে তারা পালিয়ে গিয়েছিল, এটিও রহস্যজনক। আমি এ ঘটনার তদন্তকারী অফিসার, লাশ আমিই উদ্ধার করেছি। তারা আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো কথা না বলে ওসির সঙ্গে কথা বলেছে।

এসআই মনজুর আহমেদ আরও জানান, এখন এই লাশের মালিক আমি। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়া এই লাশ পরিবারের লোকদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার বিধান ওসির নেই।

পুলিশ রেগুলেশনস্ ও গাইড (পি.আর.বি) বই'য়ে তা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে বলেও জানান তিনি

Bootstrap Image Preview