Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মৌলভীবাজারে গণ আদালতে অপরাধী বানরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর, মাটিচাপা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০৭:০৯ PM
আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০৭:০৯ PM

bdmorning Image Preview


মৌলভীবাজারের বড়লেখায় এক বানরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে এলাকাবাসী। প্রায় এক মাস ধরে এই বানরের কামড়ে ৩৫ শিশু আহত হয় এবং এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। এতে আতঙ্কিত এবং উত্তেজিত এলাকাবাসী  এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানে।

এলাকাবাসীর দাবি, তারা ১০-১২ দিন ধরে বন বিভাগের সঙ্গে যোগযোগ করলেও কোনো লাভ হয়নি ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কোনো ব্যক্তির পালিত বা দলছুট একটি বানর এক মাস ধরে বড়লেখার উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নে কাঁঠালতলী, রুকনপুর, বড়খলা, দক্ষিণ মুছেগুল, উত্তরভাগসহ আশপাশের গ্রামে তাণ্ডব চালায়। বানরটি সেলিম আহমদ (৮), মারুফ আহমদ (১০), বিউটি বেগম (১১) ছাড়া প্রায় ৩০ জনকে আঁচড়ে-কামড়ে আহত করেছে। আহতদের বেশির ভাগের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন দাবি করছেন, ১৫  শিশু এই বানরের কামড়ে গুরুতর আহত হয়ে ওসামানী হাসপাতালে ভর্তি আছে এবং এক শিশু মারা গেছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে নিশ্চিত ঠিকানা তার জানা নেই।

একই দাবি করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেনে।

তারা বলেন, এ বানরের আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়েছিল যে বৃহস্পতিবার বড়লেখা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গত সপ্তাহে বন ও পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এলাকায় আসলে তাকেও জানানো হয়। মন্ত্রী বন বিভাগকে বিষয়টি দেখতে নির্দেশ দেন। মন্ত্রীর নির্দেশের পর মৌলভীবাজার ওয়াইল্ড লাইফ বিভাগ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায় এবং তাদের কাছে বানর ধরার যন্ত্র নেই জানিয়ে ঢাকা থেকে ক্রাইম কন্ট্রোল টিম আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে।

এর আগে বড়লেখা রেঞ্জের সহযোগী কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে এলাকা পরিদর্শন করে মৌলভীবাজার জেলা কর্মকর্তাদের জানান।

মৌলভীবাজার ওয়াইল্ড লাইফ বিভাগ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আসার পর এলাকাবাসী ঢাকার ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিটের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এরপর প্রতিদিনই ইউপি চেয়ারম্যান এক বা একাধিকবার বন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও দেখা মেলেনি।

এর মধ্যে মঙ্গলবার সকালে আরো একটি শিশুকে বানরটি কামড়িয়ে আহত করলে। এরপর উত্তেজিত গ্রামবাসী বানরটিকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। ভাতের সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বিকেল ৩টার দিকে একটি ধানখেত থেকে বানরটিকে আটক করা হয়। পরে কাঁঠালতলী বাজার সংলগ্ন স্থানে শত শত জনতার উপস্থিতি এবং সিদ্ধান্তে বানরটির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। তারা বানরটিকে মেরে মাটি চাপা দেয় ।

এ দিকে বড়লেখার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা জুড়ি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা এনামুল হক বানরটিকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন এমন খবর একটি গণমাধ্যমে আসে, যা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে এ রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, আমি বন বিভাগের লোক হয়ে বন্যপ্রাণী হত্যার নির্দেশ দেব এটা কারো কাছেই বিশ্বাসযোগ্য হবে না।

ওয়াইল্ড লাইফ মৌলভীবাজারের রেঞ্জ কর্মকর্তা জৌলহাস আহমদ জানান, আমরা যে দিন পরিদর্শনে যাই সে দিন বানরটিকে অনেক খুঁজেও পাইনি এবং আমাদের কাছে সেই ধরনের সরঞ্জামও নেই তাই আমরা ঢাকার ক্রাইম কন্ট্রোল টিমকে খবর দিই। টিম আসবে আসবে করছিল এরই মধ্যে বানরটিকে হত্যা করা হয়েছে এমন খবর পেয়েছি।

বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ক্রাইম কন্ট্রোলের পরিচালক এস এম জহির আকন এ বিষয়ে জানান, আমরা খবর পেয়েছিলাম কিন্তু এরই মধ্যে বান্দরবানে একটি হাতি মারা যাওয়ায় আমাদের টিম সেদিকে চলে যায় । সেখান থেকে আসার পর যখন বড়লেখায় পাঠাব এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার খবর পেয়েছি বানরটিকে মেরে ফেলা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, আমাদের দলে মাত্র তিনজন ইন্সপেক্টর আছেন তার মধ্যে একজন ট্রেনিংয়ের বিদেশে আছেন। মাত্র দুজন দিয়ে আমাদের সারা দেশের কাজ করতে হচ্ছে ।

তবে বানরটির কামড়ে একটি শিশু মারা গেছে দাবি করা হলেও অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। এমন কোনো তথ্য জানা নেই স্থানীয় থানাতেও ।

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াছিনুল হক জানান, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই । ঘটনা সত্য হলে অবশ্যই আমাদের জানার কথা। তবুও আমি খোঁজ নেব।

উল্লেখ্য, বড়লেখার উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নে কয়েকটি চা বাগান ও বনাঞ্চল রয়েছে। পাহাড় ও চা-বাগানে অনেক বানরের বাস। এরা অনেক সময় খাবারের সন্ধানে দলবলে লোকালয়ে এসে খেতের ফসল খেয়ে কিংবা নষ্ট করে চলে যায়। কিন্তু মানুষের ওপর কখনো আক্রমণ করেনি। গত এক মাস আগে গলায় লাল রঙের রশি বাঁধা অবস্থায় একটি বানর লোকালয়ে দেখা যায়। হঠাৎ করে বানরটি মানুষের ওপর আক্রমণ শুরু করেছে। ভোরবেলা, দুপুর ও সন্ধ্যায় একা পেলেই লোকজনের ওপর হামলা করেছে। বেশির ভাগ আক্রমণের শিকার হচ্ছে স্কুলগামী শিশুরা। এতে শিশুসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভয়ে অনেক শিশু স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যে সমাপনী পরীক্ষা শুরু হলে অভিভাবকদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দেয়।

তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় যেসব শিশুকে আক্রমণ করেছে তাদের অবস্থা গুরুতর। শিশুরা বানরের ভয়ে কেউ একা বের হতে চাইত না।

Bootstrap Image Preview