জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ করায় ইরান কমপক্ষে ১০৬ জনকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ দাবি করে সংস্থাটি।
অস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ইরান সরকারের পক্ষ থেকে হত্যার ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন নিয়েও মুখ খোলেনি তারা। আর জাতিসংঘে তাদের মিশনকে এ বিষয়ে মন্তব্য করার অনুরোধ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, তারা সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের কাছ থেকে এসব তথ্য পেয়েছে এবং যাচাই-বাছাই করেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ইরানের নিরাপত্তাকর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র, জলকামান, টিয়ার গ্যাস ছুড়তে দেখা যাচ্ছে। আন্দোলনকারীদেরকে বেয়নেট দিয়ে আঘাত করতে দেখা যায়।’
সংস্থাটি দাবি করছে, তাদের এক প্রত্যক্ষদর্শী ছাদ থেকে স্নাইপার দিয়ে গুলি করতে ও হেলিকপ্টার থেকে গুলি করতে দেখেছেন। অ্যামনেস্টি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, ইরানের জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যম মাত্র ছয়জন নিহতের খবর প্রকাশ করছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা বলছে, তারা এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখছেন। তাদের মুখপাত্র রুপার্ট কোলভিক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা অস্ত্র ব্যবহার ও এতগুলো মানুষের প্রাণহানির ব্যাপারে সতর্ক রয়েছি।’
তেলের মূল্যবৃদ্ধি ইরানীয়দের কাছে অন্যতম আর্থিক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। এর আগে ২০১৫ সালে তারা বিশ্ব পরাশক্তির সঙ্গে ইরানের করা পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে সরিয়ে নিলে মুদ্রার অবনমনের শিকার হন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, তেলের বাড়তি দাম দরিদ্র পরিবারের ভর্তুকি দিতে ব্যবহার করা হবে। তবে এ সিদ্ধান্তে অধিকাংশ ইরানীয় খুশি হতে পারেননি।
মারিয়াম কাজেমি নামে ২৯ বছর বয়সী এক ইরানি বলেছেন, ‘এটা সাধারণ মানুষের ওপর রীতিমতো চাপ প্রয়োগ। এটা খারাপ সময়ের একটি খারাপ সিদ্ধান্ত। এর ফলে অর্থনীতি দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যায় পড়বে।’
তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে আন্দোলন করায় ইরান কর্তৃপক্ষ কতজনকে গ্রেপ্তার, আহত ও হত্যা করেছে তা প্রকাশ করেনি। গত রোববার সারা বিশ্বের সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তারা। পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা তেহরানের বিভিন্ন রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে, যদিও তা সংখ্যায় খুবই কম। সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে, যদিও কিছু জায়গায় আন্দোলনকারীরা গাড়ি আটকাছে।