Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

লাগামহীন পেঁয়াজের দাম, বাড়তে শুরু করেছে চাল ও সবজীর দামও

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ১০:০৫ AM
আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ১০:০৫ AM

bdmorning Image Preview


বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের দাম। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম উঠেছে কোথাও ২৫০ টাকা, আবার কোথাও ২৮০ টাকা কেজি। দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ডাবল সেঞ্চুরি করে ২২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এক দিনের ব্যবধানে বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৫০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ টাকা।

বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সংকট রয়েছে। তাই আপাতত দাম কমার সম্ভাবনা নেই। বরং এভাবে চলতে থাকলে পেঁয়াজের কেজি ৩০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। রাজধানীর বাইরেও কোনো কোনো জায়গায় গতকাল পেঁয়াজের কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। দফায় দফায় এভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এই লাগামহীন দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এবং কারসাজিকে দায়ী করছে সবাই। এ ছাড়া সরকারের দুর্বল বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাকেও দায়ী করছে কেউ কেউ।

শুধু পেঁয়াজের দামই নয়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দামও কেজিতে পাঁচ থেকে সাত টাকা বেড়েছে। দু-একটি বাদে প্রায় সব ধরনের সবজির দামও কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। তবে মাছ, মাংস, ফার্মের মুরগি, ডিম আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল রাজধানীর মাদারটেক কাঁচাবাজার, খিলগাঁও সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজার, শান্তিনগর বাজার, কারওয়ান বাজার, পশ্চিম রাজাবাজার ও বসুন্ধরা রোডের ভাই ভাই সুপার মার্কেট ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

এদিকে শিগগিরই পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ। গতকাল ভোলা সদরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি শিগগিরই পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কারণ এই মুহূর্তে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ জাহাজে করে দেশের পথে রয়েছে। এতে আমাদের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ হবে।’

গতকাল বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে কিছু কিছু দোকানে নতুন পেঁয়াজের গুটিও (গাছ পেঁয়াজ) বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা আগাম এই পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি করছেন। গাছ পেঁয়াজ গুটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। অর্ধেক দামে এই পেঁয়াজ বিক্রি হলেও বাজারে তার প্রভাব নেই। তা ছাড়া বাজারে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে।

পেঁয়াজের মজুদ যথেষ্ট থাকার পরও দাম এত বেশি কেন জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা জহির উদ্দিন বলেন, পেঁয়াজের আড়ত ও পাইকারিতে দফায় দফায় দাম বাড়ানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আমদানি নেই। গৃহস্থ ও কৃষকের কাছ থেকেও পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। সরবরাহে অনেক ঘাটতি আছে। তাই দাম বাড়ছে।

বাজারভেদে পেঁয়াজের দামে কিছুটা তারতম্যও পরিলক্ষিত হয়েছে। গতকাল মাদারটেক বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ২০০ থেকে ২২০ টাকা।

এই বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা সোলাইমান বলেন, ‘শ্যামবাজার থেকে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ কিনতে আমার প্রায় ২৪০ টাকা খরচ হয়েছে। খুচরায় বিক্রি করছি ২৫০ টাকা। এ ছাড়া আমদানি করা মিসরের পেঁয়াজ ২০০ টাকা, তুরস্কের পেঁয়াজ ১৮০ টাকায় কিনেছি।’

খিলগাঁও কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। কারওয়ান বাজারে বিক্রি হয়েছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে। রাজাবাজারে বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকা কেজি, বসুন্ধরা রোডে ভাই ভাই সুপার মার্কেটে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায় দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে।

রাজধানীর মতো দেশজুড়েই পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। গতকাল বরগুনার বেতাগী পৌর শহরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৪০ থেকে ২৮০ টাকায়।

রংপুরের পীরগাছায় গতকাল খুচরায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৬০ টাকা দরে। দুই দিন আগেও প্রতি কেজি দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে এক দিনে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৬০ টাকা। গতকাল এখানে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা কেজিতে।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বিভিন্ন বাজারে গতকাল ২৫০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। শাহজাদপুর পৌর সদরের দ্বারিয়াপুর বাজারের কাঁচা সবজি বিক্রেতা কালু মোল্লা জানান, শাহজাদপুরে আমদানি করা পেঁয়াজ না আশায় পুরোটাই দেশীয় পেঁয়াজের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম উঠেছে ২৩০ টাকা কেজি। ফলে বিপাকে পড়েছে এ এলাকার নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটি কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার হাট-বাজারগুলোয় তিন দিন ধরে তীব্র পেঁয়াজ সংকট দেখা দিয়েছে। গতকাল বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর কাঁচাবাজারে এক দিনের ব্যবধানে গতকাল প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে ২৩৫ টাকা থেকে ২৪০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া গাইবান্ধার বাজারে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি, হবিগঞ্জে ২০০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা যায়।

এদিকে পেঁয়াজের দামের আগুন ছড়িয়ে পড়ছে চালের বাজারেও। বিপুল উৎপাদন এবং পর্যাপ্ত মজুদের মধ্যেও চিকন চালের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে পাঁচ থেকে সাত টাকা বেড়েছে। আর মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা। এতে স্বল্প আয়ের মানুষ বেশি বিপাকে পড়েছে।

বাংলাদেশ অটো মেজর হাস্ক মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি শহিদুর রহমান পাটোয়ারী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার চায় কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত ধান-চালের ন্যায্য দাম পাক। সেই হিসাবে সরকারি দাম নির্ধারণ করা হয়। সেই দাম অনুযায়ী, এখনো কৃষকরা কেজিতে দাম পাঁচ থেকে সাত টাকা কম পাচ্ছেন। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। তাই সরকারের পাশাপাশি আমরাও চাই কৃষকরা তাঁদের পণ্যের ন্যায্য দাম পাক। এটা অস্বাভাবিক নয়।’

চালের খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিলাররা শুধু দাম বাড়িয়েছেন তাই নয়। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে চাল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন।

রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে জিহাদ স্টোরের জাহিদ জানান, তিনি মিনিকেট চাল বিক্রি করছেন প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) দুই হাজার ৪০০ টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগে এই চালের দাম ছিল দুই হাজার ১০০ টাকা। বস্তাপ্রতি বেড়েছে ৩০০ টাকা। বাড়ার কারণ জানতে চাইলে জাহিদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে বাজার এমনিতেই মন্দা। এক মাস ধরে তেমন ভালো বেচাকেনা নেই। এরপর পাইকার চাল বিক্রি করতে চান না।’ পাইকার জানান, মিলাররা চাল ছাড়ছেন না।

গতকাল শুক্রবার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৫০ থেকে ৫৫, নাজির ৫৫ থেকে ৬০, লতা ৪৫ থেকে ৪৮ ও মোটা চাল ৩৬ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

চড়েছে সবজির দামও : গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলুর কেজি ২৫ থেকে ৩০, কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০, পটোল ও ভেণ্ডি ৬০, করল্লা ৬০ থেকে ৮০, উস্তা ৬০, বরবটি ৬০ থেকে ৭০, কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০, শিম ৬০, কচুর মুখী ৮০ থেকে ১০০, মুলা ৪০ থেকে ৫০, টমেটো ১০০, শসা ১০০ থেকে ১২০, গাজর ৮০ থেকে ১০০, ফুলকপি পিস ৫০ থেকে ৬০ এবং লাউ পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ধনেপাতা ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে বাজারে মাছ, ডিম, ফার্মের মুরগি, গরু ও খাসির মাংস আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন কালের কণ্ঠ’র বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা।

Bootstrap Image Preview