Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ইউনেস্কোর ৪০তম জেনারেল কনফারেন্সে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ১০:৫৮ AM
আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ১০:৫৮ AM

bdmorning Image Preview


দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ইউনেস্কোর ৪০তম জেনারেল কনফারেন্সের দ্বিতীয় দিনের সমাপনী সেশনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এভাবেই বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। এতে বিশ্বের সব শিক্ষামন্ত্রী ও ১৯৩টি দেশ থেকে আসা প্রতিনিধি দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় রোহিঙ্গাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক ম্যাক্স ফ্রেডার এক আবেগঘন ও জ্বালাময়ী বক্তৃতা করেন। বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তখন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দফতরে এই সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে শুরুতেই শিক্ষা ও মানবিকতা সম্পৃক্ত সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইতালির বিশ্বখ্যাত অন্ধশিল্পী এন্ড্রু বোসিলি। পরে বক্তৃতা করেন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক ম্যাক্স ফ্রেডার।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ মানবিকতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, বিশ্বে তা বিরল। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন ও ভারতের মতো দেশও এই ধরনের দৃষ্টান্ত দেখাতে পারেনি। সম্পদের সীমাবদ্ধতা, অধিক জনসংখ্যা এবং অন্যান্য চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ মানুষের জীবন রক্ষায় নজিরবিহীন ভূমিকা রেখেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘসহ বিশ্বকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। মিয়ানমারই রোহিঙ্গাদের নিজের দেশ। সেখানে তাদের নিরাপত্তা ও যথাযথ মর্যাদাসহ নিরাপদ প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। প্যানেল আলোচনা শেষে দীপু মনি বাংলাদেশের সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বনেতারা বলেছেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ মানবিকতায় বিশ্বে রোল মডেল। নিজেদের অনেক সমস্যা থাকার পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ অসহায়-নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

এর আগে সম্মেলনে আরও দুটি প্ল্যানারি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে বিভিন্ন দেশের শিক্ষাবিষয়ক দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন সেশনে সভাপতিত্ব করেন ডা. দীপু মনি। এছাড়া মন্ত্রী শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তি ও গতিশীলতা শীর্ষক মন্ত্রীদের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ভারতের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন তিনি। এতে উভয় দেশের উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে সহযোগিতা বিনিময়ের ওপর জোর দেয়া হয়।

পরে মাক্স ফ্রেডার বাংলাদেশি সাংবাদিকদের বলেন, মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিকভাবে বিপন্ন ১.২ মিলিয়ন লোককে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। তাদের সব প্রয়োজন মিটিয়েছে। বিপন্ন মানুষের চরম সংকটের মুহূর্তে যেভাবে হাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশের মানুষ তা পৃথিবীতে অবিস্মরণীয় প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এই চিত্রশিল্পী বলেন, মর্যাদা, নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট দিয়ে রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে হবে। এ কাজে জাতিসংঘ এবং বিশ্বের সব দেশকে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা দরকার।

ম্যাক্স ফ্রেডার আমেরিকান খ্যাতনামা তরুণ চিত্রশিল্পী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আর্টুলুশন নামক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। নিউইয়র্কভিত্তিক কমিউনিটি বেইজড এই পাবলিক আর্ট অর্গানাইজেশনটি বিশ্বের আটটি অঞ্চলে স্থানীয় চিত্রশিল্পীদের নিয়ে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি নিপীড়ত শিশুদের নিয়ে কাজ করছে। তাদের মূল কাজ নিগৃহীত, ভীতিকর অবস্থায় থাকা শিশুদের ছবি আঁকা শেখানো। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ১০ লাখ শিশুকে ছবি আঁকা শিখিয়েছে।

ম্যাক্স ফ্রেডার যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছিলেন। বাংলাদেশে গিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি সাহায্য ও মমতার হাত বাড়িয়ে গবেষণার বিষয়বস্তু পরিবর্তন করেন তিনি। ফ্রেডার আর্ট অ্যান্ড এডুকেশন, কমিউনিটি বেইজড, স্পেশাল ফোকাস অন রোহিঙ্গা বিষয়ে পিএইচডি শেষ করেন।

৪০তম ইউনেস্কো সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে আরও আছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় ইউনেস্কো কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মো. মনজুর হোসেন প্রমুখ।

Bootstrap Image Preview