Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে করে সঠিক কাজটি করলেন গুলতেকিন ও আফতাব

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ০৬:৩৯ PM
আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ০৬:৩৯ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


দ্বিতীয় বিয়ে করার পর গুলতেকিন খান ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আফতাব আহমদকে নিয়ে আমাদের সমাজে বিতর্ক হবে তা স্বাভাবিক। কিন্তু বেশিরভাগই তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ইসলাম, খ্রিস্টান, ইহুদি এই তিন ধর্মেই বিধবাদের সম্মান দেওয়া হয়েছে। তাদের জীবন নিরাপদে, সুন্দরভাবে পার করার জন্য আবারো বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। বিধবাদের ঠিকমতো দেখাশুনা করার দায়িত্ব সমাজের উপর দেওয়া হয়েছে। একইসাথে বিধবাদের য নেওয়ার বিনিময়ে সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে বড় পুরষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে অহেতুক সমালোচনা ও বিষয়টি এখনো ঘৃণার চোখে দেখি যার কোনো সুযোগ নেই ধর্মতেও।

এমনকি বেশিরভাগ পুরুষ দ্বিতীয় বিয়ে করার সময় বিধবাদের কথা চিন্তাও করে না। রাসুল (সা:)এর মাত্র একজন স্ত্রী ছিলেন কুমারী, আর বিভিন্ন সময়ে ৮ জন স্ত্রী হয়েছিলেন বয়স্ক বিধবা। আল্লাহ বিধবাদের প্রতি খুবই সদয় আচরণ করার কথা বলেছেন। তিনি কুরআনে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা যায়, তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। যখন সেই সময় (ইদ্দত) পার হবে, তখন যদি তারা গ্রহণযোগ্য-সুন্দরভাবে নিজেদের ব্যাপারে কিছু করতে চায়, তাহলে তোমাদের কোনো গুনাহ হবে না। তোমরা যা কিছুই করো, আল্লাহ তার সব জানেন। [আল-বাক্বারাহ ২৩৪]

তারপর ইদ্দত পূরণ করার পর বিধবা ইচ্ছে করলে আবার বিয়ে করতে পারেন। গ্রহণযোগ্যভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন। আল্লাহ বলেছেন, বিধবা নিজেই সবার কাছে ভালো বলে পরিচিত এমন কিছু, কোনো কাজ বা কিছু যার ফলাফল যে ভালো হবে তা যুক্তি দিয়ে বোঝা যায়, এমন কোনো কাজ যা শরিয়ার ভিত্তিতে ভালো, সুন্দর আচরণ, সমতা, মমতা, কল্যাণকর, আন্তরিকতা, সৎ উপদেশের ভিত্তিতে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অনেকে নিজেদের পরিবারের খানদানি সম্মান চলে যাবে ভেবে বিধবাদের বিয়ে দিতে চান না। এটা অন্যায়। আল্লাহ বিধবাদের অধিকার দিয়েছেন, বিধবারা নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করলে অভিভাবকদের কোনো দোষ হবে না। ধর্মে এও বলা হয়েছে এতে বাঁধা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

গুলতেকিন ও আফতাবের বিয়ে সম্পর্কে তাদেরই দেয়া স্ট্যাটাসের দুটি লাইন ধর্মীয় সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে ধরা দিয়েছে। ‘তিনি (গুলতেকিন) আমাকে তার সামনে বসালেন এবং আমার হাতে হাত রেখে বললেন’, ‘প্রত্যেকেরই মৃত্যুর স্বাদ পেতে হবে। কিন্তু আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই না। আমি নিঃশ্বাস নিতে চাই। তবে নিশ্চিত নই ভবিষ্যৎ কোন নিয়তিতে গাঁথা।’ আফতাব আহমেদ জবাবে বললেন, আমি চেষ্টা করব তোমাকে বাঁচাতে কিন্তু তোমাকে বিয়ে করা ছাড়া এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’ এ সময় একটু বিরতি নিয়ে গুলতেকিন বললেন, তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে? এবং আমি অনুমান করতে পারি, আমরা দুজনেই কোনো কারণ ছাড়া এক সঙ্গে হতে পারব না।

গত হাজার বছর ধরে ভারত উপমহাদেশে বিধবারা ভয়ঙ্কর অত্যাচার এবং অন্যায়ের শিকার হচ্ছে। বিধবাদের একসময় স্বামীর চিতায় জীবন্ত জ্বলে মরতে বাধ্য করা হতো। না হলে ধর্মীয় নিয়ম অনুসারে তাদের অর্ধমৃতের মতো বেঁচে থাকতে হতো। বিধবারা সারাজীবন সাদা কাপড় পড়ে থাকতো, কখনো সাজতে পারত না, প্রথা অনুসারে মাথা কামিয়ে ফেলতে হতো। স্বামীর সম্পত্তিতে তাদের কোনো অধিকার ছিল না। বিধবা হয়ে যাওয়ার পর তাদের দেখাশুনা, ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর পক্ষ থেকে কেউ নিত না। তাদের জন্য পেঁয়াজ, রসুন, আমিষ ইত্যাদি খাওয়া সারা জীবনের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যেত। সমাজ তাদেরকে দেখত এক অশুভ, অস্পৃশ্য, ঘৃণিত সত্তা হিসেবে। স্বামীর মৃত্যুর জন্য বিধবার পোড়া কপালকে দোষ দেওয়া হতো। এই ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের অবস্থা। আর ইসলাম আসার আগে প্রাচীন আরবে বিধবাদের নিয়ে কী করা হতো তা বর্ণনা করার ভাষা নেই।

কিন্তু এখনো লাখ লাখ নারী বাল্য বিয়ে করে স্বামী হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অল্প বয়সে মা হয়ে স্বামী হারিয়ে, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে, বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত ভীষণ কষ্টের জীবন পার করে। পরিসংখ্যান অনুসারে ভারতে ৪ কোটি বিধবা রয়েছে, যার একটি বড় অংশ আশ্রমে থাকে, না হয় রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে, না হলে নিষিদ্ধ জীবন যাপন করছে। এদের কেউ দেখে না। তাদের সন্তানরা তাদের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। সমাজে তাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। কোথাও তারা মানুষ হিসেবে সম্মান পায় না।

বরং বিধবাদের জীবন নিরাপদে, সুন্দরভাবে পার করার জন্য আবারো বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। বিধবাদের ঠিকমতো দেখাশুনা করার দায়িত্ব সমাজের উপর দেওয়া হয়েছে। একইসাথে বিধবাদের যতœ নেওয়ার বিনিময়ে সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে বড় পুরষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

চার মাস দশ দিন কেন?

চার চান্দ্র মাস এবং দশ দিন হচ্ছে ১২৬ দিন, অর্থাৎ ঠিক ১৮ সপ্তাহ। ১৮ সপ্তাহে একটি বাচ্চা পুরোপুরি মানব আকৃতি নেয়। এসময় তার চোখ, কান, নাক, মাথা, হাত, পা ইত্যাদির গঠন সম্পূর্ণ হয়, দাঁত, নখ তৈরি হয়। লিভার, পরিপাকতন্ত্র সম্পূর্ণ হয়ে হজমি রস নিঃসরণ হয়।এই সময় ছেলে বা মেয়ে অনুসারে যৌনাঙ্গ, জরায়ু সম্পূর্ণ তৈরি হয় এবং বাচ্চা কী হবে তা পরিষ্কারভাবে নির্ণয় করা যায়। গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা এই সময়ের পর থেকে একেবারেই কমে মাত্র ৩% হয়ে যায়। এছাড়া এই দশ দিনেই বাচ্চার মধ্যে রুহ ফুঁকে দেওয়া হয়।

একারণে চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করলে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বিধবা গর্ভবতী কিনা এবং বাচ্চা জীবিত কিনা। এর আগে বিয়ে করে ফেললে যদি বাচ্চা জন্ম হয়, তাহলে বাচ্চার বাবা কে, তা নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যদি বিধবা সত্যিই গর্ভবতী হন, তাহলে তাকে বাচ্চা জন্ম দেওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করতে হবে। তাই চার মাস দশ দিন অপেক্ষার পর তিনি প্রায় নিশ্চিত হতে পারেন যে, তাকে গর্ভকালীন পুরো সময়টাই অপেক্ষা করতে হবে, কারণ এর পরে বাচ্চা হারানোর সম্ভাবনা কম, যদি না আল্লাহ অন্য কিছু ইচ্ছা করেন।

আল্লাহ আমাদের হালালভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে বলেছেন:

যদি তোমরা সেই নারীদের বিয়ের ইঙ্গিত দাও, অথবা মনে মনে গোপন রাখো, তাহলে তোমাদের কোনো দোষ হবে না। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা তাদের কথা ভাবো। কিন্তু তাদের (বিধবা) সাথে কোনো গোপন অঙ্গীকার করবে না। তাদেরকে সম্মান-সৌজন্যতা বজায় রেখে জানিয়ে দাও, আর নির্দিষ্ট সময় (ইদ্দত) পার না হওয়া পর্যন্তও বিয়ে করার কথা দেবে না। মনে রেখো, আল্লাহ জানেন তোমাদের অন্তরে কী আছে, তাই তার প্রতি সাবধান! একইসাথে মনে রেখো, আল্লাহ অনেক ক্ষমা করেন, তিনি অনেক সহনশীল।

অনেক পরিবারে কেউ বিধবা হলে, সে যদি অত্যন্ত সুন্দরী হয়, বা অনেক সম্পদশালী হয়, এবং তার উপর বাচ্চা না থাকে, তাহলে তাকে বিয়ে করার জন্য পাত্রের লাইন লেগে যায়। আর আগেকার মুসলিম আরব সমাজে বিধবাদের বিয়ে করাটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। তখন বিধবাদেরকে কোনো ধরনের ‘ভয়ঙ্কর প্রাণী’ মনে করতো না। তাই এই সময়টাতে কেউ যেন বিয়ের আকাঙ্খায় মজনু হয়ে সীমালঙ্ঘন করে না ফেলে, সে জন্য এই আয়াতে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে কোনো ধরনের গোপন বিয়ের কথা দেওয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কারো বিয়ে করার যতই ইচ্ছা থাকুক, আগে ইদ্দত পার হবে, তারপর বিয়ের কথা দেওয়া যাবে। এর আগে পর্যন্ত সরাসরি না বলে বিয়ের ব্যাপারে ইঙ্গিত দেওয়া যেতে পারে, যেন বিধবা বুঝতে পারে তার জন্য পাত্র তৈরি আছে। পাত্রও যেন বুঝতে পারে বিধবা বিয়ে করার প্রস্তাব একেবারেই বাতিল করে দেবে না। সুতরাং, চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করার পর বিফলে যাওয়া সম্ভাবনা কম। কিন্তু কোনো ধরনের পাকা কথা দেওয়ার আগে ইদ্দত পার করতে হবে। আল্লাহ এই ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে সাবধান করে দিয়েছেন।

কিন্তু এর পরেই আল্লাহ আবার নমনীয় হয়ে বলেছেন যে, তিনি অনেক ক্ষমা করেন, অনেক সহনশীল। তিনি জানেন বিয়ে করার চিন্তা মাথায় আসলে মানুষের কী অবস্থা হয়। শুধু সীমা পার না করলেই চলবে। আল্লাহ হচ্ছেন হালিম যার অর্থ রাগ করার পরেও যিনি অনেক ভালোবাসেন, অনেক সহনশীল। যেমন, মা সন্তানের উপর বার বার রাগ করলেও, তার সন্তানের প্রতি ভালোবাসা চলে যায় না। আল্লাহ এই ভালোবাসা এবং সহানুভূতির সর্বোচ্চ পর্যায় ধারণ করেন। তার বান্দারা বার বার পাপ করে, তিনি বান্দাদের উপর রাগ করেন, কিন্তু তারপরেও তিনি বান্দাদের অনেক ভালোবাসেন।

এছাড়া বিয়ে করে ফেলার পর যখন স্বামী বা স্ত্রীর মাথায় হাত পড়ে ‘হায় হায়’ অবস্থা হয়, তখনকার পরিস্থিতি সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা দেয়া আছে।

কুরআন বলছে, ‘স্ত্রীদের স্পর্শ করার আগে অথবা মোহর ঠিক করার আগে যদি তালাক দিয়ে দাও, তাহলে তোমাদের কোনো পাপ হবে না। কিন্তু তাদেরকে খরচপত্র দাও, স্বচ্ছলরা তাদের সামর্থ অনুসারে এবং গরীবরা তাদের সামর্থ অনুসারে। যথাযথ খরচপত্র দাও। যারা ইহসান করে, তাদের জন্য এটা কর্তব্য। [আল-বাক্বারাহ ২৩৬]

এও দেখা যায়, বিয়ে করার পরেই স্বামী বা স্ত্রী উপলব্ধি করে যে, বিরাট ভুল হয়ে গেছে, এই বিয়ে করাটা উচিত হয়নি। যেমন, অনেক সময় দেখা যায় ইন্টারনেটে বসে বিদেশে থাকা ছেলে বা মেয়ের সাথে বিয়ে পড়ানো হয়েছে। তারপর স্বামী-স্ত্রী দুজনে কয়েকদিন ইন্টারনেটে কথা বলে উপলব্ধি করেছে যে, তারা আসলে একে অন্যের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। একজন কুশল বিনিময়ের সময় ‘হোয়াটস আপ?’ বললে, অন্যজন উপরে তাকায়। এভাবে স্বামী, স্ত্রী উভয়ে যখন উপলব্ধি করে যে, তাদের মধ্যে পার্থক্য এতটাই বেশি যে, এতটা ভিন্নতা নিয়ে বাকি জীবন পার করা তাদের পক্ষে সম্ভব না, তখন যদি তালাক হয়ে যায়, তাহলে স্ত্রীকে ইদ্দত পার করার দরকার নেই।

আবার এরকমও হয় যে, বিয়ের পরই হয়তো স্বামীকে জাহাজে করে কাজে দূরে চলে যেতে হয়েছে। তারপর স্বামী বিদেশে গিয়ে অন্য কারো প্রেমে পড়েছে। স্বামী আর তার বিয়ে করা স্ত্রীর সাথে সংসার করবে না। স্বামী-স্ত্রী দুজনে ফোনে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তাদের মধ্যে আর সম্পর্ক আগানো সম্ভব না। যেহেতু এখনো স্বামী স্ত্রীকে স্পর্শ করেনি, সুতরাং তালাক দিয়ে দিলে আর ইদ্দত পার করতে হবে না।

কিন্তু এই ধরনের তালাকের ক্ষেত্রে স্বামীর দায়িত্ব হচ্ছে স্ত্রীকে সমাজে প্রচলিত রীতি অনুসারে যথেষ্ট পরিমাণে গ্রহণযোগ্য উপহার, খরচপত্র ইত্যাদি দেওয়া, যেন স্ত্রীকে কোনো কষ্টের পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। স্বামী তার আর্থিক সামর্থ অনুসারে স্ত্রীর জন্য ভালো হয় এরকম যথেষ্ট পরিমাণে দেবে। তবে ধনী হলে কোনো বাড়াবাড়ি করা যাবে না, আর গরীব বলে কিপ্টেমি করা যাবে না। এভাবে স্বামী কিছু সম্পদ হারাবে, স্ত্রী কিছু সম্পদ লাভ করবে। এই সম্পদ হারানোর চিন্তা মাথায় থাকলে, স্বামীরা ঠিকমতো চিন্তাভাবনা না করেই হুট করে বিয়ে করে, তারপর স্ত্রীর মনে কষ্ট দিয়ে তালাক দেওয়া আগে বহুবার চিন্তা করবে। বিয়ে যে একটা খেলা নয়, সেটা পুরুষদের সাবধান করে দেওয়ার জন্য এই নিয়ম।

এই আয়াতে مَتِّعُوهُنَّ ব্যবহার করে শুধুই দেওয়া নয়, যথেষ্ট পরিমাণে দেওয়ার প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। কিছু একটা দিয়ে দায় সারা দায়িত্ব পালন করলে হবে না। এধরনের তালাক যেকোনো নারীর জন্য কঠিন একটা সময়। বিয়ে করে সংসার করার কত স্বপ্ন, কত পরিকল্পনা সব রাতারাতি ভেঙ্গে যায় তালাকে। এই কঠিন সময়টা নারীদের জন্য কিছুটা সহজ করে দেওয়ার জন্য স্বামীকে যথেষ্ট পরিমাণে, রীতি অনুসারে মার্জিত উপহার দিতে হবে। উপহার দেওয়ার সময় মা’রুফ এর শর্তগুলো পূরণ করতে হবে।

যদি স্পর্শ করার আগে কিন্তু মোহর নির্ধারণ করার পরে তালাক দাও, তাহলে যে মোহর বাধ্যতামূলক করেছ, তার অর্ধেক দাও। তবে স্ত্রী মাফ করে দিলে, বা যার হাতে বিবাহ-বন্ধন, সে মাফ করে দিলে আর দিতে হবে না। মাফ করে দেওয়াটাই তাকওয়ার নিকটবর্তী। আর তোমরা নিজেদের মধ্যে সহানুভূতির কথা ভুলে যেও না। তোমরা কী করো, আল্লাহ তা অবশ্যই দেখেন। [আল-বাক্বারাহ ২৩৭]

মোহর ঠিক করা হয়ে গেলে সেটা একটা অঙ্গীকার। এক্ষেত্রে স্বামী যদি স্ত্রীকে স্পর্শ করার আগেই তালাক দেয়, তাহলে স্বামীকে অর্ধেক মোহর দিতে হবে। এই নিয়ম আবারো পুরুষদের সাবধান করে দেয় যে, বিয়ে কোনো খেলা নয়। একজন নারীর জীবন নিয়ে খেলার আগে সাবধান। কিন্তু যদি স্ত্রী মোহর নিতে না চায়, সেটা ক্ষমা করে হোক বা তিক্ততার কারণেই হোক, তাহলে কোনো মোহর না দিলেও হবে। তবে যার হাতে বিবাহ-বন্ধন, অর্থাৎ স্বামী যদি পুরো মোহরটাই নিজে থেকে দিতে চায়, তাহলে খুবই ভালো কথা। অনেক সময় এভাবে বিয়ে করে তালাক দিয়ে চলে যাওয়ার সময় স্বামী অনুতপ্ত হয়। অনুতাপ কমানোর জন্য সে নিজে থেকে যদি স্ত্রীকে পুরো মোহর দিয়ে দিতে চায়, তাহলে সে দিতে পারে, এবং সেটা স্ত্রীর গ্রহণ করা উচিত। এই নিঃস্বার্থ কাজটি স্বামীকে তাকওয়া অর্জন করতে সাহায্য করবে।

কুরআন আরো বলছে, ‘আর তোমরা নিজেদের মধ্যে সহানুভূতির কথা ভুলে যেও না’

মুসলিমরা যেন আমাদের মধ্যে সহানুভূতির কথা ভুলে না যাই। জীবনে যতই তিক্ততা, মতবিরোধ থাকুক, তালাকের মতো কঠিন অবস্থায় রাগ, দুঃখ, কষ্ট নিয়ে দিন পার করুক না কেন, আমাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি, মমতার কথা আমরা যেন ভুলে না যাই। এই সহানুভূতি আমাদের মনুষ্যত্বের পরিচয়। সবচেয়ে বড় কথা এটি আমাদের তাকওয়ার প্রমাণ। যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে থেকেও আমরা একে অন্যের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে, আল্লাহর উপস্থিতির প্রতি আমাদের যে দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে, তিনি যে সব কিছু দেখছেন, সেটারই প্রমাণ দেই। যখনই আমরা নিজেদের মধ্যে সহানুভূতির কথা ভুলে গিয়ে নোংরা ভাষা, চিৎকার চেঁচামেচি, রেষারেষি, হিংসা, কুৎসা রটানো শুরু করি, তখনি আমরা সেই মুহূর্তগুলোতে তাকওয়া হারিয়ে ফেলি। আল্লাহ যে আমাদের নোংরা আচরণ দেখছেন, সেটা ভুলে যাই। যদি সত্যিই আল্লাহর উপস্থিতি সবসময় অনুভব করতাম, তাকওয়া বজায় রাখতাম, তাহলে যে কোনো ধরনের নোংরা আচরণ করার আগে আমাদের ভাবান্তর হত।

Bootstrap Image Preview