Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

গ্রামের মেম্বার থেকে এখন ৯১ কোটি টাকার মালিক!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:১০ PM
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:১০ PM

bdmorning Image Preview


সুনগামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খাঁ ও সাধারণ সম্পাদক অমল করের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এ অভিযোগ জমা দেন তাহিরপুর উপজেলার ভাটি তাহিরপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এমদাদ নূর।

অভিযোগে তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অমল করের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের দাবি জানানো হয়।

তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খাঁ ও সাধারণ সম্পাদক অমল করকে বিতর্কিত ও দুর্নীতিবাজ উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়, ২০০৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দলীয় পদ ব্যবহার করে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করেছেন তারা। চাদাঁবাজি করে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। বড়ছড়া, চারাগাঁও, বাগলী শুল্ক স্টেশনে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজি করেছেন, এখনো করছেন।

উপজেলার নতুন বাজারে মার্কেটের নামে ১৬টি দোকান করেছেন আবুল হোসেন খাঁ, ছেলে আবুল কাশেমের নামে ছয়টি দোকান ঘরের একটিতে মার্কেট নির্মাণ করেছেন, নতুন বাজারে আরও ছয়টি দোকান ঘর, দোতলা একটি ভবন নির্মাণসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও হাওরে কোটি কোটি টাকার সম্পদ নিজের এবং ছেলেদের নামে কিনেছেন। আয়ের সঙ্গে সম্পদের সামঞ্জস্য নেই তার। তিনি দলের বড় পদে আসীন থাকায় তার ছেলেরাও ব্যবসার নামে ব্যাপক লুটপাট ও চাঁদাবাজি করেছেন, করছেন। বড় ছেলে পারুল মিয়ার আনুমানিক ১০ কোটি ও ছোট ছেলে নয়ন মিয়ার নামে আট কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। সবমিলে আবুল হোসেন খার নামে এবং পরিবারের নামে ৯১ কোটি ৪০ লাখ টাকার সম্পত্তি রয়েছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খাঁসহ চারজনের বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন সাফির উদ্দিন নামে এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। মামলাটি আমলে নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠান আদালত। ওই মামলাটি তদন্তাধীন। এরই মধ্যে আবুল হোসেন খাঁকে চাঁদাবাজির একটি মামলায় দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপরও দলীয় পদবি ব্যবহার করে লুটপাট ও চাঁদাবাজি করছেন তিনি।

দুদকে দেয়া অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০০৪-২০১৫ সাল পর্যন্ত আবুল হোসেন খাঁ ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ২০১৫-২০১৯ সাল পর্যন্ত তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকাবস্থায় উপজেলার নতুন বাজারে অবৈধভাবে আবুল হোসেন মার্কেট দিয়ে ১৬টি দোকান করেছেন, যার মূল্য চার কোটি টাকা।

অবৈধপথে অর্জিত সম্পদ দিয়ে মৃত ছেলে আবুল কাশেমের নামে ছয়টি দোকান ও একটি মার্কেট নির্মাণ করেন আবুল হোসেন, যার মূল্য দুই কোটি টাকা। নতুন বাজারে আবুল হোসেনের আরও ছয়টি দোকান রয়েছে, ওই বাজারে আবুল হোসেন অফিস হিসেবে ব্যবহারের জন্য দোতলা ভবন নির্মাণ করেছেন, যার মূল্য চার কোটি টাকা। বাজারে আবুল হোসেনের দুটি দোকান রয়েছে, যার মূল্য ৪০ লাখ টাকা। পাশাপাশি আবুল হোসেনের রয়েছে অটো রাইস মিল, স’মিল ও আইসক্রিম ফ্যাক্টরি। যার মূল্য তিন কোটি টাকা। উপজেলার বাগলী বাজারে একটি মার্কেট রয়েছে, যার মূল্য দুই কোটি টাকা। জয়বাংলাবাজারে একটি দোকান রয়েছে, যার মূল্য এক কোটি টাকা।

এছাড়া তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া এলাকায় এক একর জমির ওপর একটি ডাম্প, চারগাঁও এলাকায় এক একর জমির ওপর একটি ডাম্প এবং বাগলী এলাকায় এক একর জমির ওপর একটি ডাম্প রয়েছে তার। এসবের মূল্য তিন কোটি টাকা। তার রয়েছে একটি বাগানবাড়ি। বাগলী এলাকায় আট একর জমির ওপর এই বাগানবাড়ির মূল্য আট কোটি টাকা। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় আবুল হোসেন, তার ছেলে পারুল মিয়া এবং মেয়ের জামাইয়ের নামে তিনটি বাসা রয়েছে। যার মূল্য আট কোটি টাকা। আবুল হোসেনের ব্যাংকে বর্তমানে ৩০ কোটি টাকা রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে ১৮ কোটি টাকার নামে-বেনামে সম্পত্তি।

তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খাঁ বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। উপজেলা সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের বহিরাগত কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। দুদক আসুক, তদন্ত করুক। আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক। কিন্তু মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে যুদ্ধাপরাধী বানানোর চেষ্টা করছে কিছু লোক।

দুদকে অভিযোগকারী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এমদাদ নূর বলেন, একজন ইউপি সদস্য থেকে কাজ শুরু করেছিলেন আবুল হোসেন খাঁ। ওই সময় তার পরিবারের কোনো সম্পদ ছিল না। ২০০৮ সালের পর থেকে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন আবুল হোসেন খাঁ। এখন প্রায় ১০০ কোটি টাকার মালিক আবুল হোসেন খাঁ। এজন্য তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের আবেদন করা হয়েছে।

Bootstrap Image Preview