ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম মনিপুর। ভারত স্বাধীনতা লাভের আগে ইংরেজরা ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট মনিপুরের রাজার হাতে শাসনভার তুলে দিয়েছিল। কিন্তু তার দুই বছর পরে মনিপুর ভারতের অংশ হয়। তবে রাজ্যটিতে একটি পক্ষ সব সময়ই ওই অঞ্চলের স্বাধীনতা দাবি করে আসছিল। এর মধ্যেই হঠাৎ করে গতকাল বুধবার বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা লন্ডনে বসে ভারত থেকে আলাদা হয়ে মনিপুরের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন।
মনিপুরের মহারাজা লিইসেমবা সানাজাওবার পক্ষ থেকে এই ঘোষণা করেন রাজ্য পরিষদের মুখ্যমন্ত্রী ইয়ামবেন বিরেন ও রাজ্য পরিষদের পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষাবিষয়ক মন্ত্রী নারেংবম সমরজিৎ। একই সঙ্গে লন্ডনে বসেই তারা মনিপুরের প্রবাসী সরকারও গঠন করেছেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়া ও দ্য হিন্দু জানিয়েছে, লন্ডনে বসে ওই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা মনিপুরকে পৃথক দেশ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়ে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে আবেদন করেছেন। বিরেন ও সমরজিতের দাবি, মনিপুরের ৩০ লাখ মানুষ ভারত সরকারের থেকে স্বাধীনতা চাইছে। মনিপুরের বাসিন্দাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে ভারতীয় সেনা।
তারা বলেন, সখানে আমরা মুক্ত নই এবং আমাদের ইতিহাস ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, আমাদের সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই জাতিসংঘের শোনা উচিত, গলা উঁচু করে পুরো বিশ্বকে বলছি মনিপুরে যারা বাস করে তারা মানুষ। সুপ্রিমকোর্টে এমন ১৫২৮টি হত্যার মামলার ভবিষ্যৎ এখনো ঝুলে রয়েছে। বর্তমানে তারা যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। দেশে ফিরলে ভারত সরকার তাদের হত্যা করতে পারে।
এ বিষয়ে বিরেন ও সমরজিৎ গত আগস্ট থেকে যুক্তরাজ্যে তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের পক্ষেও নথি দেখিয়েছেন। বিরেন ও সমরজিৎ আরও দাবি করেন, মনিপুর স্টেট কনস্টিটিউশন অ্যাক্ট ১৯৪৭-এর অধীনে মনিপুর রাষ্ট্রের বৈধ সরকার গঠিত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট মনিপুর ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছিল। কিন্তু ১৯৪৯ অ্যাক্ট লঙ্ঘন করে ভারত সরকার মনিপুরকে আত্তীকরণ করে নেয়।
এদিকে গোটা ঘটনায় ‘বিস্মিত’ বলে জানিয়েছেন মনিপুরের রাজা লিইসেমবা সানাজাওবা। পাশাপাশি তিনি এমন কোনো নির্দেশ দেননি বলেও জানিয়েছেন। তবে পুরো বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এমনকি চুপ রয়েছে লন্ডনের ভারতীয় দূতাবাসও। যদিও গোটা ঘটনা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বিরেন সিং।