মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুর্দি গেরিলাদের বিরুদ্ধে তুরস্কের ব্যাপক সেনা অভিযানের পর এরই মধ্যে অঞ্চলটিতে এক থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যা নিয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর এবার তীব্র সমালোচনা করেছেন সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। তিনি বলেছেন, ‘তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান একজন চোর। এর আগে তিনি কলকারখানা, গম এবং তেল চুরি করেছিলেন, আর আজ তিনি অন্যের ভূমি দখলে নেমেছেন।’
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশে আল-হেবেইত শহরে সিরিয়ার এবং আরব সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রেসিডেন্ট বাশার এসব কথা বলেন।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান এবং মার্কিন সমর্থিত কুর্দি বাহিনীসহ স্থানীয় অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তীব্র সমালোচনা করে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘আমরা যখন বাইরের কোনো শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হব, অথবা কেউ যদি আমাদের ভূমি দখলের চেষ্টা চালায়; তখন আমাদের দায়িত্ব হলো সম্পূর্ণ একতার মাধ্যমে তা প্রতিহত করা। যদিও দুর্ভাগ্যবশত কিছু সিরীয় এখন আর তা করছে না।’
প্রেসিডেন্ট বাশার বলেন, ‘আমরা তাদের বারংবার বলেছিলাম, বাইরের কোনো শক্তির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজ দেশ ও এখানকার সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভরশীল হতে, যদিও তখন তারা বিষয়টি আমলে নেয়নি। এর বদলে তারা মার্কিনিদের মিত্র বানিয়েছে। এখন আমরা কেবল চেয়ে চেয়ে দেখছি, তুরস্ক তাদের বিতাড়িত করে সীমান্তের বিশাল এলাকা নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে। অথচ এগুলো কেবল কুর্দি গেরিলাদের হাতে থাকার কথা ছিল।’
দেশের যে কোনো সঙ্কট মোকাবিলায় সর্বদা সেনাবাহিনী প্রস্তুত উল্লেখ করে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এমন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বহির্বিশ্বের আগ্রাসন প্রতিহত করতে আগ্রহী যে কোনো রাজনৈতিক কিংবা সামরিক গোষ্ঠীকেও সহায়তা দিতে আমাদের সেনারা প্রস্তুত।‘’
তিনি বলেন, ‘তুরস্কের আগ্রাসনে যখন আমাদের উত্তরাঞ্চল আক্রান্ত হলো তখনই আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামরিক গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের বলেছি, আমরা তাদের সহায়তায় সব সময় এগিয়ে আসতে প্রস্তুত। যদিও এটি কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। বরং সংবিধান এবং জাতির প্রতি আমাদের দায়িত্ব। প্রতিরোধে না হলে আমরা কোনো মাতৃভূমির দাবি করতে পারব না।’
এর আগে শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে 'অপারেশন পিস স্প্রিং' নামে চলমান তুর্কি সেনাদের অভিযান বন্ধে টানা পাঁচদিনের এক অস্ত্রবিরতির মার্কিন প্রস্তাবে সম্মত হয় তুরস্ক। যদিও এরই মধ্যে সেই সময়ও শেষ হয়ে গেছে। তবে নির্ধারিত সেই সময়ের মধ্যে মার্কিন সমর্থিত কুর্দি বাহিনীর সঙ্গে তুর্কি সেনাদের বেশ কয়েকবার বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
যদিও গত ৯ অক্টোবর অঞ্চলটিতে অবস্থানরত প্রায় হাজার খানেক মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মূলত এর পরপরই সিরিয়ায় কুর্দি নিধনের নামে অভিযান শুরু করে তুরস্ক। যদিও তখন সেসব সেনাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো নতুন সিদ্ধান্তে সেনাদের এখন আর যুক্তরাষ্ট্রে নয়; বরং তাদের ইরাক মিশনে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, সিরিয়ায় তুরস্কের সেনা অভিযান চালানোর পর সেখানে কয়েক ডজন বেসামরিক নিহত হয়েছে। তাছাড়া সেখানে অবস্থানরত কমপক্ষে ১ লাখ ৬০ হাজার লোক এরই মধ্যে অঞ্চলটি ছেড়ে পালিয়েছে।