Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

জিজ্ঞাসাবাদে ৪ গডফাদারের নাম বললেন সম্রাট

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০১৯, ০৫:২৬ PM
আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৯, ০৫:২৬ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


ক্যাসিনো গডফাদার ইসমাইল হোসেন সম্রাটের হাত ধরে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সহযোগীরা যুবলীগে অনুপ্রবেশ করেছে। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন পাঁচ সহযোগীর নামও বলেছেন সম্রাট। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনুরোধে তিনি তাদের দক্ষিণ যুবলীগে পদ দিয়েছেন। 

এজন্য আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাদের তিনি ‘ম্যানেজ’ করেছেন। এছাড়া দলে তার চারজন গডফাদার আছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তাদের নিয়মিত বড় অঙ্কের টাকা দিয়েছেন। গডফাদারদের নাম প্রকাশ করে তিনি বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন, শুধু আমাকে কেন?

তাদের প্রশ্রয়েই আমি বেপরোয়া হয়ে উঠেছি। নেতাদের জিজ্ঞাসা করে দেখেন, ঢাকায় একটি সমাবেশ করতে কত টাকা লাগে। কে দিয়েছে এই টাকা। আমার কাছ থেকেই সবাই টাকা নিয়েছে।

তিনি জানান, সিঙ্গাপুরে হুন্ডি হক নামে পরিচিত এক ব্যক্তির সহায়তায় বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার করেছেন। তার কাছ থেকে হকের একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর উদ্ধার করা হয়েছে।

এটি ধরে হকের সন্ধান চলছে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে সম্রাট এবং তার সহযোগী আরমানকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাব।

গ্রেপ্তারের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট যে চার গডফাদারের নাম বলেছেন, তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। নামগুলো এখনই প্রকাশ করছেন না।

এর আগে সম্রাট বলেছেন, দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি সোহরাব হোসেন স্বপন শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহম্মদ মানিক ও সৈয়দ নাজমুল মাহমুদ মুরাদের সহযোগী হিসেবে পরিচিত।

তাদের অনুরোধে সোহরাবকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়। এ দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে সমঝোতা করে তাদের আরেক সহযোগী খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকেও সাংগঠনিক সম্পাদক করেন সম্রাট।

তাকে যুবলীগে বড় পদ দিতে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানেরও তদবির ছিল। দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি আরমানের সঙ্গে শীর্ষ সন্ত্রাসী কাইল্যা পলাশের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। কাইল্যা পলাশ নিজেই যুবলীগ দক্ষিণের পদপ্রত্যাশী ছিল।

কিন্তু তার পরিবর্তে আরমানকে পদ দেয়া হয়। এছাড়া দুই যুগ্ম সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কী এবং জাহিদ সিদ্দিকী তারেককেও যুবলীগের পদ দেয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের ভূমিকা ছিল।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের কমিটি গঠনের কিছুদিন পর ২০১৩ সালের জুলাইয়ে গুলশানে মিল্কীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন এই খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত তারেক র‌্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে মারা যায়।

এই পাঁচজন ছাড়া সন্ত্রাসীদের অনুরোধে তাদের অনেক সহযোগীর যুবলীগে অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলেও গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। এ বিষয়ে তারা খোঁজ নিচ্ছেন।

এদিকে ক্যাসিনোর বিষয়ে কারা তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়েছে, এ বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দিয়েছেন সম্রাট। তবে রিমান্ডের প্রথমদিন বুধবার মামলা র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর হওয়ায় তাকে গোয়েন্দা পুলিশ বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি।

এর আগে মঙ্গলবার রমনা থানায় দায়ের করা অস্ত্র ও মাদক আইনের দুটি মামলায় সম্রাটকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। মামলা র‌্যাবে হস্তান্তর করায় বৃহস্পতিবার বিকালে সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে গোয়েন্দা পুলিশের কাছ থেকে র‌্যাব-১ তাদের হেফাজতে নেয়।

এ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার আলম বলেন, সম্রাট ও আরমানকে ডিবির কাছ থেকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট দুটি মামলার বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এর আগে জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট বলেছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনুরোধে পাঁচটি পদ দেয়ার ক্ষেত্রে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম সারির এক নেতা এবং এক প্রেসিডিয়াম সদস্যকে আগে ম্যানেজ করতে হয়েছে।

এজন্য তাদের বড় অঙ্কের অর্থসহ অনেক কিছু দিতে হয়েছে। দুই নেতার সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই তিনি পর্যায়ক্রমে কমিটিতে এই পাঁচজনকে অন্তর্ভুক্ত করেন। দুই নেতার প্রভাবের কারণেই যুবলীগের অন্য কেউ তাদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তেমন কোনো আপত্তি করেননি।

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতাকে তিনি নিয়মিত মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়েছেন। এমন আরও অনেককেই তিনি টাকা দিয়েছেন। তিনি চার গডফাদার সম্পর্কে বলেন, তারাই আমার মাথার উপর ছাতা হিসেবে ছিলেন।

তাদের কারণেই কখনও আমাকে কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয়নি। তাদের শেল্টারেই বেপরোয়া হয়ে উঠেন। বিভিন্নভাবে আয়ের বড় অংশই তাদের হাতে তুলে দিতেন।

কিন্ত বিপদের সময় কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি। অনেকেই তার ফোনও ধরেননি। একপর্যায়ে প্রায় সবাই তার সঙ্গে যোগাযোগই বন্ধ করে দেয়।

এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনাসহ তার সম্পদের বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছিলেন। বিদেশে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের বিষয়েও কথা বলেছেন তিনি।

সিঙ্গাপুরে হক নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে প্রতিমাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করতেন। তবে হকের বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কিছু বলেননি। মালয়েশিয়ায় তার একটি ফ্ল্যাটের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে।

ওই ফ্ল্যাটের সামনেই একটি নাইটক্লাব আছে। মালয়েশিয়ায় গেলে ওই নাইটক্লাবের ভিআইপি অতিথি ছিলেন তিনি।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, যুবলীগ নেতা খালেদ ও স্বপন আশির দশকে ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিল। ওই সময় তাদের সংগঠনের ঘনিষ্ঠ দুই বড় ভাই ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী মানিক ও মুরাদ। তারা দু’জনেই ১৯৮৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

এর মধ্যে মুরাদ জেলে থাকলেও মানিক বিদেশে পলাতক। এ দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী ২০১৩ সালে সম্রাটের সঙ্গে সমঝোতা করে খালেদ ও স্বপনকে যুবলীগ দক্ষিণের বড় পদ দেয়। কারাগারে বন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী কাইল্যা পলাশের সঙ্গেও মুরাদ-মানিকের যোগাযোগ আছে।

কারাগারে থেকেই যুবলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কাছে পদ পাওয়ার জন্য তদবির করে কাইল্যা পলাশ। পরে নিজে পদ না পেয়ে আরমানের জন্য সুপারিশ করে। আরমানের সঙ্গে সম্রাটেরও ভালো সম্পর্ক ছিল।

তাছাড়া জিসানের সঙ্গেও তার ভালো সম্পর্ক ছিল। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ সব অবৈধ আয়ের একটি ভাগ সম্রাট জিসানকে পাঠাত। জিসানের অনুরোধে মিল্কী এবং তারেককে দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক করেন সম্রাট।

প্রসঙ্গত, ১৮ অক্টোবর ক্যাসিনো, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার ঘটনায় খালেদ মাহমুদ গ্রেপ্তার হন। ২০ অক্টোবর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন জি কে শামীম। 

এ দু’জনকে গ্রেপ্তারের পর ব্যাপক আলোচনায় আসে সম্রাটের নাম। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সহযোগী আরমানসহ সম্রাটকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

৭ অক্টোবর র‌্যাব-১-এর ডিএডি আবদুল খালেক বাদী হয়ে রমনা থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনের এ দুটি মামলা করেন। দুই মামলায় আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত সম্রাটকে ১০ দিনের এবং আরমানের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

 

Bootstrap Image Preview