Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাসচালক বাবা, টিউশনি করে নিজ চেষ্টায় বুয়েটে ভর্তি হন খুনী শামিম!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:২২ PM
আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:২২ PM

bdmorning Image Preview


বাবা বাসচালক, মা সাধারণ গৃহিণী। অভাবের পরিবারে নিজেই নিজের পড়ার খরচ চালিয়েছেন টিউশনি করে। ভর্তি হয়েছেন অনেকের স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই ছেলে পাল্টে গেলেন রাতারাতি। নাম লেখালেন খুনের মামলায়। 

পরিবারের কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও শান্ত ছেলে শামীম বিল্লাহ বুয়েটে পড়তে গিয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হন।

বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা মামলার আসামি শামীম বিল্লাহ (২১) ছোটবেলা থেকে মেধাবী, ভদ্র ও শান্ত প্রকৃতির ছিলেন বলে জানা গেছে।

৬ অক্টোবর ছাত্রলীগের নৃশংস নির্যাতনের শিকার হয়ে মধ্যরাতে বুয়েটের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ (২১) নিহত হন।

এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটির ১৪ নং আসামি শামীম।

জানা গেছে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের ইছাকুড় গ্রামের বাসচালক বাবা আমিনুর রহমান বাবলুর বড় ছেলে শামীম এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন। এরপর তিনি বুয়েটের মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন।

শুক্রবার বিকালে বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে শামীম বিল্লাহকে শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের খানপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

ইউপি সদস্য সবুর কাগুজি বলেন, শামীমের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। সব মিলিয়ে পাঁচ বিঘা জমি রয়েছে তাদের। তবে শামীম ছোটবেলা থেকেই ছিল অত্যন্ত মেধাবী। বাবা বাসচালক। তারা দুই ভাই-বোন। তার ছোট বোন শ্যামনগর মহসিন ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী।

তিনি জানান, শামীম বিল্লাহ ঢাকায় দুটো টিউশনি করে নিজের পড়াশুনোর খরচ চালাত। পারিবারিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় নিজের লেখাপড়ার খরচ নিজেই জোগাড় করত। সপ্তাহখানেক আগে প্রায় আড়াই লাখ টাকা দিয়ে একটি মোটরসাইকেল কিনেছে শামীম। ছোটবেলা থেকে খুব শান্ত প্রকৃতির ছিল শামীম। কখনো কারো সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে বলে শুনিনি। তার পরিবার রাজনীতির সঙ্গে সেভাবে জড়িত না থাকলেও শামীম বুয়েটে গিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।

সরেজমিনে শামীমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রেপ্তারের পর মা সালিমা খাতুন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, বেশ কয়েকবার অচেতন হয়ে গেছেন। তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে বাবা আমিনুর রহমান বাবলু বাড়িতে নেই। তার ফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

শামীমের দাদা আতিয়ার রহমান সরদার বলেন, আমাদের পরিবারের কেউ রাজনীতি করে না। শামীম বুয়েটের মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত ৯ তারিখে রাতে ঢাকা থেকে বাড়ি আসে শামীম। বুয়েটে ছাত্রলীগের বড় ভাইদের সঙ্গে মিশত সে।

তিনি দাবি করেন, ছাত্রলীগের বড় ভাইয়েরা আবরারকে মেরেছে। শামীমকে ডেকে নিয়েছিল, কিন্তু সে আবরারকে মারেনি।

তিনি বলেন, হত্যার ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের শাস্তি আমিও চাই। একই সঙ্গে এটাও চাই যেন নিরপরাধ কেউ শাস্তি না পায়।
গ্রেপ্তার শামীম বিল্লাহ্’র বিষয়ে শ্যামনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আনিসুর রহমান মোল্লা বলেন, শুক্রবার বিকালে শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের খানপুর গ্রাম থেকে আবরার হত্যা মামলার আসামি শামীম বিল্লাহকে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে। আটকের পর তাকে নিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসে গোয়েন্দা পুলিশের দল।

রোববার শামীম বিল্লাহর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। 

শামীমের আইনজীবী বলেন, তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। দুর্ভাগ্যক্রমে তাকে মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। পাশের রুম থেকে আসার পথে দ্বিতীয় ভিডিও ফুটেজে তাকে দেখা গেছে। এ মামলায় ঘটনাস্থল থেকে যারা গ্রেপ্তার হয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে শামীমের বিরুদ্ধে তারা কিছু বলে নাই। মামলাটির তদন্ত চলছে। নিরপেক্ষ তদন্ত হয়ে আসুক। এ অবস্থায় শামীমের রিমান্ড বাতিলের প্রার্থনা করছি। প্রয়োজনে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।

তথ্যসূত্র: ইউএনবি।

Bootstrap Image Preview