Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

জার্মানির পর এবার তুরস্কে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করল ফ্রান্স

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ১১:০৮ AM
আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ১১:০৮ AM

bdmorning Image Preview


মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের চলমান অভিযানে নিহতের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলছে। শনিবার (১২ অক্টোবর) পর্যন্ত অন্তত ৪১৫ জন কুর্দি সেনাকে ‘নিউট্রালাইজ’ করেছে তুরস্ক। কোনো সন্ত্রাসীকে হত্যা, আটক বা কোনো সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণ করলে তুরস্ক নিউট্রালাইজ শব্দটি ব্যবহার করে। তুর্কি জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। 

তুরস্কের চলমান অভিযানকে আগ্রাসনের তকমা দিয়ে দেশটির কাছে সবধরনের অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপের আরেক দেশ ফ্রান্স। এর আগে একই অভিযোগে জার্মানিও অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। ফরাসি প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, তারা পূর্বপরিকল্পিত অস্ত্র বিক্রি স্থগিত রাখছে। 

ফ্রান্সের দাবি, তুরস্কের কাছে আর তারা এমন কোনো যুদ্ধ সরঞ্জাম বিক্রি করবে না; যা সিরিয়ায় চলমান অভিযানে ব্যবহার করা হতে পারে।

এর প্রায় কয়েক ঘণ্টা আগেই ঠিক একই রকম ঘোষণা দিয়েছিল জার্মানি। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো ম্যাস বলেছিলেন, ‘আমরা তুরস্কের কাছে নতুন করে কোনো অস্ত্র রপ্তানির অনুমোদন ইস্যু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের তুর্কি সেনাদের অভিযান চালানোর বিষয়টিরও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই না জার্মানির কাছ থেকে কেনা অস্ত্র সিরিয়ার সাধারণ কুর্দি নাগরিকদের হত্যার উদ্দেশ্যে ব্যবহার হোক। মূলত এ কারণেই তুরস্কে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

যেসব দেশে জার্মানি অস্ত্র বিক্রি করে সেগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে তুরস্ক। গত দেড় বছরে তুরস্কের কাছে প্রায় ২৪০ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করেছে জার্মানি।

জবাবে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেছেন, ‘এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন। অস্ত্র নিষেধাজ্ঞায় শত্রুপক্ষই শক্তিশালী হবে। আমাদের মিত্ররা যদি সন্ত্রাসীদের সমর্থন করে। আমাদের সঙ্গে যদি কেউ না থাকে, আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা তা হলেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলবে।’

এ দিকে অবিলম্বে এই সেনা অভিযান বন্ধ করার জন্য তুর্কি প্রশাসনকে এরই মধ্যে অনুরোধ জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ ইরান। তাছাড়া তুরস্কের এই আগ্রাসন ভালোভাবে নিচ্ছে না ভারত, ইতালির মতো বহু দেশ। এমনকি সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। তবে এশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র পাকিস্তানের সমর্থন কিন্তু তুর্কি প্রশাসনের প্রতিই আছে।

এত কিছুর পরও এরদোগান কিন্তু একরোখা। নিজের টুইট পোস্টে ‘পিস স্প্রিং’ (শান্তির বসন্ত) আনার কথা উল্লেখ করে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থানরত কুর্দিবাহিনীর বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু করেছেন তিনি।

কোনো দেশের পরোয়া না করে গত শুক্রবার (১১ অক্টোবর) উল্টো ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) হুমকি দিয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘তুরস্কের এই অভিযানকে আগ্রাসনের তকমা দেওয়া হলে আঙ্কারা থেকে অবিলম্বে ৩৫ লক্ষাধিক শরণার্থীকে সরাসরি ইউরোপেই ফেরত পাঠানো হবে।’

অপর দিকে সিরিয়ার কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে তুর্কি হামলা অব্যাহত থাকায় দেশটির ওপর অচিরেই এক বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এমনকি ন্যাটো বাহিনীতে তুরস্কের সদস্য পদ থাকা নিয়েও এবার আলোচনা শুরু হয়েছে বলে এরই মধ্যে দাবি করেছে ইউরোপের দেশ ফ্রান্স। খবর ‘ব্লুমবার্গে’র।

ফরাসি ইইউ বিষয়ক মন্ত্রী এমিলি ‘দ্য মনতচালিন’ গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ এক বৈঠকে চলমান তুর্কি আগ্রাসনের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। যদিও এই একই ইস্যুতে ফিনল্যান্ড এবং নরওয়ে এরই মধ্যে তুর্কি প্রশাসনের কাছে নিজেদের সমরাস্ত্র বিক্রি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

এর আগে গত বুধবার (৯ অক্টোবর) সিরিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন সমর্থিত কুর্দি বাহিনীর ওপর সশস্ত্র অভিযান শুরু করে তুরস্ক। যা এখনো অব্যাহত আছে।

Bootstrap Image Preview