বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর কারও দাবি দাওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। তারপরও আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (১২ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে মহিলা শ্রমিক লীগের জাতীয় সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুয়েটে হত্যাকাণ্ডের খবর শোনার পর আমি কোনো আন্দোলনের অপেক্ষা করিনি। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার কর।ভিডিও ফুটেজ থেকে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ কর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ রাখতে হবে। তবে তারা বুয়েটে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করার সময় বাধার মুখে পড়ে। এটা কেন জানি না।
বাংলাদেশে নারীদের অগ্রগতি এবং এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, নারীদের আসল স্থান তৈরি করে নেওয়ার কাজটা নারীদেরই করতে হবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি ও গ্যাস নিয়ে সাম্প্রতিক চুক্তিগুলোর বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা কাজ করছি। বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবো, কারও কাছে মাথা নিচু করে নয়।
তিনি বলেন, যদি ন্যায্য অধিকার আদায় করে থাকি আমি শেখ হাসিনাই করেছি। লাভ লোকসান হিসাব করলে বাংলাদেশেরই লাভ বেশি।
ত্রিপুরার সঙ্গে ফেনী নদীর পানি বন্টন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙার ভগবানটিলায় ফেনী নদীর উৎপত্তি। সেটার বেশিরভাগই সীমান্তে। ভারতের ওই অংশের মানুষের পান করার পানির অভাব। এছাড়া বর্ডারের পানিতে দুই দেশেরই সমান অধিকার। আর এখানে তো পুরোটাই সীমান্তে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরা আমাদের সাহায্য করেছিল। আশ্রয় দিয়েছিল। এটা তো ভুলে যেতে পারি না।
ভারতে এলপিজি রফতানি বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আমদানি করে আনা এবং দেশে উৎপাদিত কিছু এলপিজি বোতলজাত করে রফতারি করবো। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রফতানির একটা পণ্য বাড়ছে। আর দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য অনেকগুলো কোম্পানি কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, কিছু হলেই বলে এই সরকার ভোটের মাধ্যমে আসেনি। ভোটেই যদি নির্বাচিত না হতাম, বিরোধী দল এতদিন টেনে নামিয়ে দিতো। ১৯৯৬ সালে যেমন হয়েছিল। আমাদের সময়ও বিএনপি কয়েকটি সিট পেয়েছে। উপনির্বাচনে পাস করেছে। কোনও ইলেকশন নিয়ে আমরা তো কোনও কথা বলিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরে নির্যাতনের শিকার মেয়েদের উদ্ধার করে তাদের সেবাযত্ন ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এখন সমাজ অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কেউ নির্যাতনের শিকার হলে মুখ ফুটে বলতে পারে। একাত্তরে সেই পরিস্থিতি ছিল না। সে সময় বঙ্গবন্ধু তাদের পুনর্বাসন করেন। প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে যাতে নারীর অবস্থান থাকে সেজন্য নারীর জন্য ১০ শতাংশ কোটা করে দেন বঙ্গবন্ধু। একটা সমাজ নারীকে ছাড়া একা উঠে দাঁড়াতে পারে না। এর জন্য শিক্ষারও প্রয়োজন। নারী শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়ার জন্য অবৈতনিক করে দেওয়া হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেয়েদের কর্মসংস্থান যাতে বেশি হয়, সে দিকে আমরা দৃষ্টি দিয়েছি। ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত সম্পূর্ণ অবৈতনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কর্মক্ষেত্রে সব জায়গায় যেন মেয়েদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং- এই লক্ষ্য থেকে ছেলে-মেয়ে সবাইকেই প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, যারা গৃহহীন তাদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্প শুরু করি। স্বামী-স্ত্রী দুজনের নামে ঘর দেওয়া হয়। তবে অগ্রাধিকার পাবে স্ত্রী। হাসতে হাসতে তিনি বলেন, কারণ নতুন ঘর পেয়ে যদি কেউ নতুন বৌ চায়!
শেখ হাসিনা বলেন, ৮৪ লাখের মতো মানুষ বিভিন্ন ধরনের ভাতা পাচ্ছে। বিধবা, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, অবহেলিত শ্রেণির সবার জন্য যতটা কাজ করা দরকার আমরা করছি।
তিনি বলেন, নারীদের জন্য কাজ করার উদ্দেশ্যে জয়িতা ফাউন্ডেশন নামে একটা ফাউন্ডেশন করে দিয়েছি। যারা ভালো কাজ করে তারা জয়িতা পুরস্কারও পায়।যেহেতু মেয়েরা কাজ করে তাদের থাকার সমস্যা হয়। তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। নারীদের জন্য কর্মজীবী হোস্টেল হচ্ছে। জাতীয় শ্রমনীতি করে দিয়েছি। সব কর্মক্ষেত্রে শিশুযত্ন কেন্দ্র করে দিতে বলেছি।
সরকারপ্রধান বলেন, নারীরা বিদেশে যাচ্ছে কাজ করতে। তাদের জন্য ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ঘরবাড়ি যাতে বিক্রি করতে না হয় সেজন্য প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক করে দিয়েছি, যাতে ঋণ নিয়ে বিদেশ যেতে পারে। এসএমই ফাউন্ডেশনে মেয়েদের জন্য বিশেষ সুবিধা আছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে নারীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে। সবক্ষেত্রে মেয়েরা যেন প্রতিযোগিতা করতে পারে সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই।
তিনি বলেন, খেলাধুলায়ও মেয়েরা চমৎকার করছে। সুযোগ পেলে তারাও যে ভালো করতে পারে সেটা প্রমাণিত হয়েছে। মেয়েরা এখন সব ধরনের কাজই করতে পারে। আমাদের মেয়েরাও কোনোদিকে কম যায় না। পরে প্রধানমন্ত্রী মহিলা শ্রমিক লীগের সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।