Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শিক্ষা অফিসারের সীমাহীন দুর্নীতির প্রমাণ পেল তদন্ত কমিটি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০১৯, ০৭:৫২ PM
আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৯, ০৭:৫২ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুনের আর্থিক অনিয়ম এবং দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে গঠিত এক সদস্যের তদন্ত কমিটি বুধবার দিনভর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুন এবং উচ্চমান সহকারী গোলজার হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করে দুর্নীতির প্রমাণ পায়।

উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও হয়রানির বিষয় তদন্ত কমিটির কাছে তুলে ধরেন বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ভুক্তভোগীরা। 

ভুক্তভোগী এবং তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা যায়, উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে।আগামী রোববার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে কমিটি।

ভুক্তভোগী শিক্ষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেশব্যাপী দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শুদ্ধি অভিযানেও সাঁথিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুনের অবস্থান নড়েনি। অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং বিভাগীয় উপ-পরিচালকের পাঠানো শাস্তির সুপারিশও ওই শিক্ষা অফিসারের তদবিরের কাছে বাতিল হয়ে যায়।

উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, সাঁথিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুনের অনিয়ম এবং ঘুষ-দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

অফিসে বসে উচ্চমান সহকারী গোলজার হোসেনের ঘুষ নেয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার আগেই শিক্ষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুনের বিরুদ্ধে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে তদন্ত করা হয়। এতে তার অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া যায়। ৬ আগস্ট তার শাস্তির সুপারিশ করে মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার।

এ ঘটনায় রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক উচ্চমান সহকারী গোলজার হোসেনকে সাঁথিয়া থেকে বদলি করেন জয়পুরহাট জেলায় এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসারের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি দেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। এর আগে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারও উপজেলা শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে চিঠি দেন অফিসে। কিন্তু জোর তদবিরের কারণে এখন পর্যন্ত মর্জিনা খাতুনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। ফলে বহাল তবিয়তে রয়েছেন মর্জিনা খাতুন।

এ অবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর পাবনার পিটিআইয়ের সুপার সুভাষ কুমার বিশ্বাসকে দিয়ে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ২৬ সেপ্টেম্বর অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সৈয়দা মাহফুজা বেগম স্বাক্ষরিত চিঠিতে তদন্ত কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা সুভাষ কুমার বিশ্বাস বলেন, বুধবার দিনভর সাঁথিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসে একাধিক প্রধান শিক্ষকসহ ভুক্তভোগীদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুন এবং উচ্চমান সহকারী গোলজার হোসেনের অনিয়ম ও ঘুষগ্রহণসহ অন্যান্য বিষয়ের প্রমাণ মিলেছে।আগামী রোববার অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দেয়া হবে।

বৃহস্পতিবার কথা হয় কয়েকজন ভুক্তভোগী শিক্ষকের সঙ্গে। সাঁথিয়া উপজেলার সোনাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুন এবং উচ্চমান সহকারী গোলজার হোসেনের অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং হয়রানির বিষয়ে তদন্ত কমিটির কাছে প্রমাণ দিয়েছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘুষ না দেয়ায় সাঁথিয়া উপজেলার ১৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্লিপ প্রোগামের টাকা ছাড় দেননি শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুন। গত ৩০ জুনের মধ্যে এসব টাকা ছাড়ের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তিনি সরকারি বিধি লঙ্ঘন করেছেন। ১৭৫টি বিদ্যালয়ের বিপরীতে বরাদ্দকৃত স্লিপসহ ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা অবৈধভাবে নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়েছেন তিনি। এখন বিদ্যালয় প্রতি ছয় থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে বরাদ্দ ছাড়ছেন মর্জিনা খাতুন।

যেসব বিদ্যালয় ঘুষ দিতে অস্বীকার করছে তাদের টাকা আটকে রেখেছেন তিনি। শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে অফিসের ‘বড় বাবু’ নামে পরিচিত উচ্চমান সহকারী গোলজার হোসেন ঘুষের এসব টাকা নিচ্ছেন। এরই মধ্যে প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার খন্দকার মনসুর রহমান বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুনের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ। তার অনিয়মের জন্য কয়েক দফা মৌখিক সতর্কসহ লিখিত কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করে মহা-পরিচালকের অফিসে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

মর্জিনা খাতুন বহাল তবিয়তে থাকায় এবং তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে পাবনা জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শিবজিত নাগ বলেন, এটি দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে একটি হতাশাব্যঞ্জক ঘটনা।

Bootstrap Image Preview