Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বুয়েট চাইলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে: প্রধানমন্ত্রী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ০৬:২৫ PM
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ০৬:২৫ PM

bdmorning Image Preview


অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নেই, তবে বুয়েট মনে করলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (৯ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সম্প্রতি ভারত ও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়া নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বুয়েটের কমিটি আছে, তারা যদি মনে করে বন্ধ (ছাত্ররাজনীতি) করে দিতে পারে। এখানে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করব না। এই যে ছেলেটাকে (বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ) হত্যা করল, এটা তো কোনো রাজনীতি না। বসুনিয়াকে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রাউফুন বসুনিয়া) যে হত্যা করেছিল সেটা রাজনৈতিকভাবে।’

ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি ব্যান করে দিতে হবে- এটা তো মিলিটারি ডিক্টেটরদের কথা। এখানে রাজনীতিটা কোথায়? এর কারণটা কোথায়? এটা খুঁজে খুঁজে বের করতে হবে।’

দেশের স্বার্থ শেখ হাসিনা বিক্রি করবে তা হতে পারে না:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ভারতকে যে গ্যাস দেব তা আমাদের নিজেদের গ্যাস নয়। আমরা দেশের কোনো প্রাকৃতিক গ্যাস ভারতকে দিচ্ছি না। তিনি বলেন, এলপিজি প্রাকৃতিক গ্যাস নয়। আমরা আমদানি করে এ গ্যাস ভারতকে দিচ্ছি। যার ফলে আমাদের রপ্তানি তালিকায় আরো একটা আইটেম যুক্ত হচ্ছে। এতে দেশের কোনো স্বার্থ ক্ষুন্ন হচ্ছে না।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতেই আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি। এটা আমরা উন্মুক্ত করে দেয়ায় অল্প দামে পাওয়া যাচ্ছে। দেশে বর্তমানে ২৬টি কোম্পানি কাজ করছে। ১৮টি কোম্পানি গ্যাস উৎপাদন করছে। আমরা আমদানি করে সে গ্যাসই ত্রিপুরায় দিচ্ছি। এখানে আমাদেরই লাভ হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে কতো গ্যাস আছে, সেটা গবেষণা করে না বের করা পর্যন্ত আমি বিক্রি করতে পারি না। আমি দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো কাজ করতে পারি না।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলেও আমি একই কথা বলেছিলাম। একদল গবেষক সার্ভে করে জানিয়েছিলো প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রি করা যাবে। আমি তখন সঠিক তথ্য জানতে চাইলে গবেষকদল কতো গ্যাস আছে তা সঠিকভাবে বলতে পারেনি।

বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ শেখ হাসিনা বিক্রি করবে তা কখনো হতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ত্রিপুরা থেকে আমরা বিদ্যুৎ কিনছি। ভারতের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক অনেক আগে থেকেই। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ত্রিপুরা কিছু চাইলে আমাদের তাদের দিতে হবে। ১৯৭১ সালে আমাদের লোকেদের ত্রিপুরা তাদের আশ্রয় দিয়েছিলো। ওই অঞ্চল আমাদের জন্য বিরাট একটা শক্তি ছিলো। খুব স্বাভাবিকভাবে তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলো, থাকবে।

অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে

বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যায় অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। তারা কোন দলের বা কি কিছু দেখা হবে না। অপরাধী- অপরাধীই। পরিবার হারানো কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তো বাপ-মা, ভাই-বোন, সব হারিয়েছি। আমি তো কষ্টটা বুঝি। একটা মেধাবী ছাত্র (আবরার) হারালে মায়ের যে কি কষ্ট আমি বুঝি।

তিনি বলেন, কেউ যদি কোনো অপরাধ করে, সে যে দলই করুক না কেনো তার বিচার হবে। আমি ঘটনা শুনে তখনই সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে বলেছিলাম। যখন পুলিশ সিসিটিভি নিয়ে আসছে তখন তাদের ঘেরাও করা হলো। তাদের ফুটেজ নিয়ে আসতে দেয়া হবে না। আমাকে জানানো হলো ফুটেজ নিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। আমার প্রশ্ন ছাত্ররা তাদের আটকে দিলো কেনো?

তিনি যোগ করেন, এরপর আমি যাদের ফুটেজে দেখা গেছে- তাদের মধ্যে যাদের পেয়েছি তাদের অ্যারেস্ট করিয়েছি। আমি আইজিপিকে বলেছি, যথাযথ ব্যবস্থা নিতে। কে ছাত্রলীগ, কে ছাত্রদল। আমি তা বিবেচনা করি না। কি অমানবিক। একটা ছাত্রকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হলো! এক সময় আমাদের অনেক নেতাকর্মীদের এভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কখনোই অন্যায় মেনে নিব না। আমার দল হলেও কিছু আসে যায়না।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমি আশার পর থেকে চেষ্টা করছি ক্যাম্পাসগুলোতে এ ঘটনা যেনো না ঘটে। একটা সময় দুপুর দুইটার পর ঢাবিতে ক্লাসই হতো হতো না। ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসছে। যে অন্যায় করেছে সে অন্যায়কারী। গ্রেপ্তার শুরু হয়ে গেছে।

সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিযান

সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি হলের সবগুলো রুম সার্চ করা হবে। কোন হলে কারা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলতা করছে তাদের ধরা হবে। কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আবরার হত্যা প্রসঙ্গে তিনি এই মন্তব্য করেছেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের খরচে হলে বসে জমিদারি চলবে না। আমি কোনো দলটল দেখব না।

‘ফুটেজ সংগ্রহে বাধা দিল কারা?’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে যারা ‘পিটিয়ে পিটিয়ে অমানবিকভাবে’ হত্যা করেছে, তাদের কঠিনতম শাস্তি হবে।

বুধবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “কেউ যদি কোনো অপরাধ করে, সে কোন দল, কী করে না করে, আমি কিন্তু সেটা দেখি না। আমার কাছে অপরাধী অপরাধীই। আমরা অপরাধী হিসেবেই দেখি।”

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বুয়েটে যে ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনা খুব সকাল বেলা জানার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলাম আলামত সংগ্রহ করার জন্য। সাথে সাথে এটাও বলেছিলাম যে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে। তারা সেখানে পৌঁছে যায়। আলামত সংগ্রহ করে এবং সিসিটিভি ফুটেজগুলো দীর্ঘসময় ধরে সংগ্রহ করে।

“যখন পুলিশ সিসি ক্যামেরা থেকে ফুটেজ হার্ডডিস্কে নিয়ে আসছে তখন তাদেরকে ঘেরাও করা হল। তাদেরকে ফুটেজ নিয়ে আসতে দেওয়া হবে না। আইজিপি যোগাযোগ করল, বলল, ‘আমাদের লোকদের আটকে রেখে দিয়েছে। আলামত নিয়ে আসতে দিচ্ছে না’।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ফুটেজগুলো আনতে দেবে না কেন? তারা বলছে, ফুটেজগুলো পুলিশ নষ্ট করবে। পুলিশ গেছে আলামত সংগ্রহ করতে। ডেডবডির যাতে পোস্টমর্টেম হয়, সে ব্যবস্থা করা হল। ছাত্ররা নামার আগেই সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া… কোন রুম, কোথায়, কারা ছিলো যেটাকে পারো সবকটাকে ধরে অ্যারেস্ট করো। যে কটাকে হাতে পেয়েছি সবগুলোকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে।“

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখানে প্রশ্নটা আমার। পুলিশকে আসতে দেবে না, আলামত নিতে দেবে না। আমি আইজিকে বললাম, বলা যায় না এর মধ্যে কী যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তারা আছে? ফুটেজ পেলে পরে তারা ধরা পড়ে যাবে এজন্য তারা… পরবর্তীতে এই ফুটেজগুলো সংগ্রহ করে এবং একটা কপি কর্তৃপক্ষকে দিয়ে আসে। সেগুলো দেখে আইডেসিন্টফাই করা দরকার ছিল, যেটা করা হচ্ছে এখন।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কে ছাত্রলীগ, কে ছাত্রদল কে, কী করে আমি সেটা বিবেচনা করিনি। আমি বিবেচনা করেছি… অন্যায়ভাবে একটা বাচ্চা ছেলে ২১ বছরের ছেলে পিটিয়ে পিটিয়ে… কি অমানবিক!

“পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখেছেন। বাইরে অত ইনজুরি নেই, সমস্ত ইনজুরি ভিতরে। যে জিনিসটা আমার মনে পড়ল… ২০০১ সালে বহু নেতা-কর্মীকে এমনভাবে পিটানো হত, বাইরে থেকে ইনজুরি নেই, তারা মারা যেত।”

শেখ হাসিনা বলেন, “স্বাভাবিকভাবে এটা সন্দেহের বিষয়। এরা কারা? হ্যাঁ, ক্ষমতায় থাকলে অনেকে দল করতে আসে। কিছু লোকতো আছে পার্মানেন্ট গভর্মেন্ট পার্টি।… এরকম কিছু থাকে। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটায় তারা আমার পার্টির এটাতো আমি কখনোই মেনে নেব না। আমি সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগকে ডেকেছি। সবগুলোকে বহিষ্কার করতে বলেছি। পুলিশকে বলেছি অ্যারেস্ট করতে। ”

কারা পুলিশকে ফুটেজ নিতে বাধা দিয়েছে, তা খুঁজে দেখতে বলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ফুটেজ হাতে পাওয়ার পর বেছে বেছে বের করতে পুলিশের জন্য সুবিধা হয়েছে। এটা একটু খোঁজ করেন, কেন বাধা দেওয়া হল। তিনটে ঘণ্টা সময় কেন নষ্ট করল? আমি জানি না এর উত্তর আছে কিনা। আন্দোলনই বা কিসের জন্য? বিচার হবেই।”

ভারতকে সামান্য পানি দিচ্ছি, এতে হইচই করার কী আছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ফেনী নদীর উৎপত্তি বাংলাদেশের খাগড়াছড়িতে হলেও এ নদীর বেশিরভাগ ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এটি একটি আন্তর্জাতিক নদী। আমরা সামান্য ১ দশমিক ১২ কিউসিক পানি দিচ্ছি ভারতকে। এ নিয়ে হইচই করার কী আছে?’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতে গ্যাস রফতানির বিষয়ের প্রসঙ্গ তুলে যে সমালোচনা করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। বিদেশ থেকে আমদানি করা তরল গ্যাস বোতলজাত করে ত্রিপুরায় রফতানি করার পরিকল্পনা হয়েছে। এটি তো দেশের স্বার্থেই করা। ব্যবসায়ীদের জন্য বিনিয়োগ উন্মুক্ত করা হয়েছে। তারা বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করে বোতলজাত করছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতে গ্যাস রফতানির বিষয়ের প্রসঙ্গ তুলে যে সমালোচনা করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। বিদেশ থেকে আমদানি করা তরল গ্যাস বোতলজাত করে ত্রিপুরায় রফতানি করার পরিকল্পনা হয়েছে। এটি তো দেশের স্বার্থেই করা। ব্যবসায়ীদের জন্য বিনিয়োগ উন্মুক্ত করা হয়েছে। তারা বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করে বোতলজাত করছে।

অন্যদিকে আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের খনি থেকে কিছু তেল উৎপাদন হয়, যা থেকে অকটেন, পেট্রল এবং তরল গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে। এই তরল গ্যাসই রফতানি করার পরিকল্পনা হচ্ছে। এখানে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে নয়।’

ভারতের সঙ্গে ফেনী নদীর পানিবণ্টনের চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ত্রিপুরায় যে পানি দেয়া হচ্ছে, তা হচ্ছে খাবার পানি। কেউ খাবার পানি চাইলে, তা যদি না দিই, তাহলে কেমন হয়!’

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা আমাদের ঐতিহাসিক বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার মানুষ আমাদের আগলে রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে। সেই ত্রিপুরায় সামান্য খাবার পানি দেয়ার জন্য আপত্তি থাকতে পারে না।

Bootstrap Image Preview