Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

শিক্ষকদের সম্মান করে না ৬৪ শতাংশ ছাত্রছাত্রী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:১৭ PM
আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:১৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


ছোটবেলা থেকেই আমাদের সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা নিয়ে শিক্ষা দেয়া হয়। শিক্ষকের সম্মান পিতা মাতার সমতুল্যই ধরে নেয়া হয়। ধর্মীয় ও সামাজিক ভাবে শিক্ষকের সম্মান এবং মর্যাদার বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। 

কাজী কাদের নেওয়াজের “শিক্ষাগুরুর মর্যাদা” কবিতাটিতে শিক্ষকের মর্যাদার উপর আলোকপাত করতে গিয়ে কবি দিল্লির বাদশাহ্ এবং তার পুত্রের উদাহরণ এনেছেন। শিক্ষকের পা ধুয়ে না দিয়ে শুধু পানি ঢেলে শাহজাদা যে বেয়াদবি করেছিলেন তার জন্য ক্ষমা চেয়ে শিক্ষকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেন।

শিক্ষকের সম্মানের এমন হাজারো দৃষ্টান্ত রয়েছে আমাদের সমাজে। কিন্তু সম্প্রতি ছাত্রশিক্ষকের এমন শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্কে চিড় ধরতেও দেখা যাচ্ছে। শিক্ষকের ‘অতিশাসনে’ ছাত্র-ছাত্রী স্কুল ছাড়ছে, কখনো কখনো আত্মহত্যা পর্যন্ত করছে।

শিক্ষকরাও আবার ছাত্রদের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছেন। শিক্ষককে দেখার পর শ্রদ্ধা জানাতে এগিয়ে না এসে, জল্লাদের মতো ভয় পেয়ে পালিয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। এভাবে ছাত্রদের কাছে সম্মান হারাচ্ছেন শিক্ষকরা। সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা কারণে অপদস্থ হচ্ছেন শিক্ষকরা।

আন্তর্জাতিক এক জরিপেও এমন তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোনোমিক্স এন্ড সোসাল সিসাচ এবং ভারকি ফাউন্ডেশনের ‘গ্লোবাল টিসার্চ স্ট্যাটাস ইনডেক্সে-২০১৮’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয় বিশ্বে গড়ে ৩৬ শতাংশ ছাত্রছাত্রী তাদের গুরুজনকে সম্মান করেন।

এছাড়া শিক্ষকতা পেশাও সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদা হারাচ্ছে অনেক উন্নত দেশে। যদিও ওই জরিপে বাংলাদেশকে দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি।

জীবিকার প্রয়োজনে সমাজে সৃষ্টি হয়েছে নানা শ্রেণী ও পেশার। একই সমাজে জন্মগ্রহণ করে কেউ পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন চিকিংসা, কেউ কৃষি, কেউ ব্যবসা আবার কেউ শিক্ষকতা। এছাড়া আরো কত পেশা। কোন কোন পেশা ব্যক্তিকে জীবিকা যোগানের পাশাপাশি অন্য পেশাজীবীদের কাছে করে তোলে অনন্য এবং গ্রহণযোগ্য। তেমনই একটি পেশা শিক্ষকতা।

জরিপে বলা হয়, বিশ্বের মধ্যে এশিয়ার দেশগুলোতে শিক্ষকতা পেশা সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে। চীনে এই পেশা সবচেয়ে বেশি মর্যাদার। এর পরেই রয়েছে মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, ভারত, নিউজিল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুর।

বিশ্বের ৩৫ দেশের উপর জরিপ চালিয়ে এই র‌্যাংকিং তৈরী করে গবেষণা পরিচালনাকরী সংস্থাগুলো। জরিপে ৩৫ হাজার অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন- চীনের ৮১ শতাংশ ছাত্রছাত্রী তাদের শিক্ষককে সম্মন করে থাকেন। যেখানে সারা বিশ্বে গড়ে ৩৬ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী তাদের শিক্ষককে সম্মান করে থাকেন।

আন্তর্জাতিক ওই গবেষণায় বলা হয়, শিক্ষকরা যদি উচ্চ মর্যাদায় ভূষিত হতে চান, তবে তাদের উচিত হবে চীন, মালয়েশিয়া, তাইওয়ানের ক্লাস রুমগুলোতে কাজ করা। কারণ এসব দেশে শিক্ষকতা পেশা সর্বোচ্চ সম্মানিত। তবে শিক্ষকতা পেশার জন্য মোটেও যুতসই নয় ব্রাজিল, ইসরাইল এবং ইতালি। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং জার্মানির চেয়ে যুক্তরাজ্যের শিক্ষকদের মর্যাদা কিছুটা ভাল। র‌্যাংকিংয়ে মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে এই দেশটি।

শিক্ষকদের সম্মান জানানোর এই সংস্কৃতি পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এশিয়ার দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি। এসব দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাতেও ভাল অবস্থান অর্জনের নজির স্থাপন করছেন।

ভারকি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সানি ভারকি জানান, সমাজে শিক্ষকের অবস্থান ও মর্যাদা এবং স্কুলে সন্তানদের লেখাপড়ার অগ্রগতির মধ্যে একটা সম্পর্ক রয়েছে। যেটা এই গবেষণার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তাই শিক্ষকদের সম্মান করা শুধু একটি নৈতিক দায়িত্বিই নয়, দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ফলাফলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

এই পেশার অবস্থান মূল্যায়নে জরিপে আরো একটি বিষয়ে নজর দেয় গবেষকদল। পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের এই পেশায় দেখতে চান কিনা এমন প্রশ্ন করা হয় উত্তরদাতাদের। এর উত্তরে দেখা যায়, চীন, ভারত ও ঘানার বাবা-মা তাদের সন্তানের জন্য শিক্ষকতা পেশাকে বেশি পছন্দ করেন। কিন্তু রাশিয়া, ইসরাইল ও জাপানের অভিভাবকরা সক্রিয়ভাবে তাদের সন্তানদের শিক্ষকতা পেশায় নিরুৎসাহিত করেন।

সন্তানকে শিক্ষকতা পেশায় দেশতে চায় এমন দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের অবস্থান নবম। এই দেশের ২৩ শতাংশ বাবা-মা চান তাদের সন্তান বড় হয়ে শিক্ষকতা পেশা বেছে নিক।

Bootstrap Image Preview