Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাসে ২০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৫:৩১ PM
আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৫:৩১ PM

bdmorning Image Preview


নিয়ন্ত্রণহীন-বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও মাস্তানি চলছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থান করা মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায়। উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে গড়ে ওঠা অর্ধলক্ষাধিক দোকানপাট ও নানা স্থাপনায় চলছে প্রায় প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি।

স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ও রোহিঙ্গা ‘মাঝি’ (ক্যাম্পের প্রধান) ও মাস্তানরা মিলে সংঘবদ্ধভাবে মাসোয়ারা আদায়ের মাধ্যমে মাসে অন্তত ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি করছে এখানে। এসব নিয়ে স্থানীয় কেউ বা সাধারণ রোহিঙ্গাদের কেউ প্রতিবাদ বা মুখ খুললেই হত্যা-নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে গত এক সপ্তাহ কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা ঘুরে ও ভুক্তভোগীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

চাঁদাবাজির শিকার একাধিক ভুক্তভোগী রোহিঙ্গা দোকানির বক্তব্যের অডিও রেকর্ড গণমাধ্যমের হাতে এসেছে।

কুতুপালং লম্বাশিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রোহিঙ্গা বসতির মাঝেই রাস্তা সংলগ্ন শত শত সারিবদ্ধ দোকানপাট। যেন বড় কোনো হাটবাজার। এসব সম্পূর্ণভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করছে রোহিঙ্গারা। কী নেই এখানে, জীবন-যাপনে যা যা দরকার সবই পাওয়া যাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। চাল-ডাল তথা মুদি সামগ্রী, কসমেটিক্স, বাসন, ওষুধ, মোবাইল ফোন, ফ্ল্যাক্সি, রেস্টুরেন্ট, ইলেক্ট্রনিক পণ্য, ছুরি-দা, বঁটি, বাঁশ-টিন থেকে শুরু করে সবই পাওয়া যায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দোকানগুলোয়। এসব মালামালও আসছে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে এবং কিছু আসছে কক্সবাজার সদর ও রোহিঙ্গাদের রেশন থেকে। কেনাকাটায় টাকারও অভাব নেই অধিকাংশ রোহিঙ্গার।

কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ও রোহিঙ্গা মাঝি-মাস্তানদের নামে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের এমন নানা অপকর্মের বিষয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত ১২ সেপ্টেম্বর উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়ায় এক নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানপাট টিনের বেড়া ও ছাউনিযুক্ত। মেঝে বেশিরভাগই প্লাস্টার করা। মাঝেমধ্যে কিছু দোকান ইট দিয়েও তৈরি করা হয়েছে। সেখানে কথা হয় মুদি সামগ্রীর এক দোকানির সঙ্গে। যুবক বয়সি ওই রোহিঙ্গা দোকানি সময়ের আলোকে বলেন, তিনি যে দোকান ঘরে ব্যবসা করছেন সেটি নুরুল আমিন নামে এক প্রভাবশালী রোহিঙ্গার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছেন। এ জন্য মাসিক তাকে দিতে হয় আড়াই হাজার টাকা। এ ছাড়া কুতুপালং লম্বাশিয়ার স্থানীয় ইউপি সদস্য বখতিয়ারকেও মাসে দিতে হয় ৫০০ টাকা। এখানকার সব দোকান থেকেই এভাবে ভাড়া বাবদ দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা এবং মেম্বারকে দিতে হয় ৫০০ টাকা করে।

পাশের আরেকটি বাসন সামগ্রীর দোকানের বিক্রেতা সময়ের আলোকে বলেন, তার দোকানের জন্যও মাসে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। এর মধ্যে আড়াই হাজার টাকা রোহিঙ্গা প্রভাবশালীকে এবং মেম্বারকে দিতে হয় ৫০০ টাকা।

তিনি জানান, বখতিয়ার মেম্বারের টাকা উঠানোর দায়িত্ব পালন করেন রিয়াজুল হকসহ আরও কয়েকজন। কুতুপালং, লম্বাশিয়া, বালুখালী, মধুছড়া, ময়নারগুনা, তানজিমারখোলা এবং টেকনাফের জাদিমুরা, শালবন, হ্নীলা ও লেদাসহ বিভিন্ন রোহিঙ্গা বসতি এলাকা ঘুরে জানা যায়, এসব এলাকায় অর্ধলক্ষাধিক দোকানপাট গড়ে তুলেছে রোহিঙ্গারা। যার নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ও ক্যাম্পের ব্লকভিত্তিক ‘মাঝি-মাস্তানরা’। প্রত্যেক দোকান থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৩ হাজার টাকা মাসোয়ারার নামে চাঁদা ওঠে। যা বলতে গেলে মাসে সর্বমোট ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার মতো।

টেকনাফ-উখিয়ার এসব এলাকায় সবুজ বন ও পাহাড় কেটে উজাড় করে রোহিঙ্গা বসতি স্থাপন করা হয়েছে। এর মাঝেই গড়ে উঠেছে অবৈধ সব দোকানপাট। সরকারি পাহাড়ি এসব জায়গা-জমিতে দোকানপাট বসলেও ‘পজিশনের’ দখল সূত্রে বা মালিক দাবি করে প্রভাবশালী ও রোহিঙ্গা চক্র এসব দোকান থেকে মাসিক মাসোয়ারা ওঠাচ্ছে।

‘আমরা কক্সবাজারবাসী’র সমন্বয়ক করিম উল্লাহ কলিম বলেন, রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে কক্সবাজারে স্থানীয় পর্যায়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়াসহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় অনেকেরই জায়গাজমি বেহাত হয়েছে। রোহিঙ্গারা সব দোকানপাট বসিয়েছে। নিজেদের মতো আলাদা একটি ব্যবস্থাপনা গড়েছে তারা। স্থানীয়দের আয়ের বিভিন্ন উৎস বন্ধসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

‘সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, কক্সবাজারে এখন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। রেশনে জীবন যাপনের সবকিছু অতিরিক্ত পাওয়ার পরও ব্যবসায়িক মুনাফার লক্ষ্যে এবং স্থায়ী হওয়ার ভাবনা থেকে রোহিঙ্গারা তাদের ক্যাম্প ঘিরে দোকানপাট বা হাটবাজার বসিয়েছে। সেখানে প্রভাবশালী স্থানীয় ও রোহিঙ্গা চক্র মিলে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম ঘটাচ্ছে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

Bootstrap Image Preview