Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

সাইরেন বাজিয়ে কমান্ডো স্টাইলে গাড়িতে চলতেন জি কে শামীম

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৫৯ AM
আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৫:১১ PM

bdmorning Image Preview


দেহের উচ্চতা পাঁচ ফুটের সামান্য বেশি। সাদামাটা গোছের মানুষটির মাথায় চুল সামান্য। সাধারণ দেখতে এই ব্যক্তিটির কিন্তু নিরাপত্তা বেষ্টনী পুরো রাজকীয়। ৬ ফুট উচ্চতার বিশাল শরীরের রক্ষীরা তার পাহারায়। অর্ধডজন দেহরক্ষী চারপাশে ঘেরাও করে রেখে পাল্টে দিত তার চলার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

অস্ত্রসজ্জিত বিশাল দেহের এই রক্ষী নিয়ে তার চলাচল অনেকটাই কমান্ডো স্টাইলের। তার গাড়ির সামনে পেছনে মোটরসাইকেল ও জিপে চড়া রক্ষীবাহিনীর পাহারায় নিকেতনে আসা-যাওয়া করতেন সাইরেন বাজিয়ে। সঙ্গে থাকতো থাকতো পুলিশের পাহারাও। যেন রাষ্ট্রীয় কোনো বড় মাপের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মুভমেন্ট করছেন।

যার কথা বলছিলাম, তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম। রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত যুবলীগের এই নেতাকে শুক্রবার নিকেতনের কার্যালয় থেকে সাত দেহরক্ষীসহ আটক করে র‌্যাব।

এদিন ভোর ৬টা থেকে সাদা পোশাকে অভিযান শুরু করে র‍্যাব। বিকাল ৪টায় ৩০ মিনিটে অভিযান শেষে শামীমসহ আট জনকে আটক করার বিষয় জানায় র‍্যাব। অভিযানে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার বাণ্ডিল উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ১শ ৬৫ কোটি টাকার ওপরে এফডিআর (স্থায়ী আমানত) পাওয়া যায়। যার মধ্যে যুবলীগ নেতার মায়ের নামে ১শ ৪০ কোটি ও ২৫ কোটি টাকা তার নামে। এ ছাড়া তার কাছে মার্কিন ডলার, মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যায়।

রাজধানীর নিকেতনের যে কার্যালয়ে থেকে যুবলীগের জি কে শামীম র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েন তার পুরোটাই আবাসিক এলাকা। আবাসিক ভবনগুলো প্রতিটিই ৬ থেকে ৭ তলা, একটার সঙ্গে আরকেটা লাগুয়া। শুধু শামীমের ভবনটি (জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড) চার তলা। ভবনটি থেকে অল্প দূরত্বে রয়েছে মসজিদ। এই ভবনের অফিসে কখনও সকালে, কখনও দুপুরে এমনকি গভীর রাতেও আসতেন এই যুবলীগ নেতা।

দিনের যখনই প্রভাবশালী এই ঠিকাদার নিকেতনে ঢুকতেন টের পেয়ে যেতেন আশপাশের সবাই। তার পাহারায় সবসময় তিনটি মোটরসাইকেলে ৬ জন দেহরক্ষী থাকতেন। এই যুবলীগ নেতার গাড়ির সঙ্গে থাকতো আরও দুটি কালো রঙের জিপ গাড়ি। সাইরেন বাজাতে বাজাতে সড়ক দিয়ে গাড়িবহরসহ এগিয়ে যেতেন শামীম। তার গাড়ি গন্তব্যে (অফিসের সামনে) না পৌঁছানো পর্যন্ত সড়কে নামতে পারতো না অন্য কোনো গাড়ি।

প্রভাবশালী এই যুবলীগ নেতার চলাচল সম্পর্কে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে ওই এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে।

জি কে শামীমের নিকেতনের ভবনটির পাশের এক ভবনের কেয়ারটেকার জানান, ‘যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার শামীম সাহেবের চালাচল ছিল পুরো রাজকীয়। তিনি যখন এখানে আসতেন, সবাই টের পেয়ে যেত। বিশাল দেহরক্ষী নিয়ে সাইরেন বাজিয়ে তিনি আসতেন। সবসময় তার সঙ্গে তিনটি মোটরসাইকেলে এক ডজন দেহরক্ষী থাকতেন। এ ছাড়া তার আগে-পিছে কালো রঙের আরও দুটি দামি জিপ গাড়ি চলতো।’

শামীম সাহেবের গাড়ি যখন এখানে আসতো, কেউ সড়কে বের হতে পারতো না বলে জানিয়ে ওই কেয়ারটেকার বলেন, ‘অফিসের সামনে তার গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রসহ দেহরক্ষীরা তার চারদিকে ঘিরে রাখতো। আর সিনেমার স্টাইলে গাড়ি থেকে নামতেন শামীম সাহেব। একবার তার গাড়ি আসার সময় আমাদের স্যারের গাড়ি গ্যারেজ থেকে অর্ধেক রাস্তায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু তার দেহরক্ষীরা আমাদের সেই গাড়ি আবার গ্যারেজে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করেছিল। তার গাড়ি চলে যাওয়ার পর আমাদের গাড়ি বের হয়।’

জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড নামের ভবনটির পাশের আরেকটি বাড়ির কেয়ারটেকার ইসমাইল বলেন, ‘আমি দশ বছর ধরে এখানে আছি। আগে ওই বাসাটা খান সাহেব নামের একজনের ছিল। বছর খানেক আগে খান সাহেবের কাছ থেকে শামীম সাহেব বাড়িটি ক্রয় করেন। শামীম সাহেব বাড়িটা ক্রয়ের পর সবসময় এই জায়গাটা জমজমাট থাকে। প্রতিদিনই তিনি এখানে আসেন গাড়িতে সাইরেন বাজিয়ে। দেহরক্ষীদের পাশাপাশি পুলিশের গাড়িও থাকতো। তার চলাচল দেখে মনে হতো সরকারের কোনো মস্তো বড় কেউ। রাত ২টা বা ৩টার সময়ও গুমগুম করে তার গাড়ির সাইরেন বাজতো।’

যুবলীগ নেতা শামীমের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘খান সাহেবের কাছ থেকে বাড়িটি ক্রয়ের পরপরই এমন স্টাইলে চলাচল করতেন শামীম সাহেব। তবে গত ২ থেকে ৩ দিন ধরে তিন অনেকটাই শান্ত হয়ে গিয়েছিলেন। ফকিরাপুলের জুয়ার আসরে র‌্যাবের অভিযানের পর, আগের মতো গাড়িতে সাইরেন বাজিয়ে চলাচল করা বন্ধ করে দেন তিনি। গত দুইদিন অনেকটাই নীরবে এই অফিসে যাওয়া-আসা করেন শামীম সাহেব।’

আব্দুল্লাহ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘রাত ২টা বা ৩টার দিকেও ঠিকাদার শামীম সাহেব এই কার্যালয়ে আসতেন। গভীর রাতে তিনি যখন আসতেন তার গাড়ির আওয়াজে আশাপাশের বাড়ির সবার ঘুম ভেঙে যেত। কিন্তু কারও কিছু বলার সাহস ছিল না। এমনকি নামাজের সময়ও তিনি একই স্টাইলে চলাচল করতেন। পাশেই মসজিদ থাকায় অনেকের নামাজের সমস্যা হতো। কিন্তু তাকে কিছু বলার সাহস এখানে কারও নেই। এই নিকেতনেই শামীম সাহেবের আরও চারটি বাড়ি আছে বলে আমরা শুনেছি।’

প্রসঙ্গত, প্রভাবশালী ঠিকাদার জি কে শামীম যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক বলে কথা লোকমুখে শোনা গেলেও সংগঠনটির শিক্ষা সম্পাদক মিজানুল ইসলাম মিজু জািনান, জি কে শামীম যুবলীগের কেউ নন, তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

Bootstrap Image Preview