রাজধানীর ফকিরেরপুলে ইয়ংমেনস ক্লাব নামে একটি ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশান ২ এর ৫৯ রোডের ৫ নাম্বার বাসা থেকে তাকে আটক করে র্যাব। এসময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, নগদ অর্থ ও একটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠছে কে এই যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ।
খালেদ ভূঁইয়া বেড়ে উঠেছেন রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে। তিনি রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরেরপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি ক্লাব নিজের লোকজন দিয়ে আর ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবটি তিনি সরাসরি পরিচালনা করেন। প্রতিটি ক্লাব থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ টাকা নেন তিনি। এসব ক্লাবে প্রতিদিন ১০টা থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত চলে জুয়ার আসর। একই সঙ্গে চলে মাদক ব্যবসা।
ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। মতিঝিল-ফকিরাপুল ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো থেকে শুরু করে কমপক্ষে সাতটি সরকারি ভবনে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ ও সরকারি জমি দখলের মতো নানা অভিযোগ এ নেতার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলাও।
রিয়াজ মিল্কি ও তারেক হত্যার পর পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেন খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ২০১২ সালের পর এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় ঢাকার এক অংশের নিয়ন্ত্রণ আসে খালেদের হাতে। নিজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করেন তিনি।
খিলগাঁও-শাহজাহানপুর হয়ে চলাচলকারী লেগুনা ও গণপরিবহন থেকে নিয়মিত টাকা দিতে হয় খালেদকে। প্রতি কোরবানির ঈদে শাহজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া ও কমলাপুর পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। খিলগাঁও রেল ক্রসিংয়ে প্রতিদিন রাতে মাছের একটি হাট বসান এ নেতা। সেখান থেকে মাসে কমপক্ষে এক কোটি টাকা আদায় করেন তিনি। একইভাবে খিলগাঁও কাঁচাবাজারের সভাপতির পদটিও দীর্ঘদিন তিনি ধরে রেখেছেন। শাহজাহানপুরে রেলওয়ের জমি দখল করে দোকান ও ক্লাব নির্মাণ করেছেন।
জানা যায়, মতিঝিল, শাহজাহানপুর, রামপুরা, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মুগদা এলাকার পুরো নিয়ন্ত্রণ এ নেতার হাতে। এসব এলাকায় থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যথাক্রমে রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (রাজউক), রেলভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসার ফকিরাপুল জোনসহ বেশিরভাগ সংস্থার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন এ নেতা। ‘ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া’ নামের প্রতিষ্ঠানটি দিয়ে তিনি তার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
ইয়ংমেনস ক্লাব থেকে ১৪২ জনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, আমরা ক্লাবটিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়েছি। ক্লাবের ভেতর থেকে নগদ ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আটকদের ৬ মাস থেকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ক্যাসিনোর আড়ালে ক্লাবটিতে মাদক ব্যবসা চলত বলে জানান ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার।