আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ টয়লেট পরিবহন চালকদের ডোপ টেস্ট করা হবে। এর মাধ্যমে চালকেরা মাদকাসক্ত কি না, তা সড়কেই পরীক্ষা করা হবে।
বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মালিক-শ্রমিকদের এক সভায় এ কথা জানান ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। পরীক্ষায় কোনো চালক ধরা পড়লে তাকে সরাসরি জেলে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।
খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, চালকদের ডোপ টেস্টের বিষয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়েছে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হবে। সেখানে ভ্রাম্যমাণ টয়লেট থাকবে। সেখানে টিউব থাকবে, টয়লেটে নিয়ে চালকদের মূত্র পরীক্ষা করা হবে। এতে মাদকের নমুনা পাওয়া গেলে সেই চালককে সঙ্গে সঙ্গে জেলে নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চলাচল বন্ধের জন্য কাজ করছি। কিন্তু এখনও করতে পারিনি। এর পেছনে বেশ কিছু কারণও রয়েছে। চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চলাচল বন্ধে কাউন্টারভিত্তিক বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বসিলা থকে মতিঝিল পর্যন্ত এটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, দুই মেয়র ও প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। এক স্টপেজ থেকে অন্য স্টপেজ পর্যন্ত গাড়ির দরজা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।
৮ থেকে ৯ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চললে কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এর অন্যতম কারণ চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো, অসম প্রতিযোগিতা ও মাদক।
পরিবহন মালিক সমিতির এই নেতা আরও বলেন, আমরা অনিয়মে ভরপুর। আমরা কোনও নিয়মের মধ্যে আসতে পারিনি। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে আর পরিবহন পিছিয়ে যাচ্ছে।
তিনি জানান, কোনও চালক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে লাইসেন্স দেওয়া হবে না। এজন্য ৫ লাখ চালক তৈরির জন্য সরকার কাজ করছে। চালক তৈরি সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
লাইসেন্স ছাড়া চালকদের চাকরি হচ্ছে অভিযোগ করে এনায়েত উল্যাহ বলেন, ভুয়া লাইসেন্স, লাইসেন্সবিহীন কিংবা কাগজপত্র ছাড়া কোনও চালক যদি দুর্ঘটনা ঘটান তাহলে ৩০২ ধারায় মামলা হবে। এজন্য মালিকরাও দায়ী হবেন। আর পরিবহনকে কীভাবে চাঁদামুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। ঢাকা শহরের ৪০ শতাংশ চালক মাদকাসক্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মহাখালী মিনি বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, আমরা আর ঘাতক হতে চাই না। আমরা আমাদের হারানো গৌরব ফিরে পেতে চাই। আমাদের গৌরব ছিল, আমরা সেবক ছিলাম। আমরা সেই গৌরবে ফিরতে চাই।
সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, গাড়ি চালানোর সময় সতর্ক থাকলে দুর্ঘটনা হয় না। আমরা দেখতে পাই, চালক গাড়ি চালানোর সময় সিগারেট খায় আর হেলপার অসদাচরণ করে, এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি জানান, যেসব চালক এসব করে তাদের সায়েদাবাদ থেকে বাদ দিলে মহাখালীতে গিয়ে চাকরি পায়। মহাখালী থেকে বাদ দিলে গাবতলীতে চাকরি হয়। এমন চালকদের তালিকা করে টার্মিনালে ঝুলিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি সাদিকুর রহমান হিরু বলেন, একজন আরেকজনের সঙ্গে পাল্লাপাল্লি করছে। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা সরকারের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছি যে, আপনি (চালক) যদি নিজের কারণে দুর্ঘটনা ঘটান, তাহলে জেলে যেতে হবে। আমরা আপনার সঙ্গে থাকবো না।
তিনি জানান, ২০১৮ সালে ৮৬ কোটি টাকা জরিমানা নেওয়া হয়েছে। এই টাকা চালক বা শ্রমিকদের প্রশিক্ষণে ব্যয় করা যায়। ঢাকা শহরে একটি গাড়ি থেকে হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদাবাজি হয়। এতে প্রতিমাসে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা ওঠে। এটা বন্ধ করতে হবে। এটা যদি বন্ধ হয় তাহলে মালিকরাও চালকদের বেশি বেতন দিতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।