Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

আর কখনও রাজনীতি করব না: ছাত্রলীগ নেতা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:২৪ PM
আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:৩৪ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


গত ২৯ আগস্ট গুরুতর আহত হয়ে জাকিরুল ইসলাম নামের এক ছাত্রলীগ নেতার একটি কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর পুরোপুরি সুস্থ হতে দীর্ঘ সময় লাগবে।

সুস্থ হলেও এর ধকল আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। এদিকে শারীরিক এই অসুস্থতার কারণে এবং নিজের মতাদর্শের লোকদের হাতে হামলার শিকার হওয়ায় রাজনীতি ছেড়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন জাকিরুল।

জাকিরুল ইসলামের পরিবার শ্রীপুর উপজেলার স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনীতির কোন্দলে আজ জীবন বিপন্ন হতে চলেছে তার। জাকিরুল ইসলাম শ্রীপুর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে বর্তমানে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। শ্রীপুরে সাবেক সাংসদ রহমত আলীর অনুসারী হিসেবে জাকিরুলের পরিচিতি আছে।

এলাকার রাজনীতিসংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানান, সাতবারের নির্বাচিত সাংসদ রহমত আলী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। তার পরিবর্তে এবার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে জয়ী হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন। ইকবাল জয়ী হওয়ায় জাকিরুলসহ পুরো উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সাথে তার দূরত্ব বাড়ে।

এরই জের ধরে সাংসদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত যুবলীগ কয়েকজন নেতাসহ আরও অনেকে জাকিরুলকে নানা ধরনের হুমকি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে গত ২২ আগস্ট ও ২৯ আগস্ট জাকিরুলের ওপর দুই দফা হামলা চালানো হয়। জাকিরুলের পরিবারের অভিযোগ, সর্বশেষ হামলায় জাকিরুলের একটি কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলেন জাকিরুল। তিনি তার সাথে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনাটি খুলে বলেন। তিনি জানান,‘এখানকার আওয়ামী লীগের রাজনীতি দ্বিমুখী। এক অংশে সাবেক সাংসদ রহমত আলীর অনুসারীরা এবং অপর অংশে বর্তমান সাংসদ ইকবাল হোসেনের অনুসারীরা।

আমি রহমত আলীর অনুসারী হওয়ায় বর্তমান সাংসদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। তাঁর পক্ষে ওয়াসিম, জুয়েল আমার ব্যবসার কাজে বাধা দিতে থাকেন। এলাকার কেবল টিভি সংযোগ ব্যবসার (ডিসেম্বর) অংশীদার ছিলাম। এবার কোরবানির ঈদের পরপরই আমার কর্মচারীরা গ্রাহকদের কাছ থেকে ভাড়া তুলতে গেলে ওয়াসিম বাধা দেন।

রেলগেটের পাশে দীর্ঘদিন আগে জেলা পরিষদ থেকে লিজ নেওয়া জায়গায় আমাদের সাতটি দোকান আছে। এই দোকানগুলোর ভাড়াটেদের ওয়াসিম তাঁর অফিসে ডেকে নিয়ে বলেন জিকুকে ভাড়ার টাকা না দিতে।

অথচ এই জায়গাটি আমার পরিবারের সদস্যদের নামে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে জেলা পরিষদ থেকে লিজ নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক বছরই লিজের টাকা আমরা পরিশোধ করে আসছি।’

জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘ওয়াসিমের হুমকির পর আমি বিষয়টি গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার আপাকে জানাই। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শ্রীপুর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। তদন্তে আমাদের কোনো ব্যবসা নিয়ে কোনো ত্রুটি পায়নি শ্রীপুর থানা-পুলিশ।

এরপরই ২২ আগস্ট শ্রীপুর রেলগেটে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আমার ওপর হামলা চালানো হয়। আমি ও শ্রীপুর ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ও তন্ময় আহত হন। এই হামলায় আমার হাতের শিরা কেটে যায়।

এরপর জাকিরুল অভিযোগ করেন, হামলার পর চিকিৎসার জন্য শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে সেখানে বাধা দেয় হামলাকারীরা। পরে তিনি ঢাকায় বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।

এ ঘটনায় তিনি নিজেই বাদী হয়ে ২৩ আগস্ট আটজনকে আসামি করে শ্রীপুর থানায় মামলা করেন। ঢাকায় তিন দিন চিকিৎসার পর শ্রীপুরে ফিরে আসেন তিনি।

২৯ আগস্ট মাগরিবের নামাজের পর শ্রীপুর রেলগেট এলাকায় মোবাইল ফোনে রিচার্জ করতে যান তিনি। এশার আজানের সময় বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তখনই আবার তাঁর ওপর আরেক দফা হামলা হয়।

জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে বাড়ি ফিরছিলাম। তখনই আমার বাসা থেকে একটু দূরেই অন্ধকার সড়কে দুটি মোটরসাইকেল আমার সামনে এসে থামে। একটি মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন যুবলীগের সেলিম মুন্সী। মোটরসাইকেল দুটি কিছুটা সামনে যাওয়ার পরই ১০-১৫ জন আমার পেছনে চলে আসে।

একজন পেছন থেকে আমাকে লাথি মারে। অন্যরা চিৎকার করে বলে, ‘তুই মামলা করছিস কেন?’ আমি উঠে দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু সামনে থাকা দুটি মোটরসাইকেল ব্যারিকেড দেয়। তারপর রড দিয়ে আমাকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। আমার বাম চোখের ভ্রুতে রড দিয়ে আঘাত করে। একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। তারপর আর কিছুই মনে নেই।’

অচেতন হয়ে পড়ে যাওয়ার পর জাকিরুলকে উদ্ধার করে তাঁর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পুলিশি পাহারায় তাঁকে প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ঢাকার বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কয়েকবার বমি করে জাকিরুল।

টানা দুদিন প্রস্রাব বন্ধ ছিল তার। দুদিন প্রস্রাব বন্ধ থাকার পর চিকিৎসক দ্রুত পরীক্ষা করতে বলেন। পরীক্ষা করে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা পাওয়া যায় ৯ দশমিক ৭। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনজেকশন দেওয়া হয়। সর্বশেষ ৭ সেপ্টেম্বর জিকুর কিডনির পরীক্ষা করা হয়। সেবার তাঁর ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা পাওয়া যায় ৫ এর ওপরে।

নিজের শারীরিক অবস্থার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন জাকিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সাত দিনের ব্যবধানে আমার ওপর দুইবার হামলা চালানো হলো। দুই দফা হামলায় যেসব শারীরিক সমস্যা হচ্ছে, এসব আগে আমার কখনো ছিল না।’

পরে তিনি আরও জানান, ‘আজকে রাজনীতি করতে গিয়েই আমার এই অবস্থা। তাই আর কখনো রাজনীতি করব না। আমার পরিবার থেকে কাউকে রাজনীতিতে আসতেও দেব না।’

Bootstrap Image Preview