রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের আরেকটি নতুন ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের একটি সিসিটিভিতে ধারণ ১৫ মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে রক্তাক্ত স্বামীকে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশাযোগে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি নিজেই।
এসময় নিজের স্ত্রীর (মিন্নি) সঙ্গে নয়, হাসপাতালে যাওয়ার পথে এক রিকশাচালকের সঙ্গেই শেষ কথা হয় নিহত রিফাতের।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিলেন সেই রিকশাচালক দুলাল। তিনি বরগুনা সদর উপজেলার ফরাজীরপুল এলাকার বাসিন্দা।
রিকশাচালক দুলাল সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানান, ওইদিন কলেজ সড়কে যাত্রী নিয়ে গিয়ে মানুষের ভিড়ের কারণে আর সামনের যেতে পারছিলেন না। সামনে মারামারি হচ্ছে। দুলাল বলেন, 'যাত্রী নামিয়ে রিকশা ঘুরাইয়া কেবল দাঁড়াইছি, এ সময় একটা ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় হাইট্টা আইসা আমার রিকশায় উইঠাই কয়, চাচা আমারে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়া যান। আমি দেখলাম গলা ও বুকের বামপাশ কোপে কাইট্টা রক্ত বাইর হইতেছে। হের জামাডা টাইন্না আমি গলা ও বুকে চাইপ্পা ধইরা কইলাম, আপনে বহেন, আমি চালাই। এ সময় একটা মেয়ে দৌড়ে রিকশায় উইঠা ওই পোলাডারে ধইর্যা বসে। আমি তাড়াতাড়ি রিকশা চালাইয়া হাসপাতালের দিকে যাই।'
দুলাল বলেন, এক মিনিটের মতো রিফাত ঘাড় সোজা করে বসেছিল, এরপর সে মিন্নির কাঁধে ঢলে পড়ে, আর ঘাড় সোজা করতে পারেনি।
দুলাল আরও জানান, হাসপাতালের গেট দিয়ে ঢোকার সময় মিন্নি একজন লোককে ডাক দেয়। রিকশা থামানের সঙ্গে সঙ্গে ওই লোক দৌড়ে এসে রিফাতের অবস্থা দেখেই স্ট্রেচার আনতে যায়। আমি আর সেই লোক রিফাতকে স্ট্রেচারে তুলে অপারেশন থিয়েটারে দিয়ে আসি। এরপর রিফাতকে অ্যাম্বুলেন্স করে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ এসে আমার রিকশার ছবি তুলে নেয় ও কাগজপত্র নিয়ে যায়। আমার কাগজপত্র এখনও পুলিশের কাছেই আছে।
এদিকে প্রকাশ হওযা ভিডিওটি দেখা গেছে, স্বামীকে নিয়ে মিন্নি যখন হাসপাতালে পৌঁছান, তখন রিফাতকে অচেতন অবস্থায় দেখা গেছে। জরুরি বিভাগের সামনে রিকশাটি থামলে সাদা টি-শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তিকে দৌঁড়ে এসে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে যেতে দেখা যায়। অল্পকিছুক্ষণের মধ্যে একটি স্ট্রেচার নিয়ে আসেন তিনি।
ভিডিওতে মিন্নিকে ভীত অবস্থায় দেখা গেছে। এ সময় আশেপাশে থাকা লোকজন এগিয়ে আসেন। স্ট্রেচার আনার পর রক্তাক্ত-অচেতন রিফাতকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। এ সময় মিন্নি হাসপাতালের সামনে থাকা এক ব্যক্তির মোবাইল দিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তিনি হাসপাতালের ভেতরে যান। এর কিছু সময় পর আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন ও চাচা আবু সালেহ হাসপাতালে যান।
সিসিটিভি ফুটেজে সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের চিত্রে দেখা গেছে, হাসপাতালের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়ায়। তখন রিফাত শরীফের বন্ধু মঞ্জুরুল আলমসহ কয়েকজন সেখানে আসেন। সে সময় মঞ্জুরুল কিছুক্ষণ ফোনে কথা বলেন।
সকাল ১০টা ৪৪ মিনিটের ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, অক্সিজেন ও দুটি স্যালাইন লাগানো অবস্থায় রিফাতকে স্ট্রেচারে করে ওই অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। সকাল ১০টা ৪৯ মিনিটে সেটি বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ত্যাগ করে।
ভিডিওটির ব্যাপারে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, হাসপাতালের সামনের ভিডিওটি পেয়েছি। আমার মেয়ে যে তার স্বামীকে বাঁচাতে সম্পূর্ণ চেষ্টা করেছে তা ভিডিওতে স্পষ্ট। আমি শুরু থেকেই বলে এসেছি, আমার মেয়ে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। আমার মেয়েকে ষড়যন্ত্র করে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয় রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।