Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

২০০০ ইউরোসহ মানিব্যাগ ফিরিয়ে দেওয়া সেই বাংলাদেশি পুরষ্কারও ফিরিয়ে দিলেন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৫:৩৯ PM
আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৫:৩৯ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


ইতালির রাজধানী রোমের রাস্তায় দুই হাজার ইউরোসহ একটি ওয়ালেট কুড়িয়ে পেয়েছিলেন এক বাংলাদেশি তরুণ মুসান রাসেল।

সেটি মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার পর প্রতিদান হিসেবে তাকে পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাবও সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেন মুসান। এরপর মুসান ভাসছেন প্রশংসায়। তাকে নিয়ে এখন ব্যাপক আলোচনা ইতালির গণমাধ্যমে।

ইটালির লা রিপাবলিকা পত্রিকায় মুসানের সাক্ষাৎকার আর ছবি ছাপা হয়েছে। সেখানে তিনি সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন পুরো ঘটনা। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো-

সাত বছর আগে বাংলাদেশ থেকে রোমে আসেন মুসান রাসেল। রোমের রাস্তায় তিনি একটি লেদার সামগ্রীর স্টল চালান।

গত শুক্রবার তিনি রাস্তায় একটি ওয়ালেট পড়ে থাকতে দেখেন। এটি হাতে নিয়ে তিনি দেখতে পান ভেতরে অনেক নোট, ক্রেডিট কার্ড এবং অন্যান্য মূল্যবান কাগজপত্র আছে।

এরপর আর কিছু না ভেবেই ওয়ালেটটি নিয়ে তিনি চলে যান নিকটবর্তী পুলিশ স্টেশনে। সেখানে ওয়ালেটটি তুলে দেন পুলিশের হাতে।

এরপর পুলিশ ওয়ালেটের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তার কাছে ওয়ালেটটি ফিরিয়ে দেয়। মালিক মুসান রাসেলের সততার দৃষ্টান্তে অভিভূত হয়ে তাকে পুরস্কার দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি সবিনয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন।

লা রিপাবলিকা পত্রিকা তার কাছে জানতে চেয়েছিল, প্রথম যখন তিনি ওয়ালেটটি খুঁজে পান, তখন তিনি কি ভেবেছিলেন।

মুসান বলেন, ওয়ালেটের ভেতরটা দেখে তার মনে হয়েছিল, যিনি এগুলো হারিয়েছেন, তিনি নিশ্চয়ই খুবই সমস্যায় আছেন।

“ভেতরে ছিল কয়েকটি ক্রেডিট কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং আরও কিছু কাগজপত্র। আর টাকা তো ছিলই। কত টাকা বলতে পারবো না, কারণ আমি গুণে দেখিনি। আমি সবকিছু পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গেলাম।”

মুসান রাসেল ভালো ইটালিয়ান বলতে পারেন না। কিন্তু তারপরও তিনি তার বক্তব্য পুলিশকে বোঝাতে পারলেন। ওয়ালেটের মধ্যে একতাড়া নোট দেখে পুলিশ অবাক হলো। তখনই তিনি প্রথম জানতে পারেন যে ভেতরে দুই হাজার ইউরো ছিল।

পুলিশ তাকে ধন্যবাদ জানালো ওয়ালেটটি জমা দেয়ার জন্য। জবাবে মুসান বললেন, ‘এটা আমার কর্তব্য। আমি কাজ করি এবং এই ওয়ালেটটি ঘটনাচক্রে খুঁজে পেয়েছি। এটি আমার নয়।”

মুসান জানান, প্রথম জীবনে তাকে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে। দিন-রাত খাটতে হয়েছে। গত দুবছর ধরে তিনি লেদার স্টলটি চালান।

ওয়ালেটটি যার, তার সঙ্গে যখন দেখা হলো, তখন কী ঘটলো? তার কাছে জানতে চেয়েছিল লা রিপাবলিকা।

মুসান জানান, ওয়ালেটটি পুলিশের কাছে দিয়ে তিনি কাজে ফিরে আসেন। কয়েক ঘন্টা পর পুলিশ তাকে ফোন করে। পুলিশ জানায়, ওয়ালেটের মালিক একজন ব্যবসায়ী। তিনি মুসানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান।

“প্রথমে আমি যেতে চাইনি। কারণ সবাই আমার দিকে মনোযোগ দিক, সেটা আমি চাইনি। তবে শেষপর্যন্ত আমি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ঐ ভদ্রলোক আমার দেখা পেয়ে আসলেই খুশি হয়েছিলেন।

আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাতে পেরে খুশি ছিলেন। আমি অবশ্য তাকে বলেছি, এর কোন দরকার ছিল না, আমি এমন ব্যতিক্রমী কিছু করিনি। কিন্তু তিনি আমাকে একটা পুরস্কার দিতে চেয়েছিলেন, আমি যে পুরস্কার চাই, সেটাই দিতে চেয়েছিলেন।”

কেন তিনি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করলেন- জানতে চাইলে মুসান বলেন, “কারণ এটা কোন সন্মানের ব্যাপার হতো না। আমি বরং তাকে আমার স্টলে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আমি খুশি হবো যদি উনি আমার দোকানের কাস্টমার হন।”

“আমি যে ওয়ালেটটি খুঁজে পেয়েছিল, সেটা ঘটনাচক্রে। এটার জন্য আমাকে পুরস্কার দেয়া ঠিক নয়।”

Bootstrap Image Preview