বাসা নম্বর ১০। শাজাহানপুর দক্ষিণ খিলগাঁও। এ বাসায় প্রচুর বিদেশি কবুতর পোষেণ মাহবুব হোসেন ওরফে শান্ত। স্থানীয়রা সবাই তাকে শান্তবাবু নামেই চেনেন।
কিন্তু শান্তবাবু যে ভেতরে ভেতরে ইয়াবার বড় কারবারি তা কারোরই জানা ছিল না। অথচ তিনি সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে খিলগাঁও এলাকাজুড়ে ইয়াবার ‘হোম ডেলিভারি’ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভিযানে বুধবার সকালে গ্রেফতার হন মাহবুব হোসেন শান্ত। তার শৌখিন কবুতরের খোপ থেকে উদ্ধার করা হয় শতাধিক ইয়াবা ও মাদক বিক্রির বিপুল পরিমাণ টাকা।
পরে মাহবুব হোসেন শান্তর বিরুদ্ধে শাজাহানপুর থানায় মামলা করা হয়। এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীর খোঁজ চলছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক খোরশিদ আলম বলেন, মাহবুব হোসেন একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে মাদক মামলা আছে তিনটি।
মাহবুব একা নন। ইয়াবা কারবারে তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য জড়িত। সুকৌশলে তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের রমনা সার্কেলের ইন্সপেক্টর একেএম কামরুল ইসলাম বলেন, মাহবুব হোসেনের স্ত্রী সরকারি চাকরি করেন। বর্তমানে আছেন তথ্য মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু চাকরির পাশাপাশি তার স্ত্রীও মাদকের ব্যবসা করেন।
শাজাহানপুর থানার একটি মাদক মামলায় (মামলা নম্বর ৫(৪) (১৩) ২০১৩ সালে গ্রেফতার হয়ে তিনি জেলও খাটেন। এই দম্পতি সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবা হোম ডেলিভারি করতেন। কবুতরের খোপে ইয়াবা ও মাদক বিক্রির টাকা লুকিয়ে রাখতেন তারা।
অভিযানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সঙ্গে নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ১০ জনের একটি টিম বুধবার সকালে মাহবুবের বাড়িতে তল্লাশি শুরু করে। দেখা যায়, মাহবুবের বাড়িটি টিনশেড। মাত্র তিনটি ঘর। ঘরের সামনে কবুতরের খোপ।
বিদেশি জাতের দামি প্রচুর কবুতর পোষেণ তিনি। কবুতরের খোপের পেছনেই একটা স্টিলের আলমারি রাখা। একপর্যায়ে শোবার ঘর থেকে ১২০টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে মাদক ব্যবসার কথা স্বীকার করেন মাহবুব জানান, তার কাছে আরও ইয়াবা ছিল।
সম্প্রতি ইয়াবার চালান ডেলিভারি করেছেন। মাদক বিক্রির টাকা কোথায় জানতে চাইলে টালবাহানা শুরু করেন তিনি। তল্লাশির একপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চোখ যায় কবুতরের খোপের দিকে। পরে সেখানে পাওয়া যায় ১৮টি বান্ডিল।
প্রতিটি বান্ডিলে ১ হাজার টাকার ১০০টি করে নোট ছিল। গুনে দেখা যায় ১৮ লাখ টাকা আছে। টাকা উদ্ধারের পর মাহবুব স্বীকার করেন যে, কয়েকদিন আগে তিনি ২০ হাজার ইয়াবা বিক্রি করে টাকাগুলো সেখানে লুকিয়ে রাখেন।