Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

মুহররমকে যে কারণে আল্লাহর মাস বলা হয়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৩:৫২ PM
আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৩:৫২ PM

bdmorning Image Preview


হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। কুরআনে সম্মানিত ৪ মাসের একটি। হাদিসে এ মাসকে আল্লাহর মাস হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। মুহররম মাসব্যাপী নফল রোজা ও তাওবা-ইসতেগফারে অতিবাহিত করার জোর উপদেশ দেয়া হয়েছে। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মুহররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ।’ (মুসলিম)

প্রতিটি দিন, সপ্তাহ, মাস ও বছর সবই মহান আল্লাহর। কিন্তু এ হাদিসে মুহররমকে আল্লাহ মাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর কারণই বা কী? 

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- 

দুনিয়ার সব মসজিদই ‘বায়তুল্লাহ’ বা আল্লাহর ঘর। আবার কাবা শরিফও ‘বায়তুল্লাহ’ বা আল্লাহর ঘর। কিন্তু কাবা শরিফের মর্যাদার তুলনায় দুনিয়ার সব মসজিদের মর্যাদা সমান নয়।

ঠিক এভাবেই সব মাস আল্লাহর হলেও মুহররম মাসের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণেই এ মাসকে আল্লাহর মাস হিসেবে ঘোষণা করে আলাদা মর্যাদা ও গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। এ মাসের বিশেষ ফজিলতের সঙ্গে তাওবা বা ক্ষমার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিস বর্ণিত রয়েছে। আর তাহলো-

এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! রমজানের পর আপনি আমাকে কোন মাসে রোজা রাখার নির্দেশ দেন? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- 

‘তুমি যদি রমজানের পর আরও কোনো মাসে রোজা রাখতে চাও তবে মুহাররমে রোজা রাখ। কেননা সেটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা অনেকের তাওবা কবুল করেছেন। এদিনটিতে ভবিষ্যতেও আরও অনেক মানুষের তাওবা কবুল করবেন।’ (তিরমিজি ও মুসনাদে আহমদ) 

ইসলামি স্কলারদের মতে, হাদিসে নির্দেশিত মুহররমের এ দিনটি হলো ১০ মুহররম বা আশুরার দিন। এ দিন আল্লাহ তাআলা অনেকের তাওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অনেকে তাওবা কবুল করবেন।

তবে শুধু মুহররমের দিনই তাওবা করতে হবে এমন নয়, বরং প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম আমল হলো- প্রতিদিন একশত বার তাওবা করার আমল। তাই বছর মাস সপ্তাহের বিশেষ দিন বিবেচনা না করে মুমিন ব্যক্তি প্রতিদিনই আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা-ইসতেগফার করে থাকে।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, মহররমের নফল রোজা রাখার পাশাপাশি বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করা। কুরআন-সুন্নায় এসেছে, এমন কিছু তাওবা-ইসতেগফার তুলে ধরা হলো, যেগুলোর অর্থ ও ভাব বুঝে মহান আল্লাহ কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে মুমিন। আর তাহলো-

رَبَّنَا ظَلَمْنَاۤ اَنْفُسَنَا، وَ اِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَ تَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ 

উচ্চারণ : রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩) 

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। 

> সব সময় ইসতেগফার পড়া-
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لاَ إلَهَ إلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ وَأَتُوبُ إلَيْهِ ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُورُ

উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি; রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আংতাত তাওয়্যাবুল গাফুর। 

আর সকালে এবং সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া- 

أَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিং শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বি-নিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিজান্মি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।

মুসলিম উম্মাহর উচিত মুহররমমাস জুড়ে আল্লাহ ইবাদত-বন্দেগি, নফল নামাজসহ তাওবা-ইসতেগফারে অতিবাহিত করা। আশা করা যায়, আল্লাহর মাসের ইবাদত ও তাওবা-ইসতেগফার ধন্য হবে মুমিনের জীবন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মুহররম মাসের হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। তাওবা-ইসতেগফার, রোজা ও বেশি বেশি নফল নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Bootstrap Image Preview