Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ইন্টারভিউ বোর্ডে অজ্ঞান করে গণধর্ষণ, ধর্ষকের পা ধরে ঘরে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০১৯, ০৭:০৭ PM
আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০১৯, ০৭:১০ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


এক বছরের পরিচয় নাহিদ পাটোয়ারীর সাথে। সেই সূত্র ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যোগাযোগও ছিল তাদের। গত ২৭ আগস্ট (মঙ্গলবার) দুপুর ২টার পর মোবাইলে কল করে ডাকা হয় তরুণীকে। ইন্টারভিউ বোর্ডে ডেকে দু-একটি প্রশ্নের পরই সিগারেট আর ওয়াইন অফার করা হয়। তাতে না করলে কৌশলে কোকাকোলার সাথে ওয়াইন খাওয়ানোর পর তরুণীকে অজ্ঞান করা হয়। এরপর প্রথমে ফাহিম আহমেদ ফয়েজ (৩০) ও পরে নাহিদ পাটোয়ারী (৩২) ধর্ষণ করে। জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর হাতেপায়ে ধরে অনুরোধ করে বাসায় ফেরেন চাকরিপ্রত্যাশী তরুণী।

গত মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে রাজধানীর শেরেবাংলা থানাধীন ৩নং সড়কের ৩৫/১/বি ভবনের পঞ্চম তলায় হেল্থ ভিশন নামে এক অফিস কাম বাসায় চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হন ওই তরুণী।

ঘটনার পর বুধবার দিবাগত রাতে ফাহিম আহমেদ ফয়েজ এবং নাহিদ পাটোয়ারীর নামে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলা নং ৪৯। ওই মামলার এজাহারে এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ভুক্তভোগী তরুণী।

গণধর্ষণের ঘটনায় মামলার পর গত রাতেই জড়িত অভিযোগে ফাহিম আহমেদ ফয়েজকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে আরেক অভিযুক্ত নাহিদ পাটোয়ারী পলাতক।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, এক বছরের পরিচয় নাহিদ পাটোয়ারীর সাথে। সেই সূত্র ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যোগাযোগও ছিল। গত ২৭ আগস্ট দুপুর ২টার পর ফোনে কল করে ওই তরুণীকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকে।

কল পেয়ে মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে শ্যামলী ৩নং সড়কের ৩৫/১/বি ভবনের পঞ্চম তলায় হেল্থ ভিশন নামে অফিস কাম বাসায় যান। শ্যামলী প্রধান সড়ক থেকে ওই তরুণীকে রিসিভ করে নিয়ে যায় নাহিদ। একটি চেয়ারে বসতে দিয়ে চাকরি বিষয়ক প্রশ্ন করে। এরপর সিগারেট ও ওয়াইন খাওয়ার অফার করে নাহিদ। খেতে রাজি না হওয়ায় চালাকি করে কোকাকোলার সাথে ওয়াইন মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। এরপর শারীরিকভাবে ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে প্রথমে ফাহিম আহমেদ ফয়েজ ও পরে নাহিদ পাটোয়ারী ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ঘটনায় চেতনা হারায় তরুণী। চেতনা ফেরাতে তরুণীর চোখেমুখে পানি দেয়া হয়। পরে ধর্ষণে জড়িত দুজনকে হাতেপায়ে ধরে অনুরোধ করে সন্ধ্যার পর বাসায় ফেরেন চাকরিপ্রত্যাশী তরুণী।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্যামলী ৩নং সড়কের ৩৫/১/বি ভবনে গিয়ে জানা যায়, রাতে একজনকে আটক করে নিয়ে গেলেও আরেক জন পলাতক। বাসার মালিক না থাকায় মালিকের স্ত্রী ও পরিবার কথা বলতে রাজি হননি।

ভবনের কেয়ারটেকার জানান, পঞ্চম তলার ওই কক্ষটি পরিবার নিয়ে থাকার জন্য ভাড়া নিয়েছিলেন ফয়েজ। কিন্তু সেখানে তারা বাসার পাশাপাশি অফিসও চালিয়ে আসছিলেন। হেপাটাইসিস বি টিকা বিক্রি ও বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করতো বলে জানান তিনি।

ঘটনাস্থলেই কথা হয় ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই তৌহিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীর অভিযোগ গত মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে ৬টার মধ্যে ঘটনা। আমরা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতে ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেটা যাচাই বাছাই চলছে। প্রাথমিকভাবে ভবনটিতে পলাতক নাহিদের সাথে ওই তরুণীকে ঢুকতে দেখা গেছে।

শেরেবাংলা নগর থানার ডিউটি অফিসার রেজাউল জানান, ওই তরুণী শান্তা মারিয়াম নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছে বলে জানিয়েছে।

শেরেবাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম মুনশী বলেন, মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত দুজনের মধ্যে ফয়েজ নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নাহিদ নামে আরেক আসামি পলাতক। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

ওসি বলেন, ফয়েজকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আজই সোপর্দ করা হবে। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ধর্ষণের ঘটনার সাথে আর কে বা কারা জড়িত।

তিনি বলেন, হেলথ ভিশন নামে ওই প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব সম্পর্কে আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে সব জানা যাবে।

শেরেবাংলা নগর থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভুক্তভোগী ওই তরুণীকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ধর্ষণের আলামত পরীক্ষার জন্য। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হতে ওই ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পলাতক নাহিদকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

Bootstrap Image Preview