জম্মু-কাশ্মীর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা হারায় আরও দুদিন আগেই। সেদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ রাজ্যসভায় ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের কথা জানান। পরদিন লোকসভায়ও পাশ হয় এই বিল। তবে দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের হঠাৎ প্রয়াণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর সেদিন বক্তব্য রাখেননি।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে কাশ্মীর প্রশ্নে প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশ্যে নিজের বক্তব্য প্রদান করেন মোদি। আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেই বক্তৃতায় তিনি ভারতবাসীকে বুঝানোর চেষ্টা করলেন, ৩৭০ বাতিলের ফলে কীভাবে কাশ্মীরবাসীই লাভবান হবে। আশ্বাস দিলেন জম্মু কাশ্মীরে ব্যাপক উন্নয়নের।
সেই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ দমনের মাধ্যমে কাশ্মীর শান্তির জনপদ হিসেবে বিশ্বের কাছে নজির সৃষ্টি গড়বেন বলেও জানালেন তিনি।
জাতির উদ্দেশে ভাষণে মোদি বলেন, ‘৩৭০ ধারা কার্যকর থাকায় জম্মু-কাশ্মীর পেয়েছে শুধু সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ, পরিবারবাদ এবং দুর্নীতি। জনকল্যাণে সংসদে যে সব আইন তৈরি হতো, তা কার্যকরি হতো না উপত্যকায়।
কেন্দ্রের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির সুবিধা পেতেন না। এমনকি, চাকরিতে সংরক্ষণ, তথ্য জানার অধিকারের মতো আইনও সেখানে কার্যকরি ছিল না। সেই সব থেকে মুক্ত হয়ে এক নতুন জম্মু-কাশ্মীর আত্মপ্রকাশ করেছে।
কেন্দ্রের অধীনে থাকায় এখন জম্মু-কাশ্মীরে পরিকাঠামো, যোগাযোগ, ব্যবসা, পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য—সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন গতি আসবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মোদি। তবে বেশি দিন যে জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থাকবে না, তাও এ দিন কাশ্মীরবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
লাদাখের জন্য এই সব কল্যাণমূলক কাজ তো হবেই, তার সঙ্গে আলাদা করে সেখানকার ভেষজ সম্পদের কথা উল্লেখ করেন মোদি। তিনি বলেন, ‘লাদাখ হয়ে উঠতে পারে দেশের সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র।
এখানকার ভেষজ সম্পদ বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে। সৌরশক্তি উৎপাদনে নতুন পথ দেখাতে পারে লাদাখ।’ এখানেও শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ সব বিষয়ে কেন্দ্রের সর্বোপরি সাহায্যের আশ্বাস দেন।
কাশ্মীরবাসীকে দেশবাসীর সঙ্গে একাত্ম করতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা কখনওই মনে করবেন না আলাদা। আপনাদের সুখ-দুঃখ আমাদেরও সুখ-দুঃখ।’ কাশ্মীরবাসীকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে ধুমধাম করে ঈদ পালনের কথাও বলেন মোদী।
আর সব শেষে উপত্যকার বাসিন্দাদের প্রতি মোদির আহ্বান, ‘আসুন সবাই মিলে সন্ত্রাসমুক্ত, বিচ্ছিন্নতাবাদমুক্ত এমন এক শান্তির উদ্যান গড়ে তুলি কাশ্মীরকে, যাতে সারা বিশ্বে নজির তৈরি হবে।