Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘মিন্নিকে আসামি করে তো মামলার ১২টা বাজিয়ে দিয়েছে’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ আগস্ট ২০১৯, ০৯:০১ PM
আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০১৯, ০৯:০১ PM

bdmorning Image Preview


বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। জামিন আবেদন শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘মিন্নি বরগুনার আদালতে যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তা না দেখে, পর্যালোচনা না করে আমরা জামিন দিতে পারছি না। এখন জামিনের বিষয়ে রুল জারি করতে পারি। রুল নিতে না চাইলে আপনারা আবেদন ফেরত নিতে পারেন।’

এ সময় মিন্নির জামিন আবেদন ফেরত নিতে আইনজীবী আদালতের কাছে আবেদন করেন। আদালত তখন রুল না দিয়ে জামিন আবেদনটি ফেরত দেন।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে মিন্নির জামিন আবেদনের ওপর এক ঘণ্টা সময় ধরে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মিন্নির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম।

শুনানির সময় জেড আই খান পান্না হাইকোর্টকে বলেন, মামলার এক নম্বর সাক্ষী মিন্নিকে আসামি করে তো মামলার ১২টা বাজিয়ে দিয়েছে। শুনানিতে তিনি আরও বলেন, মিন্নির জামিনের জন্য আবেদন করছি। ২৩ জুন হত্যাকাণ্ড ঘটে। এফআইআর হয় ২৭ জুন। ১৬ জুলাই মিন্নিকে ডেকে নেয়া হয় পুলিশ লাইন্সে। সেদিনই তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে পরের দিন ১৭ জুলাই আদালতে তুলে রিমান্ডে নেয়া হয়।

তিনি বলেন, ১৬৪ ধারায় মিন্নির জবানবন্দি নেয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে নেয়ার সময় পুলিশ তার মুখ চেপে ধরে বলে পত্রপত্রিকায় এসেছে। কারাফটক (জেলগেট) থাকতে ১৯ বছরের একটি মেয়েকে পুলিশ লাইনে নিয়ে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে? এটা সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার লঙ্ঘন। মিন্নির কাছ থেকে জোর করে অবৈধভাবে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।

জেড আই খান পান্না বলেন, আদালতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে পারেনি। এজন্য কোর্টও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা আছে, আসামির সহযোগিতার জন্য আইনজীবী লাগবে।

তিনি বলেন, মূল চারজনকে ধরার ক্ষেত্রে অগ্রগতি নেই। এ সময় তিনি কালের কণ্ঠসহ দুটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। আমরা একজন নারী হিসেবে জামিন চাচ্ছি।

শুনানির এ পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, টিভি, পত্রপত্রিকায় হত্যাকাণ্ডের চিত্র এসেছে। এর পেছনে আবার ষড়যন্ত্র কিসের? একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শীকেই আসামি করা হয়েছে। মামলাটিকে ভিন্ন খাতে নিতে এবং কিছু লোককে বাঁচাতে মিন্নিকে আসামি করা হয়েছে।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজউদ্দিন ফকির শুনানির জন্য দাঁড়িয়ে বলেন, আমরা আদালতকে সহযোগিতা করতে চাই। হাইকোর্ট তখন বলেন, তারাও (জেড আই খান পান্না) আদালতকে সহযোগিতা করবেন।

হাইকোর্ট মোমতাজউদ্দিন ফকিরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ১৮ দিন পর এক নম্বর সাক্ষীকে আসামি কেন করলেন? জবাবে মমতাজউদ্দিন ফকির বলেন, ঘটনার অন্তরালে অনেক ঘটনা রয়েছে। আদালত বলেন, তার বিরুদ্ধে কিছু কি আছে? জবাবে তিনি বলেন, মিন্নি খুব সুচতুর, জামিন হলে কোনো কৌশল নেয় কি-না, বলা যায় না।

মমতাজউদ্দিন ফকির আরও বলেন, ১৫ আসামির জবানবন্দি আছে। এর মধ্যে চারজন মিন্নির নাম বলেছে। এছাড়া মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির আগে বিয়ে হয়েছিল। এ সময় তিনি কাবিননামা দাখিল করেন। পরে সেই বিয়ে গোপন করে রিফাত শরিফের সঙ্গে বিয়ে হয়। এরপরও গোপনে নয়ন বন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন মিন্নি। আদালত বলেন, এটা কার কথা? পুলিশের ফরোয়াডিং?

মমতাজউদ্দিন ফকির বলেন, জ্বি। এছাড়া ফোনকল রেকর্ড আছে। সিডি আছে। তিনি বলেন, নিম্ন আদালত চারটি যুক্তিতে তার (মিন্নি) জামিনের আবেদন খারিজ করেছে। এগুলো হলো- মামলার সিডি (কেইস ডকেট যেখানে ঘটনার আগে-পরে মিন্নির সঙ্গে নয়ন বন্ডের কথোপকথন), ভিডিও ফুটেজ (হত্যাকাণ্ডের ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজ), কাবিননামা (নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে) এবং ১৬৪ ধারার জবানবন্দি (মিন্নি ও অন্য আসামির)।

তিনি আরও বলেন, মিন্নি নিজে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন, বলা যায় মাস্টার মাইন্ড।

আদালত এ সময় বলেন, আইনে (৪৯৭ ধারা) জামিনের ক্ষেত্রে নারীরা সুবিধা পাবেন বলে বলা আছে। মমতাজউদ্দিন ফকির বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নেই এখানে।

জেড আই খান পান্না বলেন, উনারা (রাষ্ট্রপক্ষ) পুলিশের কথা বলছেন। আমরা জনগণের কথা বলছি। এ সময় পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন এ আইনজীবী। সারাদেশের প্রতিটি মানুষের সহানুভূতি মিন্নির পক্ষে- বলেন তিনি।

আদালত এ সময় বলেন, নারী- এ বিবেচনায় জামিন পেতে পারেন। তবে, সেজন্য ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি লাগবে। সেটা আছে কি?

জেড আই খান পান্না বলেন, না, পুলিশ দেয়নি। অভিযোগপত্র দাখিল না হওয়া পর্যন্ত ওটা দেবে না।

আদালত বলেন, ১৬৪ ধারার জবানবন্দি না দেখে (পর্যালোচনা না করে) কিছু দেয়া যাবে না। জেড আই খান পান্না বলেন, মিন্নির প্রেমের কথা, বিয়ের কথা- এসব বললেন কিন্তু এখানে একটি হত্যাকাণ্ড কীভাবে ঘটেছে- সেটা তো বলেননি। জামিন দিলে আমি (মিন্নি) পালিয়ে যাব না।

আদালত বলেন, আমরা রুল (কেন জামিন দেয়া হবে না মর্মে) দেই। এর মধ্যে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি নিয়ে আসুন। এরপর জামিনের আবেদনের ওপর শুনব। জবাবে জেড আই খান পান্না বলেন, সে তো নারী। এ যুক্তিতেই জামিন হতে পারে। আদালত বলেন, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি লাগবে। অন্যথায় আবেদন ফেরত নিতে পারেন। এরপর জেড আই খান পান্না জামিনের আবেদন ফেরত নেন।

গত ৫ আগস্ট হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মিন্নির পক্ষে জামিন চেয়ে আবেদন করেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।

গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও পাঁচ-ছয়জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

Bootstrap Image Preview