জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল করার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান। ভারতের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দারস্থ হতে শুরু করেছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি মালিহা লোধি বৃহস্পতিবার কাশ্মীরে ভারতের‘অবৈধ দখলদারিত্ব’বৃদ্ধি করার বিষয়টি জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেছেন । জাতিসংঘে অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গেও কথা বলেছেন পাকিস্তানি এই দূত।
পাকিস্তানের বেসরকারি টেলিভিশন জিও-নিউজ জানিয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিব বাইরে থাকায় মালিহা লোদি বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদে বর্তমান সভাপতি পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত জোয়ানা ওনেকার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় তিনি ভারতের কর্মকাণ্ডকে ‘কাশ্মীরিদের মর্যাদা হানিকর’বলে বর্ণনা করেছেন।
পাকিস্তানি এই কূটনীতিক ভারতের ‘বেআইনি ও অস্থিতিশীল’কর্মকাণ্ডকে প্রত্যাহার করার দাবি জানাতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিও আহ্বান জানান। পাশাপাশি ভারত যাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব মেনে চলে তা নিশ্চিত করারও আহ্বান মালিহা লোধি।
এর আগে, কাশ্মীরের জনগণের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়ার পর সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। ভারতের এই পদক্ষেপ সেখানকার মানবিক পরিস্থিতির বিপর্যয় ঘটাবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র রুপার্ট কোলভিল টুইটারে এক ভিডিওবার্তায় টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, রাজনৈতিক সভাসমাবেশে নিষেধাজ্ঞা ও রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দির বিষয়টি উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এর আগেই এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, চীন ও মানবাধিকার গোষ্ঠী অ্যামনেস্টি ইন্টান্যাশনাল। এছাড়া কাশ্মীরের এই দুর্দিনে তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে তুরস্ক ও মালয়েশিয়ার মত দেশগুলো। যদিও ভারত এই সঙ্কটকে নিজেদের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মুখ রক্ষার চেষ্টা করছে।
কিন্তু তাদের এই যুক্তি যে ধোপে টিকছে না আন্তর্জাতিক নেতাদের বিবৃতিই তার প্রমাণ। পাশাপাশি কাশ্মীরিদের ওপর ভারতের দখলদার বাহিনীর নিপীড়নের সংবাদগুলোও গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করছে আন্তর্জতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো।
এদিকে ভারতের হঠকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ইসলামাবাদ। বুধবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতের সঙ্গে সকল কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষনা দিয়েছেন। তিনি পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনারকে ইসলামাবাদ ছাড়ার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে ভারতের পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতকে দেশে ডেকে পাঠিয়েছেন।
এছাড়া কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের ক্রিকেটার ও বিনোদন জগতের তারকাদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। এই বিতর্কে সামিল হয়েছেন দুই দেশেই সমান জনপ্রিয় গায়ক আতিফ আসলাম ও নায়িকা মাহিরা খানও।
গত রোববার থেকে কাশ্মীরে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কাশ্মিরি জনগণ যারা দেশের অন্যান্য এলাকাগুলোতে রয়েছে তারা কাশ্মীরে প্রবেশ করতে পারছে না। স্থানীয় নেতাদেরও গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে।
এর আগে, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে লেখা চিঠিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি জম্মু-কাশ্মীরের সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিলসহ উপত্যকায় সেনা বাড়ানো এবং কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীদের গৃহবন্দি করা নিয়ে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন।
চিঠিতে মাহমুদ কোরেশি বলেন, কাশ্মীরি জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করে ভারত সরকার উপত্যকাটির নাগরিকদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালাচ্ছে। এছাড়া ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্ডার অ্যাকশন টিমের সদস্যদের টার্গেট করে গুলি চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে ভারত সরকার জাতিসংঘের নির্ধারিত নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে বলেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।