সম্প্রতি ভারতের সংবিধান থেকে অধিকৃত কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া ৩৭০ ধারাটি বাতিল করেছে ভারত। এ নিয়ে ক্রোধে ফুঁসছে গোটা উপত্যাকা। কিন্তু তাদের সেই ক্ষোভের সংবাদ প্রকাশ হতে পারছে না। কেননা গোটা রাজ্যটি ঘিরে রেখেছে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী। কারফিউ জারি করে কাশ্মীরকে গোটা বিশ্বের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। মোদি সরকারের এক তরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে বিক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু সেখানকার বিদ্রোহী জনতা। এই পরিস্থিতিতে একটি কাশ্মীরি শিশুর ছবি গোটা বিশ্ব জুড়ে ঝড় তুলেছে। এই এক ছবিই যেন স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরিদের ভারত বিরোধী মনোভাব ফুটিয়ে তুলেছে।
ছবিতে দেখা গেছে, পাঁচ বছরও পেরোয়নি এমন একটি শিশু প্লাস্টিকের গুলতি তাক করে আছে অস্ত্রে সজ্জিত ভারতীয় সেনাদের দিকে। চোখে তার কোনোই ভয় নেই। ভারী অস্ত্রশস্ত্রের কাছে যে এ গুলতি যে কিছুই না, তা নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছে না শিশুটি। যেন হাতের এই গাছ থেকে ফল পেড়ে খাওয়ার অস্ত্রটি দিয়েই ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে সে। এই ছবি ভারতীয় দখদারিত্বের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরি জনতার প্রতীক, নিপীড়নকারী সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার ইঙ্গিত।
স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরিদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে ছবিটি তোলেন ভারতীয় ফটোগ্রাফার আদিত্য রাজ। ছবিটি এখন কাশ্মীরিদের আন্দোলনের প্রতীকী রূপ হয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। অকুতোভয় কাশ্মীরি শিশুটিকে ৩৭০ ধারা বাতিলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো বিদ্রোহের প্রতীক বলে আখ্যা দিচ্ছেন অনেকে।
ছবিটি তুলে আদিত্য রাজ টুইটারে ছবিটি পোস্ট করে লেখেন, ‘সেনার সামনে প্লাস্টিকের গুলতি নিয়ে খেলছে একটি শিশু।’
তবে আদিত্যের কথায় সঙ্গে একমত নন ভারতের সাবেক আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভট্ট। তিনি বলেছেন, পাঁচ বছরের শিশুও যখন কোনো সেনার দিকে অস্ত্র তাক করে, তখন বুঝতে হবে কাশ্মীর নিয়ে ভারত কোনো ভুল করছে। সঞ্জীব ভট্টের এ বক্তব্য কে খাটো করে দেখছেন না আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতি বিশ্লেষকরা। যেমনটা তারা এ ছবিকেও খাটো করে দেখছেন না।
ভারতশাসিত কাশ্মীর উত্তেচনা এখন চরমে অবস্থান করছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার সোমবার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ঘোষণাকে সামনে রেখে কাশ্মীরের ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
এই মুহূর্তে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক এলাকায় পরিণত হয়েছে। সেনাবাহিনী, আধা-সামরিক বাহিনী ও পুলিশ সদস্য মিলিয়ে সেখানে ৭ লক্ষাধিক নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে ভারত। অস্থায়ী কারাগার বানানো হয়েছে হোটেল, গেস্ট হাউস, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ভবনকে। কাশ্মীরের পুরো উপত্যকাটি যেন পরিণত হয়েছে একটি কারাগারে। বুধবারই গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষকে। হতাহত হয়েছে আরো বহু মানুষ। কিন্তু সেই বিদ্রোহের খবর প্রকাশ্যে আসছে খুব কমই। কেননা গোটা কাশ্মীরকে যে আজ বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে কুচক্রী মোদি।