রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১১ ডেঙ্গুরোগী মৃত্যুর তথ্য চিকিৎসরা জানালেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলছেন ভিন্ন কথা। মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ নিয়ে আয়োজিত এক ‘বৈজ্ঞানিক সেমিনারে’ স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ডেঙ্গুরোগের মৃত্যুর তালিকা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হাতে দিলে তিনি বলেন, “তারা বলছেন, এ হাসপাতালে ১১ জন মারা গেছেন, কিন্তু কতজন ডেঙ্গুজনিত কারণে মারা গেছে, তা নিশ্চিত করতে পারেননি।”
বুধবার (৭ আগস্ট) মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ নিয়ে সেমিনারটির আয়োজন করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।
‘বৈজ্ঞানিক সেমিনারে’ ডেঙ্গু রোগীদের ম্যানেজমেন্ট নিয়ে তথ্য উপস্থাপন করেন হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রুবিনা ইয়াসমিন। এ সময় তিনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগী, মোট চিকিৎসা নেওয়া রোগী ও ডেঙ্গু রোগে মৃত্যুর তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘এই পর্যন্ত এখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন এক হাজার ৪২৪ জন, চিকিৎসা নিয়ে ছাড়পত্র নিয়েছেন এক হাজার ৩৯ জন। আর মারা গেছেন ১১ জন।’
অথচ, একই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দিলেন ঠিক তার উল্টো তথ্য। তিনি বলেন, ‘দেশে এবার ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেড়েছে। গত বছর আমরা ১০ হাজার রোগী পেয়েছিলাম। গতকালের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৩০ হাজার রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে এসেছিলেন। অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন।
আমাদের এই হাসপাতালেও একটি ভালো চিত্র আমরা পেলাম। এখানেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৮৭ জন, পরীক্ষা করেছেন ১ হাজার ২০০ জন। কিন্তু হাসপাতালের বেড সংখ্যা ৫০০। তার থেকে অনেক অতিরিক্ত রোগী এখানে অবস্থান করছেন। এ হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্সরা খুব আনন্দের সঙ্গে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, যার ফলে আমরা আনন্দের সঙ্গে বলতে পারি, এই হাসপাতালে একজন ডেঙ্গু রোগীরও মৃত্যু হয়নি। এটা এ হাসপাতালের স্ট্যাটিসটিকস।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই দাবির পরপরই সামনের শ্রোতার সারি থেকে উপস্থিত চিকিৎসক-নার্সরা বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘১১ জন মারা গেছেন।’
মন্ত্রীর বক্তব্যের সময়ই সেমিনারে উপস্থিত থাকা স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে একটি কাগজ তাকে দেন। ওই কাগজ দেখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তারা বলছেন এ হাসপাতালে ১১ জন মারা গেছেন, কিন্তু কতজন ডেঙ্গুজনিত কারণে মারা গেছে, তা নিশ্চিত করতে পারেননি।’
জাহিদ মালেক আরও বলেন, ‘‘এখানে বিভিন্নভাবে রোগী…যেটা ‘ওনারা’ বলছেন যে, আনকনফার্ম ডেথ, মানে ডেথ তো প্রতিদিনই প্রত্যেক হাসপাতালে দুই/চার জন করে মৃত্যুবরণ করেন বিভিন্ন কারণে। কিন্তু ‘ওনাদের’ এ পর্যন্ত ডেথের সংখ্যা ১১ জন আছেন কিন্তু ডেঙ্গুর জন্য কয়জন আছে? ওনারা যেটা বলছেন, যেটা এখনও কনফার্ম হয় নাই, কনফার্ম হলে ওনারা বলতে পারবেন।’’
সেমিনারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে উপস্থিত চিকিৎসকদের অনেকেই ডেঙ্গু ‘মহামারি’ আকার ধারণ করেছে বলে বক্তব্য রাখেন। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা মন্ত্রীর মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মহামারি বলবো না, স্বাভাবিকও বলবো না।’ তবে, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।