মা শিরিন আক্তার ও বাবা আনিসুল আমিন মিলে একটি সুখের সংসার ছিল। থাকতেন বনশ্রীর তিতাস রোডে। বাবা ব্যবসায়ী ও উচ্চশিক্ষিত মা শিরিন আক্তার। মায়ের স্বপ্ন ছিল দুই মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করে তুলবেন।
স্বপ্ন পূরণের জন্য দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে (বেইলি রোড শাখা) ভর্তি করান দু’মেয়েকে। মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে একাদশ শ্রেণিতে রায়না জেরিন এবং অষ্টম শ্রেণিতে সুমাইদা প্রথম স্থান অর্জন করেছে তারা। আর সে স্বপ্ন পূরণের মাঝ পথে কাল হয়ে দাড়ালো ডেঙ্গু জ্বর। কেড়ে নিলো মা শিরিন আক্তারের (৩৮) প্রাণ।
বুধবার (৭ আগস্ট) মায়ের স্বপ্নের কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বড় মেয়ে রায়না জেরিন।
মা পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ায় সুখের সংসারে নেমে এসেছে আঁধার। সারাদিন আহাজারি করতে করতে পার করছে এতিম দুই বোন।
শিরিনের আত্মীয়-স্বজনরা জানান, বড় স্বপ্ন ছিল দুই মেয়েকে বড় মানুষ করে গড়ার। আদরের দুই মেয়েকে নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতেন তিনি। তার চোখে একটিই স্বপ্ন ছিল দু’মেয়ে।
গেল ২৮ জুলাই (রোববার) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকার পান্থপথ বিআরবি হাসপাতালে ভর্তি করার পর ৭ দিন চিকিৎসা চলে মা শিরিন আক্তারের। ৩ আগস্ট (শনিবার) বিকেল সাড়ে ৩টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পরদিন দুপুরে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বড় মেয়ে রায়না জেরিন বলেন, মাকে হারিয়ে আমরা এতিম হয়ে গেলাম। মায়ের স্নেহের চাদর মাথার উপর থেকে সরে গেল। ক্লাসে প্রথম স্থান অর্জন করা ছিল মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল। আর শুনবো না মায়ের ডাকাডাকি, বলবে না এটা খা, ওটা খা। মাথায় হাত রাখার মতো আর কেউ থাকলো না আমাদের। সেই মা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন অনেক দুরে।
স্বপ্নচারি মাকে হারিয়ে শোকে পাথর দু’বোন। শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভিকারুননিসা সহ পুরো বাড়ীতে।