Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মসজিদে শিশুকে ধর্ষণ, হাসপাতালে গিয়ে হত্যার চেষ্টা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ আগস্ট ২০১৯, ০৭:৫৯ PM
আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০১৯, ০৭:৫৯ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


আট বছরের শিশুকে ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত ছিলেন না মসজিদের ইমমাম ফজলুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলাম। ধর্ষণ ঘটনাটি যাতে থানা পুলিশকে জানাতে না পারে সে লক্ষ্যে শিশুটির বাসার সামনে পাহারা বসানো হয়। কিন্তু এর মধ্যে শিশুটির শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। উপায়ান্ত না দেখে তার পরিবার লুকিয়ে ধর্ষণের শিকার এই শিশুটিকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখান থেকেও শিশুটিকে অপহরণ ও হত্যার জন্য কয়েক দফায় চেষ্টা করা হয়।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি মসজিদে ঝাঁড় ফুঁক ও পড়া পানি দেবার কথা বলে আট বছরের এক অসুস্থ্য শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মসজিদটির ইমাম ফজলুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়া ও হাসপাতাল থেকে ধর্ষিতা শিশুটিকে অপহরণের চেষ্টার অভিযোগে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ আরো পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।

শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার চাঁদমারি এলাকায় মাজার সংলগ্ন বায়তুল হাফেজ জামে মসজিদের তৃতীয় তলায় ইমাম ফজলুর রহমানের ব্যক্তিগত কক্ষে এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ফতুল্লার চাঁদমারি ও ইসদাইর সহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ধর্ষক ফজলুর রহমান সহ ছয়জনকে আটক করে র‌্যাব। আটককৃত অপর পাঁচজন হলেন মসজিদটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি শরীফ হোসেন, ইমামের সহযোগী রমজান আলী, গিয়াস উদ্দিন, হাবিব এ এলাহি এবং মোতাহার হোসেন।

বুধবার দুপুরে র‌্যাব-১১ অধিনায়ক (সিও) লেফটেনেন্ট কর্ণেল কাজী শামসের উদ্দিন প্রেস ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।

ধর্ষিতা শিশুটি ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী এবং ওই এলাকারই বাসিন্দা। তার বাবা একটি গার্মেন্টস কারখানার নৈশ প্রহরী ও মা গার্মেন্টস কর্মী। তাদের তিন মেয়ের মধ্যে এই শিশুটি সবার ছোট।

ধর্ষক ফজলুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলাম চাঁদমারি বায়তুল হাফেজ জামে মসজিদে ইমামতি ছাড়াও পার্শ্ববর্তী একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার সরাপাড়া গ্রামের মৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকায় স্ত্রী সন্তান সহ ভাড়ায় বসবাস করছেন।

প্রেস ব্রিফংয়ে র‌্যাব আরো জানায়, ধর্ষিতা শিশুটি বেশ কিছুদিন যাবত প্রায় রাতেই দু:স্বপ্ন দেখে ভয় পেতো। এতে শিশুটি মানসিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। স্থানীয় কয়েকজনের পরামর্শ মতে ঝাঁড় ফুঁক ও পড়া পানি আনার জন্য শুক্রবার সকালে শিশুটির বাবা চাঁদমারি এলাকায় বায়তুল হাফেজ জামে মসজিদের ইমাম ফজলুর রহমানের কাছে শিশুটিকে নিয়ে যায়। ইমাম ফজলুর রহমান এ সময় ঝাঁড় ফুঁকের জন্য আগরবাতি মোমবাতি আনার জন্য কৌশলে শিশুটির বাবাকে দোকানে পাঠিয়ে মসজিদের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়। পরে নিজের রুমে শিশুটিকে নিয়ে হাত বেঁধে ও মুখে স্কচ টেপ লাগিয়ে ধর্ষণ করে। পরে মসজিদের ছাদে পানির ট্যাংকির পানি দিয়ে শিশুটির কোমর থেকে পা পর্যন্ত ধুয়ে পরিস্কার করে দেয়।

এরপর শিশুটিকে জামাকাপড় পড়িয়ে ইমাম ফজলুর রহমান ছুরি দেখিয়ে শিশুটিকে ভয় দেখায় এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে জবাই করে হত্যার হুমকি দেয়। পরে তার বাবা এসে শিশুটিকে বাসায় নিয়ে গেলে রক্তক্ষরণ শুরু হয় এবং শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে তারা বাবা মা বুঝতে পারে। এক পর্যায়ে শিশুটি তারা বাবা মাকে ধর্ষণের বিষয়টি জানালে তারা বিকেলে ওই মসজিদে গিয়ে মুসুল্লিদের জানালে ইমামের পক্ষের লোকজন তাদের হুমকি দেয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় শিশুটিকে গুরুতর অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ শহরের জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানেও শিশুটিকে অপহরণ ও হত্যা করার জন্য কয়েক দফা চেষ্টা চালায় ইমাম অনুসারি। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালের টয়লেট ও বেডের নিচে শিশুটিকে নিয়ে তার বাবা মাকে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে।হাসপাতালের নার্সদের সহায়তায় শিশুটির বাবা বোরকা পড়ে র‌্যাব কার্য্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ দেন। পরে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়।

পরে র‌্যাব-১১ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আলেপ উদ্দিনের নের্তৃত্বে র‌্যাবের একটি দল মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল সাতটা পর্যন্ত গ্রেফতার অভিযান চালায়। প্রথমে শহরের দেওভোগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় ধর্ষক ইমাম ফজলুর রহমানকে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করে ঘটনার আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেন। তার দেয়া তথ্যমতে রাতভর অভিযান চালানো হয় চাঁদমারি ও ইসদাইর সহ ফতুল্লার বেশ কয়েকটি এলাকায়। একে একে গ্রেফতার করা হয় মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি শরীফ হোসেন সহ অপর পাঁচজনকে।

র‌্যাব-১১ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আলেপ উদ্দিন জানান, হাসপাতালের চিকিৎসক পরীক্ষা নীরিক্ষা করে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ইমামের রুম থেকে ধর্ষণের বিভিন্ন আলামতও সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, ধর্ষিতা শিশুটির শারিরীক অবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। টানা ছয়দিন যাবত তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে একাধিকবার অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছিল। তার নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে র‌্যাবের নিরাপত্তা পাহাড়ার মধ্য দিয়ে শিশুটির চিকিৎসা চলছে। এ ব্যাপারে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়া এ ঘটনায় আরো যারা জড়িত রয়েছে তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের সবাইকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Bootstrap Image Preview