Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ঝাড়ফুঁকের নামে ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণ, ইমামসহ গ্রেফতার ৬

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ আগস্ট ২০১৯, ০৭:৪৩ PM
আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০১৯, ০৭:৪৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার উত্তর চাষাড়ার চাঁনমারী এলাকায় এক মসজিদের ইমামের বিরুদ্ধে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুধবার (৭ আগস্ট) সকাল ৬টার দিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত ইমাম মো. ফজলুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলামকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১ এর সদস্যরা।

গ্রেফতারকৃত ফজলুর রহমান নেত্রকোনার কেন্দুয়ার সরাপাড়া এলাকার মৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে। এছাড়াও ওই শিশুকে হত্যা ও অপহরণের চেষ্টার অভিযোগে মো. রমজান আলী, মো. গিয়াস উদ্দিন, হাবিব এ এলাহী ওরফে হবি, মো. মোতাহার হোসেন ও মো. শরিফ হোসেন নামে ইমামের পাঁচ সহযোগীকেও গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র‌্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল কাজী শমসের উদ্দিন এ তথ্য জানান।

এ সময় লে. কর্নেল কাজী শমসের উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বোরকা পরা এক ব্যক্তি র‌্যাব-১১ এর অফিসে এসে অভিযোগ দেন, তার মেয়ে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ নগরীর ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার মেয়েকে এক মসজিদের ইমাম ধর্ষণ করেছে। ধর্ষণের পর ইমামের অনুসারীরা তার মেয়েকে ও তাকে মেরে ফেলার জন্য বার বার হাসপাতালে গিয়ে খুঁজছে। পরে ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যান র‌্যাবের সদস্যরা। পরে ধর্ষণের শিকার শিশু ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পেয়ে দুইদিনের প্রচেষ্টায় বুধবার সকালে অভিযুক্ত ইমাম মো. ফজলুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি আরও জানান, গ্রেফতার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার শিশুটির বয়স আট বছর। সে মাদরাসায় ২য় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। শিশুটি রাতের বেলায় দুঃস্বপ্ন দেখে কান্নাকাটি করত। বিভিন্ন প্রকার কবিরাজি চিকিৎসা করে ভালো না হওয়ায় ওই শিশুর বাবা জানতে পারেন যে, ইমাম মো. ফজলুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ঝাড়ফুঁক ও পানি পড়া দেন। এরই প্রেক্ষিতে ওই শিশুর বাবা তার মেয়েকে এর আগে ২ থেকে ৩ বার ফজলুর রহমানের কাছে ঝাঁড়ফুক করিয়ে নেন। তারপরও তেমন উপকার না হওয়ায় ফজলুর রহমান ওই শিশুর বাসায় গিয়ে ‘বাড়ি বন্দি’ নামক চিকিৎসা দিয়ে আসে। পরে ঘটনার আগের দিন মাগরিবের সময় ওই শিশুর বাবা ফজলুর রহমানকে ফোন দিয়ে মেয়ের চিকিৎসার ব্যাপারে আসতে চাইলে সে পরের দিন ফজরের আজানের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে আসতে বলে।

লে. কর্নেল কাজী শমসের উদ্দিন জানান, পরদিন সকালে ওই শিশুর বাবা মেয়েকে নিয়ে মসজিদে যান। ফজরের নামাজের পর শিশুটি ও তার বাবাকে নিয়ে মসজিদের ৩য় তলায় ইমামের বেড রুমে নিয়ে যান। এরপর হালকা ঝাড়ফুঁক করে পরিকল্পিতভাবে ওই শিশুর বাবাকে ভোর ৫টা ২০ মিনিটের দিকে এক প্যাকেট আগরবাতি ও একটি মোমবাতি আনার জন্য বাইরে পাঠিয়ে দেন ইমাম। ওই সময় দোকানপাট খোলা না থাকায় শিশুটির বাবা কোনোভাবেই মমবাতি ও আগরবাতি কিনতে পারছিলেন না। এর মধ্যে সময় ক্ষেপণ করার জন্য ফজলুর রহমান শিশুটির বাবাকে ফোন করে একটি পান আনতে বলেন ও মসজিদের মোয়াজ্জিনকে ফোন করে নিচের গেটে তালা মারতে বলেন।

ভিকটিমের বাবা ফিরে আসতে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় নেন। এর মাঝে শিশুটির দুই হাত পেছনে বেঁধে ও মুখে টেপ মেরে নির্মমভাবে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় এবং প্রমাণ মুছে ফেলার জন্য মসজিদের ছাদে নিয়ে শিশুটিকে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে দেয়া হয়। এরপর শিশুটির গলায় ছুরি ধরে তার বাবা-মাকে বিষয়টি না বলার জন্য হুমকি দেয়া হয় এবং বললে জবাই করে ফেলবে বলে হুঁশিয়ার করা হয়। শিশুটি অসুস্থ হয়ে গেলে তাড়াহুড়া করে তার বাবাকে বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় করে দেয় ইমাম।

এরপর শিশুটি বাসায় গিয়ে তার বাবা-মাকে সবকিছু খুলে বলে। একপর্যায়ে শিশুটি ধীরে ধীরে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে ভুক্তভোগী পরিবারটি শিশুটিকে নিয়ে মসজিদে এসে বিচার দিলে মসজিদ কমিটির কিছু লোক ও ইমামের ভক্তরা তাদের মারাত্মকভাবে হেনস্থা করে। ইমাম ফজলুর রহমান তার অনুসারীদের দিয়ে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যাতে ভুক্তভোগী পরিবারটি থানা বা হাসপাপতালে যেতে না পারে। এরপর শিশুটির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে নারায়ণগঞ্জের জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে গোপনে ভর্তি করা হয়।

ফজলুর রহমান ও তার অনুসারীরা শিশুটিকে হত্যা ও অপহরণ করতে কয়েক দফা চেষ্টা চালায়। শিশুটিকে হাসপাতালে লুকিয়ে রেখে তার বাবা-মাকে দীর্ঘ সময় ধরে হাসপাতালের টয়লেট ও বেডের নিচে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। একপর্যায়ে শিশুটির বাবা হাসপাতালের নার্সের বোরকা পরে র‌্যাব অফিসে এসে অভিযোগ দেন। শিশুটিকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের চেষ্টা ও পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে ফজলুর রহমানের অনুসারী পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল কাজী শমসের উদ্দিন বলেন, ফজলুর রহমান র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। এ বিষয়ে ফতুল্লা থানায় ওই শিশুর বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া অফিসার) মো. আলেপ উদ্দিন ও সহকারী পুলিশ সুপার মো. মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

Bootstrap Image Preview