Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কাশ্মীর

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ আগস্ট ২০১৯, ০৮:০০ PM
আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০১৯, ০৮:০০ PM

bdmorning Image Preview


ভারতের সংবিধানে অধিকৃত কাশ্মীরকে যে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল, তা তুলে নেওয়ার পর থেকে দেশের অন্যান্য জায়গার সঙ্গে অঞ্চলটির যোগাযোগ একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।

রোববার সন্ধ্যা থেকে বন্ধ করা ইন্টারনেট ও টেলিফোন নেটওয়ার্ক এখনো সচল হয়নি; উপত্যকাটির বিভিন্ন সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাজার হাজার সদস্যের টহল অব্যাহত আছে।

বিবিসি বলছে, সংবিধানের ওই বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ঘটনা কাশ্মীরজুড়ে তুমুল বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের বিস্ফোরণ ঘটাবে বলে ধারণা করা হলেও মানুষ সেখানে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে তার কোনো খবর মিলছে না।

স্থানীয় নেতারা এখনও আটকাবস্থাতেই আছেন।

১৯৪৭ এর পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই হিমালয় অঞ্চলের কাশ্মীরকে নিজেদের বলে দাবি করে এলেও নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদ এখন অঞ্চলটির আলাদা দুটি অংশের নিয়ন্ত্রক।

ভারতশাসিত অংশে দীর্ঘদিন ধরেই বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন সংগঠনের তৎপরতাও দেখা গেছে, যাতে প্রাণ হারিয়েছে হাজার হাজার লোক।

শ্রীনগরে বিবিসির প্রতিনিদি আমির পীরজাদা সোমবার দিল্লিতে থাকা সহকর্মীদের সঙ্গে টেলিফোনে কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন।

“রাজ্যের অন্য অংশে কী হচ্ছে কেউ জানে না। আমরা কারও সঙ্গে কথাও বলতে পারছি না। মানুষজন উদ্বিগ্ন- তারা জানে না কী ঘটছে; তারা জানে না কী ঘটতে যাচ্ছে,” বলেছেন তিনি।

ভারতের অন্যান্য অংশে থাকা কাশ্মীরিরাও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পারার কথা জানিয়েছেন; বলেছেন উদ্বেগ আর আতঙ্কের কথা।

দিল্লিতে থাকা কাশ্মীরের এক শিক্ষার্থী জানান, তিনি পরিবারের সদস্যদের খোঁজ নিতে স্থানীয় থানাতেও ফোন দিয়েছেন; কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারতশাসিত কাশ্মীরের জনগণের অনেকেই এতদিন সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের কারণেই ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার যৌক্তিকতা খুঁজে নিত।

কিন্তু বিজেপি সরকার আইনি বাধ্যবাধকতাসহ সংবিধানের এ বিশেষ মর্যাদা তুলে নিয়ে দিল্লির সঙ্গে এ এলাকার সম্পর্ককে একেবারে খাদের কিনারায় নিয়ে গেছে।

৩৭০ অনুচ্ছেদ জম্মু ও কাশ্মীরকে অনেক ক্ষেত্রেই স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিল; এ অনুচ্ছেদের ফলে কাশ্মীরিদের নিজস্ব সংবিধান, আলাদা পতাকা ও স্বতন্ত্র আইন বানানোর অধিকার ছিল। রাজ্যটির কেবল পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে।

ওই অনুচ্ছেদের বলেই কাশ্মীর স্থায়ী বাসিন্দা নির্ধারণ, সম্পত্তির মালিকানা ও মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত আলাদা আইন তৈরি করেছিল। সেসব আইনে ভারতের অন্য এলাকার বাসিন্দাদের কাশ্মীরের জমি-সম্পদ ক্রয় কিংবা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসে নিষেধাজ্ঞা ছিল।

পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে উত্তেজনা ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতার কারণে উপত্যকাটিতে এমনিতেই বিপুল পরিমাণ সেনা মোতায়েন থাকতো। সোমবার ভারতের রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার পর সেখানে আরও সৈন্য পাঠানো হয়।

পর্যটক এবং হিন্দু তীর্থযাত্রীদের আগেই এলাকাটি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়; স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয়। এভাবে পরিকল্পনা বিষয়ে সামান্য ইঙ্গিত না দিয়েই ভারত সরকার তড়িঘড়ি করে ওই অনুচ্ছেদটি বাতিল করে দেয়।

পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা গত কয়েক মাস ধরেই খাদ্য মজুদ করে রাখছিল বলে ওই এলাকার সাংবাদিকরা জানিয়েছেন।

রোববার রাতেই কাশ্মীরের দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে গৃহবন্দি করা হয়; ইন্টারনেট ও টেলিফোন যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ওই এলাকা কার্যত একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে; সেখানকার পরিস্থিতি কিংবা সেখানে কী ঘটছে কিছুই জানা যাচ্ছে না।

টেলিফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগ কখন চালু হবে এ বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত না মিললেও ওই এলাকায় লোকজনকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

Bootstrap Image Preview