Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দপ্তরির কানের পর্দা ফাটিয়ে পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টায় এসআই

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ আগস্ট ২০১৯, ১০:১৬ PM
আপডেট: ০৫ আগস্ট ২০১৯, ১০:১৬ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে পুলিশের এক উপপরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক দপ্তরিকে মারধর করে কানের পর্দা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, জামিরুল নামে ওই এসআই ইয়াবা দিয়েও ফাঁসাতে চেয়েছিলেন তাকে। পরে তা মাত্র আড়াই হাজার টাকায় দফারফা করা হয় বলে অভিযোগ মো. উবায়দুল্লাহ নামে ওই দপ্তরির।

আজ সোমবার এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নির্যাতনের শিকার সদর উপজেলার খাকচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি উবায়দুল্লাহ।

এর আগে গতকাল রোববার পুলিশের সদর সার্কেল অফিসে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন ও রেজাউল কবিরের কাছে অভিযোগ করেন তিনি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তার পক্ষে অভিযোগ করেন।

উবায়দুল্লাহর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শনিবার রাত ১০টার দিকে এসআই জামিরুলের নেতৃত্বে ৬ জনের একটি পুলিশ দল খাকচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন। দপ্তরির কক্ষে গিয়ে বশির নামে কেউ আছে কী না জানতে চান তারা।

এ নামে কেউ নাই বললেও ওই এসআই দপ্তরি উবায়দুল্লাহর পকেটে হাত দিয়ে তল্লাশী শুরু করেন। কিছু না পেয়ে তারা বাচ্চু নামে কেউ আছে কী না খোঁজ করতে থাকেন। পরে উবায়দুল্লাহকে পুরো স্কুলের শ্রেণিকক্ষের দরজা খুলতে নির্দেশ দেন। কথামতো দরজা খুলে দিলেও সেখানে কাউকে না পেয়ে তারা আবারও উবায়দুল্লাহর কক্ষে ফেরত আসেন।

এ সময় তারা আবারও তার পকেট তল্লাশী করেন। এর মদ্যেই কৌশলে পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দেয় তারা। এ সময় এসআই জামিরুল তাকে গালাগাল দিয়ে বলেন, ‘তুই ইয়াবা ব্যবসা করছ, আর কোথায় কোথায় ইয়াবা আছে বল। ’

এ ছাড়া নারী শিক্ষকদের কক্ষে হিজাব ও কাপড় দেখে এবং শিশু শ্রেণির কক্ষে চাটাই দেখে তাকে নারী ব্যবসায়ী বলেও গালাগাল করেন তিনি।

সে সময় জামিরুল আরও বলেন, ‘তুই এখানে মাইয়া নিয়া আড্ডা দেছ, (….) ব্যবসা করছ।’

এসব কথা বলার পর পরই উবায়দুল্লাহর দুই কান ও মাথায় এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন এসআই জামিরুল ও তার সঙ্গীয় ফোর্স। তাদের মারধরের কারণে উবায়দুল্লাহর কানের পর্দা ফেটে যায়। পরে হাতকড়া পরিয়ে বাচ্চুকে বের করে দিতে বলে তার মোবাইল নিয়ে যান। এ সময় উবায়দুল্লাহর সঙ্গে থাকা তার ভাতিজাকেও আটক করেন এসআই।

এ ঘটনার পর উবায়দুল্লাহর কাছে টাকা দাবি করেন এসআই জামিরুল। টাকার জন্যে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আবু তালেবকে উবায়দুল্লাহর মোবাইল দিয়ে ফোন করেন। পরে তিনি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি বুঝে উবায়দুল্লাহর বাবা ক্বারী নূরুল ইসলামকে ফোন করে আড়াই হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলেন। টাকা নিয়ে তিনি স্কুলে গেলে তার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন এসআই।

এ ঘটনা কাউকে বললে উবায়দুল্লাকে মাদকদ্রব্য দিয়ে ফাঁসিয়ে দেবেন হুমকি দিয়ে ওই টাকা নিয়ে চলে যান এসআই জামিরুল।

গতকাল রোববার উবায়দুল্লাকে জেলা সদর হাসপাতালে ও পরে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায় পরিবার। চিকিৎসক এবিএম মুছা চৌধুরী জানান, ওবায়দুল্লাহর কানের আঘাত গুরুতর। প্রচণ্ড আঘাতে তার কানের পর্দা ফেটে গেছে। উবায়দুল্লাহও জানান, তিনি এখন কানে শুনছেন না।

পরে বিষয়টি প্রথমে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানান। রোববার রাতে পুলিশের সদর সার্কেল অফিসে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে গেলে পুরো ঘটনাকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন এসআই জামিরুল।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে পরামর্শ দেন।

এসআই জামিরুলের বিরুদ্ধে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে টাকা হাতানোর অনেক অভিযোগ আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে। ‘ধরো-খাও-ছাড়ো’ এই নীতিতে চলায় তিনি ওই এলাকায় ব্যাপক সমালোচিত। জেলা পুলিশের পদস্থ এক কর্মকর্তার আত্মীয় ও নিজের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় হওয়ায় জামিরুল ক্ষমতার অপব্যবহার করেন বলে অভিযোগ সদর উপজেলাবাসীর।

Bootstrap Image Preview