রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় প্রধান সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে প্রচণ্ডভাবে শারীরিক নির্যাতন করেই আসামি হিসেবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছে। গতকাল মা, বোনসহ পরিবারের সদস্যরা কারাগারে সাক্ষাৎ করতে গেলে মিন্নি তাদের কাছে এমন অভিযোগ করেন।
পরিবারের সদস্যদের কাছে এ এস আই রিতার নেতৃত্বে নির্যাতন চালানোর বর্ণনাও দিয়েছেন নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নি। মেয়ের মুখ থেকে শোনা নির্যাতনের ঘটনা সাংবাদিকদের বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মিন্নির মা জিনাত জাহান।
পুলিশ কীভাবে নির্যাতন চালিয়েছে, জেলা প্রশাসকের কাছে মিন্নি তা তুলে ধরেছেন। মিন্নির মা জিনাত জাহান মনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার মেয়ে আমাকে বলেছে, ১৬ জুলাই পুলিশ মিন্নিকে বাড়ি থেকে নিয়ে এসে ১২-১৩ ঘণ্টা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। পুলিশ লাইনে একটি কক্ষে এ এস আই রিতার নেতৃত্বে ৪-৫ জন পুলিশ তাকে শারীরিক নির্যাতন করেছে, মারধর করেছে।
এ সময় পানি পান করতে চাইলে তাকে পানিও পান করতে দেওয়া হয়নি। মিন্নির বরাত দিয়ে তার মা জানায়, গ্রেফতার দেখানোর পরে রাতে পানির সঙ্গে ইয়াবা ট্যাবলেট মিশিয়ে তাকে পানি খেতে দেওয়া হয় বলে মিন্নি আমাদের বলেছে। একটি সাদা কাগজে লিখিত বক্তব্য দিয়ে তাকে মুখস্থ করতে পুলিশ বার বার চাপ দিয়েছে। যতক্ষণ মুখস্থ বলতে না পেরেছে ততক্ষণ পর্যন্ত রিতা ও তার সহযোগীরা তাকে নির্যাতন করে। পুলিশ মিন্নিকে ভয় দেখিয়ে বলে লিখিত বক্তব্য আদালতে না বললে তার বাবা-মা ও চাচাদের ধরে আনা হবে।
মিন্নির মা আরও জানান, মিন্নির বাবাকে আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি গিয়ে পুলিশ খুঁজছে। নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার কথাও সাংবাদিকদের জানান মিন্নির মা। মিন্নির সঙ্গে সাক্ষাতের পর তার পরিবারের সদস্যরা জেল গেটে সাংবাদিকদের জানান, রবিবার কারাগারে পরিদর্শনে এসে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ মিন্নির খোঁজখবর নেন।
গত ২৬ জুন রিফাতকে প্রকাশ্য সড়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরদিন রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে যে মামলাটি করেন, তাতে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল।