Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

হাটে দাঁড়িয়েই চেনা যাবে ‘ইনজেকশন গরু’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ আগস্ট ২০১৯, ০৪:৩৩ PM
আপডেট: ০৫ আগস্ট ২০১৯, ০৪:৩৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


কৃত্রিমভাবে মোটা করা গরুর মাংস মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ কারণে এসব পশু কোরবানি দেওয়া উচিত নয়। তবে বেশিরভাগ সাধারণ গৃহস্থ কোনটি প্রাকৃতিক আর কোনটি কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা হয়েছে, তা বুঝতে পারেন না। তবে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল করলেই এই পার্থক্য ধরা সম্ভব-

১. আঙুলের চাপ : কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর গা ‘পানি নামা’ রোগীর শরীরের মতো ফুলে থাকে। এই গরুর গায়ে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ওই স্থানের মাংস দেবে যায় এবং আগের অবস্থায় ফিরে আসতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে মোটা করা পশুর গায়ে চাপ দিলে মাংস খুব বেশি দেবে যাবে না এবং যতটুকু দেবে যাবে, তা সঙ্গে সঙ্গে আগের অবস্থায় চলে আসবে।

২. ঘন শ্বাসপ্রশ্বাস: কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ করে। একটু হাঁটলেই হাঁপায়। খুবই ক্লান্ত দেখায়।

৩. রানের মাংস: ইনজেকশন দেওয়া গরুর রানের মাংস স্বাভাবিক গরুর রানের মাংসের চেয়ে অনেক নরম থাকে।

৪. লালা বা ফেনা: যেসব গরুর মুখে কম লালা বা ফেনা থাকে, সেই গরু কেনার চেষ্টা করুন। এগুলো কৃত্রিম উপায়ে মোটা করা পশু নয়।

৫. খুব ক্লান্ত দেখায়: সুস্থ গরু একটু চটপটে থাকে। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু শরীরে পানি জমার কারণে নড়াচড়া কম করে।

৬. হাড় বেরিয়ে পড়া: যেসব গরুর চেহারা স্বাভাবিক উষ্কখুষ্ক এবং চামড়ার ওপর দিয়ে হাড় বেরিয়ে থাকে, সেগুলো সুস্থ ও প্রাকৃতিকভাবে মোটা করা গরুর লক্ষণ। বেশি চকচক করা গরু বা ছাগলের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে।

৭. নাকের ওপরের অংশ ভেজা: সুস্থ গরুর নাকের ওপরের অংশ ভেজা বা বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা থাকবে। অন্যদিকে অসুস্থ গরুর নাক থাকবে শুকনা।

৮. তাপমাত্রা: গরুর শরীরে হাত দিয়ে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মনে হলে বুঝতে হবে গরুটি অসুস্থ।
ওপরের এই বিষয়গুলো লক্ষ রাখলে কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু এড়ানো সম্ভব হবে। স্টেরয়েড দিয়ে মোটাতাজা করা গবাদিপশুর মাংস অত্যন্ত বিপজ্জনক। এ জাতীয় ওষুধ অতিরিক্ত মাত্রায় দিলে গরুর কিডনি ও যকৃৎ অকার্যকর হয়ে যায়। এতে শরীর থেকে পানি বের হতে পারে না। এতে পানি সরাসরি গরুর মাংসে চলে যায়। এতে গরুকে মোটা, তুলতুলে ও নাদুসনুদুস দেখায়।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (ডেইরি ও পোলট্রিবিজ্ঞান) ড. এ কে এম হুমায়ুন কবির বলছেন, মোটাতাজাকরণের এসব ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হয় না। গরুর দেহের মাংসে রয়ে যায়। এসব মাংস যখন মানুষ খায়, তখন ওই সব ওষুধের প্রতিক্রিয়া মানুষের শরীরেও দেখা দেয়।

স্টেরয়েড ওষুধ মানবদেহের কিডনি, ফুসফুস, লিভার, হৃৎপিণ্ডকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মানবদেহের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। ফলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অনিদ্রা, অস্থিরতাসহ নানা রোগের সৃষ্টি করে। এতে মানুষের শরীরে পানি জমে যাওয়া, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, মূত্রনালি ও যকৃতের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, হরমোন দিয়ে মোটাতাজা করা গরুর মাংস খেলে মানবদেহে এসব হরমোন মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। মানবদেহে প্রতিনিয়ত প্রকৃতিগতভাবে হরমোন তৈরি হচ্ছে। ক্ষতিকর হরমোন পরোক্ষভাবে শরীরে ঢুকলে এই হরমোনগুলো মানবশরীরে নানা রোগ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে অল্পবয়সী বা ছোট শিশুদের মারাত্মক ক্ষতি হয়।

এসব হরমোন বা স্টেরয়েড শিশুদের মস্তিষ্ক ও যৌনাঙ্গ গঠনে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে মাংসের মাধ্যমে গ্রহণ করা স্টেরয়েড নানা অসুখ ডেকে আনতে পারে। এসব ক্ষতিকর ওষুধ মানবশরীরে জমা হয়ে টিউমার, ক্যানসার, কিডনি নষ্ট করার মতো মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে নারীদের গর্ভধারণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যোগ করেন ড. এ কে এম হুমায়ুন কবির।

Bootstrap Image Preview