বিএসটিআই নিবন্ধিত পাস্তুরিত দুধে ‘মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান’ থাকার অভিযোগের পেছনে ‘আমদানিকারকদের কারসাজি’ আছে কি না- তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সভায় লন্ডন থেকে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সমসায়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গের সঙ্গে পাস্তুরিত দুধ নিয়েও কথা বলেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই দুধ পরীক্ষা করে একজন বলে দিল যে, দুধ ব্যবহারযোগ্য নয়। সঙ্গে সঙ্গে রিট করা হয়। সে কারণে বলে দেওয়া হয় পাঁচ সপ্তাহ দুধ ব্যবহার করা যাবে না বা পাস্তুরিত করা যাবে না!
সরকার যখন দুধের খামার করে গ্রামের মানুষকে স্বনির্ভর হতে উৎসাহিত করছে, পাশাপাশি দেশের চাহিদা মিটিয়ে খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে জোর দিচ্ছে, তখনই ‘হঠাৎ এক একেটা তথ্য দিয়ে’ দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচির পথে কেন ‘বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে’- সেই প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এখানে আমার মনে হচ্ছে আমদানিকারক যারা, তাদের কোনো কারসাজি আছে কি না, এটাও দেখা উচিত বা তারা কোনোভাবে উৎসাহিত করছে কি না।
দুধে এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি নিয়ে ‘গুজব ছড়িয়ে’ রপ্তানি কাজে সমস্যা সৃষ্টি করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা এই বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত দেন, তাদেরও ভাবা উচিৎ, ভেবে দেখা উচিৎ, যে হঠাৎ একটা কথা বলে গুজব ছড়িয়ে আমাদের রপ্তানি কাজে সমস্যা সৃষ্টি করা, দেশের মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যাক… এই আতঙ্ক সৃষ্টি করা বা দেশে উৎপাদিত পন্যের মান সম্পর্কে কথা বললে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। কাজেই এইসব বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে তথ্য নিয়ে ব্যবস্থা করা উচিত। তবে গুজব যারা ছড়াবে বা এই ধরণের মিথ্যা তথ্যদিয়ে যারা বিভ্রান্ত করবে, তাদের উপর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধে দুই দফা পরীক্ষা চালিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন।
এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নানা মহলের রোষানলে পড়েন তিনি। গবেষণা নিয়ে আলোচনা হয় সংসদেও। দুধের প্রতিবেদন নিয়ে নানা মহল থেকে তাকে চাপ দেওয়া হয় বলেও গণমাধ্যমে অভিযোগ করেন অধ্যাপক ফারুক। এ নিয়ে হাইকোর্টে রিটও হয়।
এদিকে আদালতের নির্দেশ অনুসারে বিএসটিআই এর লাইসেন্স পাওয়া পাস্তুরিত দুধের নমুনা পরীক্ষা করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের ল্যাবরেটরি, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি এবং বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায়, এসব নমুনায় সিসা ও অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে গত রবিবার (২৮ জুলাই) হাইকোর্ট ১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধের উৎপাদন, সরবরাহ, ক্রয়-বিক্রয় আগামী পাঁচ সপ্তাহের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। তবে এরই মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন মিল্কভিটা দুধ বাজারজাত করার ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।