Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শিক্ষার্থীদের নদী পারাপারে কোনো ভাড়া নেন না যমুনা চরের মাঝিরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০১৯, ০৩:৫০ PM
আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯, ০৩:৫০ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


যমুনা নদী পেরোলে শেষ সীমানায় দুর্গম চর এলাকা। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। যমুনার মূল নদীতে পানি বেড়ে চারদিকে ছড়িয়ে গেছে। চরের পুরো এলাকা ভাসছে পানিতে। কিছুদিন আগেও এখানকার ঘরের মধ্যেও ছিল পানি। এটাই সিরাজগঞ্জ সদরের পাশেই চর এলাকার কাওয়াকোলা ইউনিয়ন।

সেখানকার বন্যিচর, খয়াপাড়া, ষোলসন, বেড়াকনা, ছোট কয়ড়া, দোগাছি, বয়ড়া, বড় কয়ড়া-সবই চর এলাকা। কিন্তু এখন যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। পানিবন্দি মানুষের কাছে নেই পর্যাপ্ত খাবার। শুকনো লাকড়ির অভাবে তাদের একবেলা রান্না হয় তো অন্য বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। অসহায়ত্ব নিয়ে জীবন পার করছে এসব বানভাসি মানুষ।

কাওয়াকোলা চরের নির্মাণাধীন আশ্রয় প্রকল্পের জন্য বালু দিয়ে উঁচু করা হয়েছে, আর তার পাশেই ভিড়িয়ে রাখা আছে ছোট ছোট বেশ কিছু নৌকা। এসব চরের মানুষ এক চর থেকে অন্য চর অথবা সিরাজগঞ্জ শহরে যাতায়াতের একমাত্র বাহন এই নৌকা। বলা চলে এটি একটি ছোট নৌকার ঘাট।

কিন্তু এত অভাব অনটনের মাঝেও এই ঘাটের মাঝিরা ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের স্কুলে পৌঁছে দিতে ও স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নদী পারাপারের সময় নেন না কোনো ভাড়া।

কারণ, স্কুলে যেতে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের একমাত্র বাহন হলো নৌকা। এ অঞ্চলের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই পাশের চরের বন্যি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। পুরো এলাকাই পানিতে ডুবে থাকায় প্রতিদিন নৌকাতেই যাতায়াত করতে হয় তাদের।

তেমনই প্রতিদিন নৌকায় যাতায়াত করা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মরিয়ম খাতুন। তার বয়স ১০ বছর, সে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। এ বিষয়ে মরিয়ম বলেন, আমরা নৌকাতে করে স্কুলে যাতায়াত করি, কিন্তু তার জন্য নৌকার মাঝিরা আমাদের কাছে ভাড়া বাবদ কোনো টাকা নেয় না। অন্যসব যাত্রীদের কাছে ভাড়া নেয়া হলেও এখানে যারা শিক্ষার্থী তারা ফ্রি যাতায়াত করতে পারে। কোনো মাঝিই ছোট শিক্ষার্থীদের কাছে ভাড়া নেয় না। এতে করে আমাদের খুবই ভালো হয়। কোনো টাকা ছাড়াই স্কুলে প্রতিদিন যাওয়া-আসা করতে পারি।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, চরের সব মানুষ গরিব, হতদরিদ্র। এমনিতেই তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করানোর আগ্রহ কম। কারণ তাদের অভাবের সংসার। এর মধ্যে যারা তাদের সন্তানদের পড়ালেখা করায় তারও তেমন একটা খরচ চালাতে চায় না। তাই সন্তানকে যদি পড়ালেখা করার জন্য স্কুলে পাঠাতে প্রতিদিন ১০-২০ টাকা নৌকা ভাড়া লাগে তাহলে সন্তানদের তারা স্কুলেই পাঠাবে না। তাই চরের মানুষের অভাবের কথা মাথায় রেখে এসব ছেলে-মেয়েদের কাছে থেকে মাঝিরা ভাড়া বাবদ কোনো টাকা নেন না। এটা আসলে সবাই করে মানবিক কারণে।

এছাড়াও তিনি আরও বললেন, চরের মানুষ গরিব, অসহায়, হতদরিদ্র কিন্তু তাদের মন অনেক বড়।

এ বিষয়ে নৌকা মাঝি মোহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের এখানে যত নৌকা আছে তারা কেউই ছাত্র-ছাত্রী বা শিক্ষার্থীদের কাছে ভাড়া বাবদ কোনো টাকা নেয় না। অন্য যাত্রীদের কাছে ১০-২০ টাকা ভাড়া নেয়া হলেও তাদেরকে ফ্রি স্কুলের চরে পৌঁছে দেয়া হয়। আর ফেরার পথেও কোনো ভাড়া ছাড়াই আনা হয়। এতে শিক্ষার্থী ও তাদের অভাবি অভিভাবকরাও খুব খুশি থাকে। আমাদেরও ভালো লাগে এই কাজ করতে।

তিনি আরও বলেন, বিনা টাকায় তাদের যাতায়াত করাতে আমাদের লোকসান হয়। কিন্তু চরের অভাবি মানুষের কথা ভেবে আমরা তা করি আর এটা যদি আমরা না করি তাহলে চরের দরিদ্র পরিবারের এসব ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখাই করা হবে না।

Bootstrap Image Preview