টানা আট দিন চিকিৎসার পর অবশেষে মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনির শিকার ভ্যানচালক মিনু মিয়া (৩০)।
সোমবার (২৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিনুর চাচাতো ভাই জয়লান আবেদীন। তিনি বলেন, ছটফট করতে করতে আজ সকালে আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে মিনু চলে গেল। তার স্ত্রী বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ ও হাসপাতালের প্রক্রিয়া শেষে লাশ বাড়িতে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
জয়লান আবেদীন আরও বলেন, ভ্যান চালিয়ে অত্যন্ত কষ্টে জীবনযাপন করত মিনু। সে খুবই সহজসরল ছিল। তার পরিবারের ছয় বছরের এক ছেলে এবং পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রয়েছে। এবারের বন্যার তার বাড়িঘর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম বলেন, টেপিবাড়ি এলাকার মিনু মিয়া কালিহাতীর সয়া হাটে মাছ ধরার জাল কিনতে গিয়ে ছেলেধরা গুজবে অমানবিক গণপিটুনির শিকার হন। ফেসবুকে গণপিটুনির ভাইরাল হওয়ায় ভিডিওতে দেখা যায়, মিনু বারবার পরিচয় দিচ্ছিলেন। তবুও মারপিট থেকে বাঁচতে পারেননি।
কালিহাতী থানার ওসি হাসান আল মামুন মিনুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মিনু মিয়ার ভাই থানায় মামলা দায়ের করেছে। এ পর্যন্ত মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিনুর মৃত্যুর সার্টিফিকেট পাওয়ার পর মামলাটিকে হত্যা মামলায় দেখানো হবে।
জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানান ওসি।
উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা সয়া হাটে ছেলেধরা গুজবে নির্মম গণপিটুনির শিকার হন ভ্যানচালক মিনু মিয়া। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
অবস্থার অবনতি হলে মিনুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
২২ জুলাই রাতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয় জনকে গ্রেপ্তার করে কালিহাতী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, কালিহাতী উপজেলার নাগা চৌধুরীবাড়ী গ্রামের মাইনুল হক হিটু (৩৭), নাগা গ্রামের প্রভাত চন্দ্র মালু (১৯), ওই গ্রামের শিশির আহম্মেদ খান (৩২), মিজানুর রহমান তালুকদার (৪৭), ওমর (৩২) এবং পালিমা আলামিন ইসলাম (১৯)। গ্রেপ্তার ছয় জনের মধ্যে চারজনের একদিন করে রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন আদালত।