মোবাইলে এক কিশোরের তোলা ছবির ওপর ভিত্তি করে একটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করল পুলিশ। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুইজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তারা হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছেন।
অপর দুই পেশাদার খুনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নজরদারিতে রাখা হয়েছে নিহতের চাচা বিজিবি সদস্য সাদেক মিয়াকে।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লা দুই আসামীর স্বীকারোক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, চুনারুঘাট উপজেলার পাট্টাশরিফ গ্রামের দুলাল মিয়া ৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। জমিটি তার চাচা বিজিবি সদস্য সাদেক মিয়ার বাড়ির সামনে। জমিটির ওপর লোভ ছিল সাদেক মিয়ার। জমিটি পেতে তিনি ভাতিজার বিরুদ্ধে মামলাও করেন। এতে কাজ না হওয়ায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ঢাকায় তার পরিচিত পেশাদার খুনিদের সঙ্গে পরিকল্পনা করেন।
তিনি জানান, সে অনুযায়ী ১৭ জুন একটি মাইক্রোবাসে চুনারুঘাটের পাট্টাশরিফ গ্রামে যায় তারা। সেখানে তাদের সহযোগিতা করে সাদেক মিয়ার ভাগনে আফরাজ মিয়া। ঘটনার সময় দুলাল মিয়া একটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে স্থানীয় শাকির মোহাম্মদ বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে আসামিরা তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়।
পুলিশ সুপার আরো জানান, এ সময় গ্রামে মাইক্রোবাস দেখে এক কিশোর মোবাইলে গাড়িটির ছবি তুলে। পথে দুলাল মিয়া পানি পান করতে চাইলে তাতে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে খাইয়ে দেওয়া হয়। পরে ঢাকায় সিকদার মেডিকেলের পেছনে নিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে হত্যার পর মরদেহ বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয় তারা।
১৮ জুন হাজারীবাগ থানা পুলিশ দুলাল মিয়ার পরিচয় না পাওয়ায় বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করে। এ ঘটনায় হাজারীবাগ থানায় পুলিশ একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
এর আগে ১৯ জুন দুলাল মিয়ার ছোট ভাই ইদু মিয়া বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে চুনারুঘাট থানায় অপহরণ মামলা করেন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, দুলালের পরিবারের অবস্থা জেনে তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দেন। তিনি তদন্তটি সম্পূর্ণ নিজে তত্ত্বাবধান করেন। একপর্যায়ে খবর মেলে অপহরণের সময় ওই গ্রামের এক কিশোর মাইক্রোবাসের ছবি তুলেছিল। তার কাছ থেকে ছবি নিয়ে পুলিশ মহাসড়কে বিভিন্ন টোল প্লাজায় সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে। ভৈরব সেতুর সিসিটিভির ফুটেজে ওই গাড়িটির মিল পাওয়া যায়। সে সূত্র ধরে মাইক্রোবাসের চালক ভোলা জেলার লালমোহন থানার টিটিয়া গ্রামের ইউসুফ সরদারকে ১৪ জুলাই ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকার রায়ের বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয় কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার টামনিকোনা পাড়া গ্রামের মামুন মিয়াকে।
পুলিশ সুপার জানান, নিহত দুলালের চাচা সাদেক মিয়া ৫১ বিজিবিতে কর্মরত আছেন। তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যে কোনো সময় গ্রেপ্তার করা হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে এ ঘটনায় আরো কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার মামুন ও ইউসুফ ১৫ জুলাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ১৬ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয় ভাড়াটিয়া খুনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন ও বরিশালের গৌরনদী উপজেলার গৌরবর্ধন গ্রামের শামীম সরদারকে। এর আগে ৩০ জুন সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল অপহরণের অন্যতম সহযোগী সাদেক মিয়ার ভাগনে আফরাজ মিয়াকে।