Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ডেঙ্গু রোগীর হিসাব নিয়েও চলছে নয়ছয়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০১৯, ১০:৪৮ AM
আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯, ১০:৪৮ AM

bdmorning Image Preview


রাজধানীতে বিগত ২৪ ঘণ্টায় ১৭১ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে। তবে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি যেসব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য সংগ্রহ করেছে, সেই তালিকায় নাম নেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ)।

জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন ৫০ ডেঙ্গু রোগী। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আমাদের সময়।

কিন্তু গত রবিবার ভোরে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে লাবণ্য আলীনা কাজী নামে চার বছরের যে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে, মৃতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি সেই নাম। তাই সরকারি হিসাবে ডেঙ্গুতে যে পরিমাণ মৃত্যুর কথা বলা হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলেই অনেকের ধারণা।

এ বিষয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, ‘সরকারিভাবে ডেঙ্গু রোগীর যেই পরিসংখ্যান প্রকাশ হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে রোগীর সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যেসব হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে, তার বাইরেও অন্যান্য হাসপাতাল ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারে ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। মূলত যার হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে থাকে না।’

শিশু বিশেষজ্ঞ হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত চেম্বারে শিশু ডেঙ্গু রোগী পাচ্ছি। এসব ডেঙ্গু রোগীর তালিকা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। তবে ক্লিনিকগুলো ডেঙ্গু রোগীর তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠিয়ে থাকে।’

শুধু অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া নন, তার মতো আরও অনেক শিশু বিশেষজ্ঞ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞের চেম্বারে ডেঙ্গু রোগীরা যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য। যার হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যাচ্ছে না। ফলে চিকিৎসকদের বক্তব্য হচ্ছে- প্রকৃতপক্ষে ডেঙ্গু রোগী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবের থেকে বেশি হবে।

রাজধানী শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ডা. আলী আবরার বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে যাদের ডেঙ্গুজ্বর শনাক্ত হয় এবং যারা ভর্তি থাকেন, তাদের তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মজুমদার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক ডা. হাসান ইমাম বলেন, ‘বিএসএমএমইউয়ের আউটডোরে প্রতিদিন ৫০ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসার জন্য আসেন। ডেঙ্গু রোগী যাদের প্লাটিলেট ৫০ হাজারের নিচে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া হয়। অন্যদের চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।’

জানা গেছে, বিএসএমএমইউয়ের ডি-ব্লকের ১৬ এবং ১৭ তলায় মেডিসিন ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। এখানে ১০ জন ভর্তি করা হয়েছে। এসব রোগীর মধ্যে সাতজন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। অবশিষ্ট তিন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।

বিএসএমএমইউ’র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা কোনো শয্যা রাখা হয়নি। সাধারণ শয্যায় ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তি রাখা হয়। শুধু শয্যার অভাবে অনেক ডেঙ্গু রোগীকে ভর্তি করা সম্ভব হয় না। ফলে রোগীদের অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়। রোগীরা বাধ্য হয়ে অন্য কোনো হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন।’

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সব ডেঙ্গু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। বেশিরভাগ রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। ডেঙ্গু নিয়ে মানুষকে আরও সচেতন হবে হবে। জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং পরীক্ষা করে ডেঙ্গু আছে কিনা দেখতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের তথ্যানুযায়ী, রাজধানীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১৭১ জন।’

কন্ট্রোলরুমের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক হাজার ২২ জন। চলতি মাসের ১-১৬ জুলাই মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুই হাজার ৭৬৭ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। চলতি মাসে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা যথাক্রমে ১২৪, ১২৮, ১২৪, ১৪৮, ১১৩, ১৮৬, ১৫০, ১৭৫, ১৭৪, ২২৭, ১৯১, ১৬৫, ১৮৮, ১৫৯, ২১৪ ও ১৭১ জন।

এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকাল ৫টা পর্যন্ত চার হাজার ৮৫০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার তথ্য পাওয়া যায় কন্ট্রোলরুমে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৩৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৮, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মে মাসে ১৯৩, জুনে ১৭৫৯ জন এবং জুলাই মাসে ২৭৬৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হন।

এ বছর ২৫ এপ্রিল বিআরবি হসপিটাল লিমিটেডে একজন, ২৯ এপ্রিল আজগর আলী হাসপাতালে ও ৩ জুলাই স্কয়ার হাসপাতালে একজন চিকিৎসকসহ মোট তিনজন মারা গেছেন। কিন্তু গত রবিবার ভোরে স্কয়ার হাসপাতালের ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে লাবণ্য আলীনা কাজী নামে এক শিশু মারা গেছে, তার নাম এই তালিকায় নেই।

Bootstrap Image Preview