Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বাড়ছে পানি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ জুলাই ২০১৯, ১০:০৬ AM
আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৯, ১০:০৬ AM

bdmorning Image Preview


ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় দেশের উত্তরাঞ্চল, হাওরাঞ্চল ও বৃহত্তর চট্টগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বান্দরবানে সড়ক ডুবে চতুর্থ দিনের মতো যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ধসে পড়ছে পাহাড়। সুনামগঞ্জের ছয় উপজেলা প্লাবিত হয়ে জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জে সুরমা ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। প্লাবিত হয়েছে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ১৫ গ্রাম। কুড়িগ্রামে নদ-নদীতে পানি বাড়তে থাকায় শতাধিক নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে উপদ্রুত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

টানা বর্ষণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, পটুয়াখালীর গলাচিপা, ভোলার চরফ্যাশনসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জনপদের মানুষ। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন উপদ্রুত এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। সারা দেশে আরো দু-তিন দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এলাকার সরেজমিন চিত্র সবিস্তারে জানিয়েছেন স্থানীয় অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা।

চট্টগ্রাম : টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালী উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়ায়। এসব এলাকা দিয়ে প্রবাহিত সব কটি নদী ও খালের পানি বিপত্সীমার ওপরে। সাতকানিয়ার বাজালিয়া এলাকায় চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় সারা দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ দুই দিন ধরে বন্ধ রয়েছে।

বান্দরবান : টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গত বুধবার রাত থেকে বান্দরবান পৌরসভার কয়েকটি এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। বান্দরবানের প্রধান বাস টার্মিনাল, আর্মিপাড়া, মেম্বারপাড়া, শেরেবাংলানগর, বালাঘাটা আমবাগানসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকা গতকাল দুপুরের পর তিন থেকে চার ফুট পানির নিচে চলে গেছে। উপদ্রুত এলাকার মানুষ বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ও নিরাপদ স্থানে সরে এসেছে। ইসলামপুর, হাফেজঘোনা, কালাঘাটা, বাসস্টেশন সংলগ্ন কসাইপাড়া এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। কয়েকটি এলাকায় পাহাড়ের ঢালে থাকা অর্ধশতাধিক কাঁচা বাড়িঘর ভেঙে গেছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি।

ক্রমাগত পানি বাড়তে থাকায় পাহাড়ের জনজীবন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। থানচি উপজেলা সদরে দুটি আশ্রয়কেন্দ্র এবং লামা উপজেলায় মোট ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বান্দরবান-কেরানিরহাট সংযোগ সড়ক এবং অভ্যন্তরীণ রুটগুলো চার দিন ধরে বন্ধ থাকায় খাদ্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে কোনো ধরনের সবজি মিলছে না। মজুদসংকটে ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা হালি।

নীলফামারী : টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে গতকাল তিস্তার পানি বিপত্সীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার নদীতীরবর্তী ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, গতকাল সকাল ৬টায় ডিমলার ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপত্সীমা অতিক্রম করে। বিকেল ৩টায় ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।

লালমনিরহাট : উত্তরের জেলা লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় বন্যার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে। নদীর পানি বাড়তে থাকায় জেলার তিন উপজেলার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

কুড়িগ্রাম : টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে নদ-নদীতে আবার পানি বাড়ছে। দু-এক দিনের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র বিপত্সীমা অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছে পাউবো। এরই মধ্যে চরাঞ্চলের শতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

গাইবান্ধা : জেলার নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলায় তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীতীরবর্তী বিভিন্ন চরের নিচু এলাকাগুলোতে পানি ঢুকে পড়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

শেরপুর : পাহাড়ি ঢলে ঝিনাইগাতী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ঝিনাইগাতী সদর, ধানশাইল, কাংশা, হাতীবান্দা ও মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ওই সব এলাকার ১০-১২ হাজার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বীজতলা। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। বাড়িঘরের চারদিকে ঢলের পানি ওঠায় গবাদি পশু নিয়ে মানুষ বেশি বিপাকে পড়েছে।

সিলেট : গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রায় সব কটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। গোয়াইনঘাটের পিয়াইন, সারী ও গোয়াইন অববাহিকায় নদ-নদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে বইছে। উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আকস্মিক বন্যায় কোয়ারিগুলোতে পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধ থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে।

সুনামগঞ্জ : গতকাল বিকেলে সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপত্সীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ছয়টি সীমান্ত নদীর পানিও বিপত্সীমার ওপরে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঢল ও বর্ষণে প্লাবিত হওয়ায় জেলার ১৮৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৫০টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

হবিগঞ্জ : প্রবল বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হবিগঞ্জের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। নবীগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপত্সীমার তিন সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খোয়াই নদীর পানি এখনো বিপত্সীমার নিচে নেমে রয়েছে। জেলার সুতাং, সোনাই ও করাঙ্গী নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে।

নেত্রকোনা : কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টা উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত সোমবার থেকে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাতে জেলার প্রধান নদী কংস, সোমেশ্বরী, ধনু, উব্দাখালিতে পানি বিপত্সীমার ওপরে রয়েছে। কলমাকান্দার আটটি ইউনিয়ন বড়খাপন, রংছাতি, লেঙ্গুরা, খারনৈ, নাজিরপুর, পোগলা, কৈলাটি ও সদর; দুর্গাপুর উপজেলার গাওকান্দিয়া, কুল্লাগড়া, বাকলজোড়া, কাকৈরগড়া ও বিরিশিরির আংশিক এলাকা এবং বারহাট্টার রায়পুর ও বাউসী ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।

চরফ্যাশন (ভোলা) : টানা বর্ষণে উপজেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে দ্রুত পানি বাড়ছে। তলিয়ে গেছে উপকূলীয় এলাকাগুলো।

গলাচিপা (পটুয়াখালী) : টানা বর্ষণে নাকাল গলাচিপার পৌরবাসী। পৌর এলাকার ভেতরে থাকা ছয়টি ওয়ার্ডেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

Bootstrap Image Preview