ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে উড়োজাহাজে নির্ধারিত ভিআইপি আসন পাননি বলে বেসরকারি বিমান সংস্থা রিজেন্ট এয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। গত ২ জুলাই এই লিখিত অভিযোগটি তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার কাছে দেন। এতে তিনি ওই সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। বিষয়টি সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশনকে ‘হেয়’ করার শামিল হিসেবে দেখে ইসি সচিবালয়ও পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। তবে এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে রিজেন্ট এয়ার কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ঘটনাটি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
জানা যায়, ২৭ জুন তিনি সস্ত্রীক ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে রিজেন্ট এয়ারের আরএক্স ০৭৮৬ নম্বর ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন। বিজনেস ক্লাসে তাঁদের আসন নম্বর ছিল ১-এ ও ২-ডি। দুজনেরই বোর্ডিং পাসে ভিআইপি সিল মারা ছিল। কিন্তু উড়োজাহাজে ওঠার পর দেখেন বিজনেস ক্লাসের কোনো আসন খালি নেই। তাদের নির্ধারিত আসনে অন্য একজন ভিআইপি সস্ত্রীক বসে আছেন। এরপর উড়োজাহাজের কর্মীরা তাঁদের নিয়ে ইকোনমি ক্লাসের আসনে বসান। এই অনিয়মের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কর্তব্যরত এয়ার হোস্টেস তাঁদের কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
মাহবুব তালুকদার তার লিখিত অভিযোগে বলেন, এ বিষয়ে পরে আমি চিফ পার্সারের কাছে জানতে চাই। তার জবাব ছিল, ‘গ্রাউন্ড স্টাফরা ভুল করে আমাদের ইকোনমিতে বসিয়েছে।’ তখন আমি বলি, তবে আমাদের উপযুক্ত স্থানে বসানো হোক। কিন্তু চিফ পার্সার এরও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
নির্বাচন কমিশনার এ সময় এয়ার হোস্টেসকে ডেকে লিখিত অভিযোগ করার ইচ্ছা পোষণ করেন। এতে এয়ার হোস্টেস একটি মূল্যায়ন ফরম এনে দিয়ে বলেন, স্যার সাদা কাগজ তো নেই। আপনি এই ফরমে অভিযোগ লিখে দিতে পারেন। মাহবুব তালুকদার ফরমটি এয়ার হোস্টেসকে ফেরত দিয়ে বলেন, তাঁর অভিযোগ এই ফরমে লেখার উপযুক্ত নয়।
গত ২ জুলাই সিইসিকে ইউও (আন-অফিসিয়াল) নোট দেন মাহবুব তালুকদার। সহকর্মী অন্য তিন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে এর অনুলিপি দেওয়া হয়। সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা করেছেন।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা মনে করি, এ ধরনের আচরণে নির্বাচন কমিশনকে হেয় করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সাধারণ যাত্রীদের ক্ষেত্রেও তা ঘটতে পারতো। কেন এ ঘটনা হয়েছে, তা আমরা নোটিস করতে চাই; দেখতে চাই।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার।
তিনি বলেন, সাধারণত আইনগতভাবে বিষয়টি দেখবে ইসি সচিবালয়। সেক্ষেত্রে এ বিষয়ে লিগ্যাল নোটিস দিতে পারে। কীভাবে তা হ্যান্ডেল করবে তা সচিবালয় দেখবে। আমরা মনে করি, এটা অন্যায় হয়েছে।
রিজেন্ট এয়ারে এ ঘটনার বিষয়ে রোববার ইসির উপ সচিব মো. শাহ আলম নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা ইসির আইন শাখাকে পাঠিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, রিজেন্ট এয়ারের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে ইসির প্যানেল আইনজীবীদের থেকে একজন আইনজীবী নিয়োগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
রিজেন্ট এয়ারের চিফ অপারেটিং অফিসার আশিষ রায় চৌধুরী সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, নির্বাচন কমিশনার মহোদয় আমাদেরকে একটি মেইল পাঠিয়েছিলেন। আমরা ইতোমধ্যে (ওইদিনই) ঘটনাটি জেনেছি। তদন্তও শুরু করেছি।
কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টিকে অত্যন্ত সিরিয়াসলি নিয়েছি। রিজেন্ট এয়ার কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অত্যন্ত দুঃখিত। আমরা এ ঘটনার তদন্ত করছি। দায়ীদের পানিশমেন্ট দেওয়া হবে। আমাদের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার হানিফ জাকারিয়া নির্বাচন কমিশনে যাবেন; উনার কাছে ক্ষমা চাইতে।