Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কোচিংয়ে সরাসরি, রাতে ফোন করে যৌন হয়রানি করতেন শাফিন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ জুলাই ২০১৯, ০৬:৫০ PM
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৯, ০৭:২৪ PM

bdmorning Image Preview


ছাত্রী-শিক্ষক এমনকি অফিস সহকারী কেউই রক্ষা পেতোনা শাফিনের যৌন হয়রানি থেকে। প্রায় ৮ বছর ধরে নিজ ব্যবসার আড়ালে তিনি করে গেছেন এই কুকীর্তি। পুরো নাম শাফিন আহম্মেদ। উঠতি মডেল, সমাজসেবী এবং ইউটিউবার হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি মিরপুর-১১ নম্বরে শাফিনস ইংলিশ লার্নিং ইনস্টিটিউটের মালিক ও শিক্ষক তিনি। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই তিনি তার এই কুকর্ম চালিয়েছেন।  মূলত ‘সমাজসেবার’ ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে অনেকের কাছেই জনপ্রিয় তিনি।

সম্প্রতি শেফস টেবিল নামে একটি রেস্টুরেন্টে ‘সুপের সঙ্গে ব্যাটারি’ পাওয়ার ভিডিও ভাইরাল করে আলোচিত-সমালোচিত হন তিনি। তবে সম্প্রতি যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ‘আট বছর ধরে নিজের ইনস্টিটিউটের ছাত্রী, শিক্ষিকা ও অফিস সহকারীদের যৌন হয়রানি, শারীরিক লাঞ্ছনার মতো কুকীর্তি করেছেন শাফিন, -এমনটিই বলছেন ভুক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়েও হুমকি পেয়েছেন এক তরুণী। শুক্রবার ঢাকার পল্লবী থানায় একটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেছেন তিনি।

জিডিতে তিনি (তরুণী-১) উল্লেখ করেন, আমিসহ কয়েকজন ২০১২ সাল থেকে মো. শাফিন আহম্মেদের শাফিনস ইংলিশ লার্নিং একাডেমিতে পড়তাম। সেখানে সাফিন আমাকেসহ অনেক ছাত্রীকে খারাপ প্রস্তাব দিত। আমি শাফিনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি। গত ২৩ জুন তার হয়রানির প্রতিবাদ করে ফেসবুকে একটি লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং করি। সে কারণে শাফিন ও তার অফিস সহকারী ফেসবুকে বিভিন্ন ফেক আইডি দিয়ে আমাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও মিথ্যা মামলার হুমকি দিচ্ছে। তারা আমার বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে এ আশংকায় আমি জিডি করি।

এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জিডিটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কারও যদি যৌন হয়রানির অভিযোগ থাকে তাহলে তারা থানায় এসে মামলা করতে পারেন।’

জিডিটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন পল্লবী থানার এসআই আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘জিডির তদন্ত চলছে। আমরা বাদীর সঙ্গে কথা বলবো এবং অভিযোগ তদন্ত করে দেখবো।’

ওই তরুণী ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরও কয়েকজন তরুণী শাফিনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন।

শনিবার রাতে শাফিনকে নিয়ে একটি রোস্টিং ভিডিও আপলোড করেন ইউটিউবার তাহসিন (তাহশিনেশন)। ভিডিওতে তার সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ড ছাড়াও উঠে আসে যৌন হয়রানির বিষয়টি।

সেখানে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাফিনের এক শিক্ষার্থী (তরুণী-২) বলেন, “শাফিন মেয়েদের হয়রানি করে। সে কোচিং সেন্টারের মেয়েদের শরীরে ইচ্ছাকৃতভাবে হাত দেয়। আমার এক বান্ধবীকে সে রাতে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেছে, 'আচ্ছা তুমি কি করছ? ঘুমিয়েছ? আচ্ছা আমি যদি তোমার পাশে থাকতাম কি করতা তুমি?' রমজান মাসে এক মেয়েকে তার গাড়িতে ধর্ষণের চেষ্টাও করেছে শাফিন।”

ভিডিওতে সাক্ষাৎকারপ্রদানকারী শাফিনের কোচিং সেন্টারে কর্মরত আরেকজন (তরুণী-৩) বলেন, “একদিন কোচিং সেন্টারের এক কোণে সে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আমার সংবেদনশীল জায়গায় স্পর্শ করে। আমাকে বাজে বাজে কথা বলে। আমি প্রতিবাদ করলে সে বলে, 'মজা নাও’।”

কোচিংয়ের একাধিক মেয়ের সঙ্গে সে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করতো বলে মন্তব্য করেন তিনি (তরুণী-৩)।

আরেক শিক্ষার্থী ও কোচিংয়ে কর্মরত তরুণী (তরুণী-৪) বলেন, ২০১৬ সালের দিকে আমি ও আমার কয়েকজন বান্ধবী তার সেন্টারে স্পোকেন কোর্সে ভর্তি হই। ভর্তি হওয়ার প্রথম দিকে সে মধ্যরাতে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ফোন দিত। আমি বিষয়টা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে সে ফোনে অশ্লীল কথাবার্তা বলতে লাগলো। সে বলতো, 'তুমি কি রাতে একা ঘুমাও, লাইট কি অফ? একা ঘুমাতে ভয় লাগে না?'

পরবর্তীতে তার কথাবার্তা খারাপের দিকে যায়। এরপর আমি তাকে বলি, 'আপনি এসব কী বলছেন? এসবের মানে কী?' শাফিন স্পষ্টভাবে উত্তর দেয়, 'ফোনসেক্স'- যোগ করেন তিনি (তরুণী-৪)।

হয়রানির শিকার (তরুণী-৫) বলেন, “শাফিন আমাকে, আমার বান্ধবীদের এবং আমার এক এসএসসিপড়ুয়া বোনকে রাতে ম্যাসেঞ্জারে কল করে একই কথা বলেছে। সে বলে, 'আমাকে কাছে পেলে কী করবা? আমাকে কাছে পেলে কী হট হয়ে যাবা? তুমি কী তোমার আম্মুর সঙ্গে ঘুমাও নাকি? একা ঘুমালে আমি চলে আসবো নাকি?' আমাদের একই ব্যাচের ৬-৭টা মেয়ের সঙ্গে একই কাজ করেছে। আমি বুঝি না উনি এতো সাহস, এতো কনফিডেন্স কোথা থেকে পায়? আমি চাই না। আর কোনো আন্ডার এজ মেয়ে তার দ্বারা হয়রানির শিকার হোক,” যোগ করেন তিনি (তরুণী-৫)।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাফিনের ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শাফিনস ইংলিশ লার্নিং ইনস্টিটিউটের ০১৬১২-৫৭০৮৭০ নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলে কেউ রিসিভ করেনি।

তবে সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে শাফিন দাবি করেন, তিনি কাউকে ‘সেক্সুয়ালি হ্যারেজ (যৌন হয়রানি)’ করেনি। জাগো নিউজ

Bootstrap Image Preview