Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

শোলাকিয়া হামলার ৩ বছর, ২৪ আসামির ১৯ জনই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০১৯, ০৯:১৫ PM
আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৯, ০৯:১৫ PM

bdmorning Image Preview
প্রতীকী ছবি


দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় দেশ বর্তমানে জঙ্গিমুক্ত। তবে একটা সময়ে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটানোর জোড় চেষ্টা চালিয়েছিলো একটি মহল। ঠিক তখনই দেশে ঘটে যায় মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক কয়েকটি জঙ্গি হামলার ঘটনা। তেমনই ২০১৬ সালে একটি ঘৃণ্য জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহত ঈদগাহ ময়দান শোলাকিয়াতে।

রবিবার (৭ জুলাই) শোলাকিয়া হামলার ঘটনার তিন বছর পুরণ হবে। ২০১৬ সালের ওই দিনে দেশের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাতের আগে মাঠে প্রবেশপথের সবুজবাগ সংযোগ সড়কে মুফতি মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদের সামনের তল্লাশি চৌকিতে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে।

এ সময় জঙ্গিদের ছোঁড়া গ্রেনেড, গুলি ও চাপাতির আঘাতে দু'জন পুলিশ কনস্টেবল, একজন গৃহবধূ ও এক জঙ্গি নিহত হন। এ ছাড়া জঙ্গি, পুলিশ ও মুসল্লিসহ অন্তত ১৬ ব্যক্তি গুরুতর আহত হন।

সেদিনের স্বজন হারানোর দুঃসহ স্মৃতি আর দেশ কাঁপানো বীভৎস ঘটনা আজও তাড়িয়ে বেড়ায় এ এলাকার মানুষকে। এ ধরণের নৃশংস ও বর্বরোচিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন কিশোরগঞ্জবাসী।

সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তারা জানান, ইতিমধ্যেই এ মামলার চার্জ গঠন করা হয়েছে এবং সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য আছে।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারের দাবি, এ ঘটনাটি সফলভাবে তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ মামলার সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছি।

২০১৬ সালের ৭ জুলাই ওই ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল আনছারুল হক ও জহিরুল ইসলাম এবং সবুজবাগ এলাকার গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিক ও আবির হোসেন নামে এক জঙ্গি ঘটনাস্থলে নিহত হয়। এ ছাড়া ১২ পুলিশ সদস্য এবং চার মুসল্লি গুরুতর আহত হন।

এ সময় পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানে গুরুতর আহত অবস্থায় শফিউল ইসলাম ডন নামে এক সশস্ত্র জঙ্গি এবং তানিম নামে স্থানীয় এক সন্দেহভাজন যুবক আটক হয়। আর এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলায় সর্বশেষ মোট ২৪ জঙ্গিকে আসামি করা হয়।

এদের প্রায় সবাই হলি আর্টিজান রোস্তোরাঁয় হামলারও আসামি। এসব আসামির মধ্যে ১৯ জনই বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এনকাউন্টারে নিহত হয়।

এ কারণে বেঁচে থাকা পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়া সম্ভব হয়। এ আসামিরা হলেন, কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম তারাপাশা গ্রামের জাহিদুল হক তানিম, গাইবান্ধার রাঘবপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর চলম ওরফে রাজীব গান্ধী, চাপাইনবাবগঞ্জের হাজারদীঘা গ্রামের মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, গাইবান্ধার গান্ধারপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও কুষ্টিয়ার সাদীপুর কাবলীপাড়া গ্রামের আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ।

সরকার এ ঘটনায় নিহত দুই পুলিশ সদস্যের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা এবং নিহত গৃহবধূর সন্তানকে ব্যাংকে চাকরি দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মায়া রাণী ভৌমিক বলেন, দেশের এ সর্ববৃহৎ ঈদগাহ ময়দানের প্রতিটি জামাতের আগে আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষসহ সব বয়সের লোকজন যে যা পারে তা নিয়ে মুসল্লিদের পানি-নাস্তা সরবরাহ করাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকেন। সেদিনের জঙ্গি হামলায় মহিলা পরিষদ সদস্য ঝর্ণা রাণী ভৌমিক এবং দু'জন পুলিশ সদস্য নিহত হন। সেদিনের কথা মনে হলে এখন গা শিউরে ওঠে। আমরা জঙ্গিমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ দেখতে চাই।

ওই হামলায় নিহত ঝর্ণা রাণী ভৌমিকের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুপুত্র শুভ ভৌমিক ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে জানায়, জঙ্গি হামলার সময় তার মা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার দুঃস্বপ্ন আজও তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। সে প্রায়ই এ স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে চিৎকার দিয়ে জেগে ওঠে। তার দাবি, আর কোনো জঙ্গি হামলায় যেন কোনো শিশু তার মতো মাতৃহীন না হয়।

কিশোরগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক জানান, ইতিমধ্যেই এ চাঞ্চল্যকর মামলাটির চার্জ গঠন সম্পন্ন হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ ও আদালত সাক্ষীর জন্য প্রস্তুত। সাক্ষীর জন্য ২২ জুলাই তারিখ ধার্য্য আছে। তবে এ মামলার আসামিদের প্রায় সবাই ঢাকার হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার মামলারও আসামি এবং এদের মধ্যে ১৯ জন ইতিমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে 'এনকাউন্টারে' নিহত হয়েছে। তাই অবশিষ্ট পাঁচজনের বিরুদ্ধে পুলিশ চার্জশিট দিতে পেড়েছে।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) বলেন, পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সফল তদন্ত শেষে মামলাটির চার্জশিট দিয়েছে। দেশ এ কাপাঁনো জঙ্গি হামলা আমাদের জন্যও বিশেষ বার্তা ছিল। আজকে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কবস্থা গ্রহণ করে এদের নির্মূল করতে পারছি। এ মামলার সব আসামিরই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করি।

এ ছাড়াও তিনি জানান,ওই ঘটনায় নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। আহতদেরও চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সহযোগিতা করা হচ্ছে। এমনকি নিহত ওই গৃহবধূর এক সন্তানকেও চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Bootstrap Image Preview