দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় আগাম জামিন নিতে যাওয়া পুলিশের বিতর্কিত ডিআইজি মিজানকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ সোমবার দুপুর ২টায় দুদকের ওই মামলায় বিচারপতি ওবায়েদুল হাসান ও বিচারপতি কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে তার আগাম জামিন আবেদনের শুনানি হয়। সেই বেঞ্চে ডিআইজি মিজানকে জামিন না দিয়ে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন আদালত।
হাইকোর্ট জানায়, ডিআইজি মিজানুর রহমান পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। এরপর বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে খবর আসে তাকে শাহবাগ থানায় আনা হচ্ছে। এর মিনিট কয়েক পরই তাকে আনা হয়।
আগে থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা এসে বসে ছিলেন। ৫টা ৫৫মিনিটে তাকে পুলিশি প্রহরায় আনা হয়। এমনিতে থানায় কাউকে বন্দি করা হলে তাকে সাধারণ হাজতিদের (পুরুষ) কক্ষে রাখা হয়। কিন্তু মিজানের ক্ষেত্রে তেমনটি চোখে পড়েনি। তাকে ওসির রুমে গল্প করে সময় কাটাতে দেখা গেছে।
শাহবাগ থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রাতে তাকে (মিজান) সাধারণ হাজতিদের কক্ষে রাখা হচ্ছে না। রাত বাড়লে তাকে অন্য একটি রুমে রাখা হবে। অপরাধী হলেও তিনি পুলিশের একজন ঊর্ধ্বর্তন কর্মকর্তা। তাই সবাই একটু সম্মান করেই রাখা হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের উপ কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘আমরা আদালত থেকে তাকে থানা হেফাজতে নিয়েছি। দিনের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় আজ তাকে নিন্ম আদালতে হাজির করা যায়নি। তিনি রাতে থানা হাজতেই থাকবেন। মঙ্গলবার সকালে তাকে আদালতে নেওয়া হবে।’
এর আগে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় আগাম জামিন নিতে সোমবার (১ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে ডিআইজি মিজান এজলাস কক্ষে ঢোকেন। তার আগে তিনি হাইকোর্টে যান।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এস কুদ্দুস জামানের বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করে তাকে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
আদালতের এ নির্দেশের পর ডিআইজি মিজান হাইকোর্টেই ছিলেন। সেখানে শাহবাগ থানা পুলিশের ওসিসহ পুলিশের অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে হাইকোর্টে ডিআইজি মিজানের আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মেহেদী জামিন চেয়ে বলেন, ‘জঙ্গি দমনে ডিআইজি মিজানের অনেক ভূমিকা রয়েছে। এই বিবেচনায় আসামি জামিন পেতে পারে।’
এরপর হাইকোর্ট বলেন, ‘ডিআইজি মিজান দুদক সম্পর্কে প্রকাশ্যে যে কথাবার্তা বলেছেন তা পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। ঘুষ দেওয়ার বিষয়ে তিনি ডেসপারেট বক্তব্য দিয়েছেন। ...তার জামিন হবে না। আমরা তাকে পুলিশে দেব।’ এই বলে ডিআইজি মিজানের জামিন আবেদন নাকচ করেন হাইকোর্ট।
ডিআইজি মিজানুর ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রীকে গ্রেফতার করানোর অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। এছাড়া এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়।
নারী নির্যাতনের অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। দুদক কর্মকর্তাকে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি সামনে এলে তড়িঘড়ি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিজানকে সাময়িক বরখাস্তের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠায়।