রোববার জাতীয় সংসদে পাস হয় চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের বাজেট। যেটি আজ সোমবার থেকেই কার্যকর শুরু হয়েছে। গত কয়েক বছর বাস্তবায়ন করতে না পারা ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আইন এবারই বাস্তবায়ন হয়েছে। এ ভ্যাট আইনে বেশকিছু নিত্যপণ্যে ভ্যাট ছাড় দেয়া হয়েছে।
তারপরও এ আইন বাস্তবায়নে অনেক পণ্যে নতুন করে ভ্যাট আরোপ হবে কিংবা আরোপকৃত ভ্যাটের পরিমাণ বাড়বে। বাজেটে বেশকিছু ক্ষেত্রে নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা জনগণকেই পরিশোধ করতে হবে।
এসবের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি। যেটিও আজকে থেকেই কার্যকর হয়েছে। একটি গ্যাসের চুলার জন্য ৭৫০ থেকে বাড়িয়ে ৯২৫ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ থেকে বাড়িয়ে ৯৭৫ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্যও বেড়েছে।
এর ফলে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা ও সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তে সব শ্রেণির মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে সব নিত্যপণ্যের দাম, বিদ্যুৎ, পরিবহন, বাসা ভাড়া, কৃষিপণ্য এবং সেবার খরচ বাড়বে। সাধারণ মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে নাভিশ্বাস উঠবে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের। অর্থাৎ দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন-যাপনে খারচের বাড়তি চাপ দিয়েই শুরু হলো নতুন অর্থবছর।
এদিকে আজ থেকে বাস্তবায়ন হওয়া বাজেটে হোটেলে রাতযাপনে ভাড়ার ওপর উৎসে কর আরোপ করেছে সরকার। এতে হোটেল সেবার ব্যয় আরও কিছুটা বাড়তে পারে। ব্র্যান্ডের দোকান থেকে কেনাকাটায় খরচ বাড়বে। এ ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়িয়েছে সরকার।
নতুন বাজেটে মুঠোফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সিম কার্ডের ওপর কর দ্বিগুণ করে ২০০ টাকা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বাড়ল মুঠোফোন কেনা ও কথা বলার খরচ। এ ছাড়া স্মার্টফোন আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দাম ব্যাপক বাড়বে।
এবারের বাজেটে ব্যক্তিগত সব গাড়ি নিবন্ধন, রুট পারমিট, ফিটনেস, মালিকানা সনদ নেয়া ও নবায়নের মাশুলের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে ব্যয় বাড়বে। মোটরসাইকেলের বিদেশি টায়ারে কর বাড়ানো হয়েছে। এতে টায়ারের দাম বাড়বে।
তেল-চিনির দামও বাড়বে। চিনি আমদানিতে বাজেটে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ভোজ্যতেলে আরোপ করা হয়েছে ভ্যাট।
পাস হওয়া বাজেট এবং একই দিন থেকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে যা ছিল, চূড়ান্তভাবেও মোটামুটি তাই রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। ফলে মধ্যবিত্তের ওপর করের চাপ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েই গেল।
তিনি বলেন, করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। অপরিবর্তিত রয়েছে কর্পোরেট কর। এতে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল। মানুষের প্রত্যাশা ছিল এটি কমতে পারে, তা কমেনি; বরং বহাল রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভ্যাটের কারণে বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়বে। কয়েকটি পণ্যের আমদানি শুল্ক ও সম্পূরক শুল্কের প্রভাবে আমদানি ব্যয় বাড়বে। এতে ব্যবসা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বিভিন্ন করের পর গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। ফলে এটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষের জীবনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
তিনি বলেন, জ্বালানি ও ভ্যাটের সঙ্গে সবকিছু জড়িত। বিশেষ করে পণ্যের দাম, পরিবহন ব্যয় এবং বাসাভাড়া। ফলে এর প্রভাব জীবনযাত্রার সবগুলো খাতেই পড়বে।